ক্যাটাগরি

করোনাভাইরাস: সামাজিক দূরত্ব মানছে না মেহেরপুর

বাড়িতে, চায়ের দোকানে, হাটবাজারে লোকজন দিব্যি আড্ডা দিয়ে সময় কাটাচ্ছে। শহরে গোপনে হলেও গ্রামে প্রকাশ্যে দলবেঁধে খেলাধুলা, চায়ের দোকানে আড্ডা, বন্ধুদের নিয়ে জটলা, গল্প, কিছুই থেমে নেই। আবার
জনপ্রতিনিধিরা দলবেঁধে মাস্ক বিতরণ করছেন।

প্রশাসনিক তৎপরতার পরও মানুষকে বোঝানো যাচ্ছে না বলে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন জেলা প্রশাসকসহ
অনেকে।

সদর উপজেলার হরিরামপুর গ্রামের ৪৫ বছর বয়সী শিলা খাতুন
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দূর-দূরান্ত থেকে সবাই গ্রামের বাড়িতে এখন। হৈহোল্লড, আড্ডায় ব্যস্ত সবাই। টিভিতে যেভাবে চলতে বলছে, ওইভাবে শহরের লোকজন চলতে পারলেও গ্রামের নারী-পুরুষ মাচায় বসে আড্ডা না দিয়ে থাকতে পারে নাকি!”

১৫ মার্চ দুবাই থেকে দেশে এসেছেন বাজিতপুর গ্রামের ৩১ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। তিনি দিব্যি ঘোরাঘুরি সময় কাটাচ্ছেন।

হোম কোয়ারেন্টিনে থাকছেন না কেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,
“এইটা কী?”

বাজিতপুর গ্রামের ৫৬ বছর বয়সী ইকলাম হোসেন বলেন, “টেলিভিশনে দেখছি, শুনছি, কী ভাইরাস যেন ঘুরে বেড়াচ্ছে দেশে। কিন্তু কিভাবে থাকতে ও চলতে হবে সেই কথা কেউ বলে নাই।”

তারানগর গ্রামের সোহরাব হোসেন (৫১) বলেন, গ্রামের লোকজন মানছে আবার মানছে না। খেটে খাওয়া মানুষরা ঘরে বসে থাকলে দিন চলবে কী করে? তাই সবার মত তাকেও হাটবাজারে যেতে হচ্ছে, শ্রম বিক্রি করতে হচ্ছে।

“আল্লাহ এই রোগ দিয়েছেন। আল্লাহই রক্ষা করবেন। ওই সব মেনে কিছু হবে না।”

বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, হাতধোয়া অভিযান, জীবাণুনাশক স্প্রে—সবই তারা করছেন দলবেঁধে। এমনকি বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য ভ্রাম্যমাণ অদালত পরিচালনা হচ্ছে
যেখানে সেখানেও মানুষের জটলা দেখা
গেছে।

জেলা প্রশাসক আতাউল গনি বলেন, “প্রশাসনিক তৎপরতার পরও মেহেরপুরে মানুষকে বোঝানো যাচ্ছে না। এ জেলার মানুষের জীবনযাত্রা
প্রায় স্বাভাবিকই
রয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়মও মানছে না সবাই।”

তিনি জনগণের উদ্দেশে বলেন, “নিজের ভালমন্দ নিজে না বুঝলে পুলিশ, সেনাবহিনী, ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে অন্যকে ভাল ও নিরাপদ রাখা সম্ভব না। কেবল নিজের সর্তকতা ও নিজেকে বিছিন্ন না রাখতে পারলে করোনাভাইরাস থেকে নিজেকে, পরিবারকে এবং অন্যদের রক্ষা করা কঠিন হবে।”

এদিকে মেহেরপুর সদর হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা অনেক কমে গেছে।

জেলার সিভিল সার্জন নাসির উদ্দীন বলেন, চিকিৎসক অবহেলা নেই। আতঙ্কের কারণে হাসপাতালে রোগী কমেছে অনেক। পাঁচ শয্যার আইসোলেশন বিভাগে কোনো রোগী নেই।

হোম কোয়ারেন্টিন সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রবাসীরা যেন হোম কোয়ারেন্টিনের নির্দেশনা মেনে চলেন সেজন্য চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন। অনেককে হোম কোয়ারেন্টিন থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার নতুন ১৯ জনসহ এ
জেলায় এখন ৩২৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ৭৫ জনকে। গত ২২ দিনে মেহেরপুরে ১৫৫৯ জন প্রবাসী বিভিন্ন দেশ থেকে মেহেরপুর ফিরলেও সঠিক নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় অধিকাংশকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।