সম্প্রতি গানটি ঘষামাজা করে সনি মিউজিক ইন্ডিয়ার ব্যানারে কণ্ঠে তুলেছেন সংগীত তারকা বাদশা ও পায়েল দেব; গানের তালে কোমর দুলিয়েছেন বলিউডের অভিনেত্রী জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ।
ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এ গানের স্রষ্টা রতন কাহারের নাম এড়িয়ে ‘লোকসংগীত’ বলে সনি মিউজিক ইন্ডিয়ার দায়েসারা গোছের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা চলছে পশ্চিমবঙ্গজুড়ে; এ শিল্পীর গানের সঙ্গে বাংলাদেশের যারা পরিচিত তারাও প্রশ্ন তুলেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
গ্লিটজের তরফ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তার অনুমতি ছাড়াই তার গানের কথা ব্যবহার করা হয়েছে ‘গেঁন্ধা ফুল’ শিরোনামে এ গানে; তার মোবাইল সুবিধা না থাকায় ও ভারতজুড়ে লকডাউনের মধ্যে গানটি এখনও তিনি দেখতে পারেননি তিনি।
বীরভূমের শিউরি গ্রামে নেওয়া এ শিল্পীকে নিয়ে স্থানীয় সংগীতপ্রেমী তরুণ ‘রতন কাহার-দ্য ফরগোটেন জেম’ শিরোনামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন; ‘ইনফিনিটি ওয়েভ স্টুডিও’র ব্যানারে শুক্রবারে প্রকাশিত এ তথ্যচিত্রে তার বয়ানে গানটির পেছনের গল্পসহ নানা বিষয় তুলে আনা হয়েছে।
তথ্যচিত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকা শিউরির বাসিন্দা সৈকত বলের সঙ্গে গ্লিটজের কথা হয়েছে; তিনি জানান, রতন কাহারের গান করে অনেকে কাড়িকাড়ি অর্থ কামালেও তাকে এখনও দারিদ্রের সঙ্গে যুদ্ধ করে যেতে হচ্ছে।
এ শিল্পীকে খুব কাছ থেকে দেখা এ তরুণ বলেন, “তার গান গেয়ে অনেকে কোটিপতি হলেও তিনি এখন খুব কষ্টে জীবনযাপন করছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে গান শুনিয়ে চাল, আলু তুলে সংসার চালাতে হচ্ছে তাকে।তার এই অবস্থা দেখে পরিবারের সদস্যের গানের প্রতি বিতৃষ্ণা তৈরি হয়েছে। তবে তিনি এতো সংগ্রামের মধ্যেও গান করে যাচ্ছেন।”
লোকসংগীতের শিল্পীদের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে; তিনি সেটি পান কি না-তা নিশ্চিত বলতে পারেননি সৈকত।
দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জর এ শিল্পীর চার ছেলে-মেয়ের কেউই মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে পারেনি; এক মেয়ে ভালো গান করলেও অর্থাভাবে তাকে হারমোনিয়াম কিনে দিতে পারেনি।
তার ছেলের ভাষ্যে, “বাবা শুধু গান-বাজনাই করে গেছেন কিন্তু কোনো অর্থ-সম্পত্তি করতে পারেনি। বাবার গান করে অনেকে বড়লোক হয়ে গেছে কিন্তু বাবা সেরকম কোনো সুযোগ পাননি।”
‘ইনফিনিটি ওয়েভ স্টুডিও’ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ১৯৭২ সালে লেখা তার এই গান গেয়ে বহু মানুষের নিজের ও তাদের আগামী প্রজন্মের সারা জীবনের ভাতের ব্যবস্থা হয়ে গেছে ঠিকই কিন্তু রতন কাহার এবং তার পরিবারের দুরাবস্থা আমাদের লজ্জায় ফেলছে বার বার।
“মাটির মানুষ রতন কাহার বহু ছোট-বড় জায়গায় সম্মান এবং সংবর্ধনা পেয়েছেন বার বার। লাভ কী তাতে? সংবর্ধার বদলে সামান্য ক’টা অর্থ জুটলেই বরং পরিবারের মানুষ ক’টা অন্তত একটু খেয়ে-পরে ভালো ভাবে বাঁচতে পারতো।”
রতন কাহারের অনুমতি ছাড়া ও তার নাম উল্লেখ না করে গানটি কেন করা হয়েছে-সেই প্রশ্নটি সনি মিউজিক ইন্ডিয়া ও সংগীত তারকা বাদশার কাছে পাঠিয়েছেন বলে গ্লিটজকে জানান সৈকত; তবে তিনি এখনও উত্তর পাননি।
গানটি এর আগে পশ্চিমবঙ্গের এসভিএফের প্রযোজনায় ২০১৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রাজা রানী রাজি’ শিরোনামে একটি চলচ্চিত্রেও ব্যবহার করা হয়েছে; তবে রতন কাহারের নাম উল্লেখ করা হয়নি।
১৯৭২ সালে ‘বড়লোকের বিটি লো’ গানটি লেখেন রতন কাহার; ১৯৭৬ সালে শিউরির আরেক সংগীতশিল্পী স্বপ্না চক্রবর্তী এ গানে কণ্ঠ দেন। এক গানেই পরিচিত পান শিল্পী স্বপ্না। এখনও তবে অন্তরালেই রয়ে গেছেন এ গানের স্রষ্টা।
কৈশোরে যাত্রাপালার সঙ্গে যুক্ত থাকা এ শিল্পী পরবর্তীতে ঝুমুর গান ও ভাদু গানে মনোযোগ দেন তিনি। পঞ্চাশ বছরেরও দীর্ঘ ক্যারিয়ারে প্রায় দু’হাজারের মতো গান লিখেছেন।