তিনি বলছেন, “সরকারি চাকুরেদের জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করতে হবে।
জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) মাধ্যমে তাদের সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, এর ব্যত্যয় হলে
ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারে।”
বয়স্ক তিন ব্যক্তিকে কান ধরিয়ে উঠবস করানোর ঘটনায় ‘বেআইনি ও
অকর্মকর্তাসুলভ আচরণের’ দায়ে যশোরের মনিরামপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি)
সাইয়েমা হাসানকে শনিবারই প্রত্যাহার করা হয়।
ওই প্রসঙ্গ তুলে ধরে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
ডটকমকে বলেন, “কুড়িগ্রামের ডিসি সুলতানা পারভীনের ঘটনার পর আমরা জেলা প্রশাসকদের
নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
“আবারও তাদের বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছি; আমরা বলেছি, আপনাদের
(ডিসি) অধীনে যারা কাজ করেন তারা যেন জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করেন, কারণ জনগণের
জন্যই আপনারা। .. কেউ যেন দায়িত্বে অবহেলা এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করেন। এতে ব্যাড ইমেজ
তৈরি হচ্ছে, আমরা এর দায়ভার নেব না।
দুর্নীতি করার জন্যই মানুষকে হয়রানি করা হয় বলে মত দিয়ে
জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের সতর্ক করে ফরহাদ বলেন, “ক্যারিয়ার নষ্ট করবেন না, ভুল
করবেন না।”
যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরেও মাঠ কর্মকর্তাদের এধরনের আচরণে বিস্ময়
প্রকাশ করে তিনি বলেন, “বাহাদুরি দেখানোর জন্য কোনো কাজ করলে, শৃঙ্খলাবিধি ভঙ্গ
করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিভাগীয় মামলা হওয়ার পরে অনেকেরই পদোন্নতি না হওয়ার কথা উল্লেখ করে
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় ব্যাচমেটরা যুগ্ম-সচিব হয়ে গেলেও শুধু
মামলার কারণে সিনিয়র সহকারী সচিব পদেই কাউকে কাউকে পড়ে থাকতে হচ্ছে।
“কেউ বিভাগীয় মামলায় পড়লে বড়জোর উপসচিব পদে পদোন্নতি পেতে পারেন,
এর চেয়ে বেশি দূর আগানো সম্ভব নয়। এসব জানার পরেও কেন এমন করেন?
“সময় পেলে আমি লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ একাডেমিতে ক্লাস নেই, সেখানে
নবীন কর্মকর্তাদের আমার সংসদ সদস্যের অভিজ্ঞতার আলোকে পরামর্শ দেই। বিশেষ করে
ইউএনওদের বেশি বলি, কারণ তারা একেবারে মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন,” বলেন ঢাকা সিটি
কলেজের এক সময়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ফরহাদ।
মাঠ প্রশাসনে কাজ করার সময় একজন কর্মকর্তা কী কী করছেন এখন আর তা
লুকানো কোনো সুযোগ থাকে না বলেও মনে করেন প্রতিমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনমুখী এবং দুর্নীতিমুক্ত জনপ্রশাসন গড়ার
নির্দেশ দিয়েছেন জানিয়ে ফরহাদ বলেন, “কিন্তু কিছু কর্মকর্তার কারণে অনেক সময়
আমাদের বিব্রত অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়।”
তিনজন বয়স্ক ব্যক্তিকে কান ধরিয়ে মনিরামপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার
(ভূমি) সাইয়েমা হাসান ভুল করেছেন বলে মত দেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “মনিরামপুর উপজেলার ইউএনও ওই বয়স্ক তিনজনের কাছে গিয়ে
ক্ষমা চেয়েছেন। তাদের হাতে খাদ্য সামগ্রী এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার তুলে দিয়েছেন।”
আগামী ৫ এপ্রিল অফিস খোলার পর ইতোমধ্যে মনিরামপুর থেকে প্রত্যাহার
করে নেওয়া সাইয়েমার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার কার্যক্রম শুরু করা হবে বলেও জানান
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী।
জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,
“সব জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কেউ যেন অকর্মকর্তাসুলভ আচরণ না করেন।
“কেউ এ ধরনের আচরণ করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা
আমরা ডিসিদের দিয়েছি। বলেছি- মনে রাখতে হবে তারা মাস্টার নয়, সেবক; তারা যেন
জনগণের সেবা করেন।”