ক্যাটাগরি

নীলফামারীর কাঁচবাজার ক্রেতাশূণ্য, কৃষকের মাথায় হাত

শনিবার সকালে কথা হয় জেলা সদরের ইটাখোলা ইউনিয়নের উত্তর কানিয়ালখাতা গ্রামের কৃষক জিল্লুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানালেন, নিজের জমিতে চাষ করা পাঁচ বস্তা বেগুণ নিয়ে বেঁচতে এসেছিলেন পাইকারের কাছে। কিন্তু পর্যাপ্ত পাইকার না থাকায় দুপুর পর্যন্ত প্রতি কেজি বেগুন তিনি বিক্রি করেছেন দুই থেকে তিন টাকা দরে।

তিনি বলেন, “অনেক আশা নিয়ে এবার তিনি দেড় বিঘা জমিতে বেগুন আবাদ করেছেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে পরিস্থিতির বিপাকে পড়ে ফসলের দাম না পেয়ে মাথায় হাত পড়েছে তার।

“গত বছর দেড় বিঘা জমির বেগুন বিক্রি করে আয় করেছিলেন দেড় লাখ টাকা। এবারের পরিস্থিতিতে উৎপাদন খরচ উঠানো সম্ভব হবে না।”

ওই গ্রামের কৃষক মো. ছকিমদিন (৫৫) বলেন, “শাক-সবজি ও কাঁচাপণ্য ফলন আসার সময়েই বিক্রি করতে হয়। কিন্তু এবার এ সময়ে করোনাভাইরাসের প্রভাবে আমাদের কপাল পুড়েছে। এখন যে দামে বিক্রি করতে হচ্ছে তাতে পরিবহণ খরচও উঠছে না, সেখানে ফসলের দাম পাবো উঠাবো কিভাবে।”

একই অবস্থা কথা জানালেন ওই গ্রামের সামসুল হকসহ ( ৫৬) আরও কয়েকজন কৃষক। 

এদিকে কাঁচাবাজার গুলোতে গিয়ে দেখা যায় দামে সস্তা হলেও দোকানগুলো ছিল ক্রেতাশূন্য। কাঁচাবাজারে পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, ক্ষিরা পাঁচ টাকা, টমেটো ১৫ থেকে ২০ টাকা, বিভিন্ন জাতের আলু ১৫ থেকে ২২ টাকা, মরিচ ২৫ থেকে ৩০ টাকা, করলা ২৫ থেকে ৩০ টাকা এবং বেগুণ দুই থেকে পাঁচ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছ।

সদরের পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের বাজিতপাড়া গ্রামের জামিয়ার রহমান (৫৫) বলেন, তার ওই আয়ের উপর নির্ভরশীল পরিবারের নয় সদস্য। করোনা পরিস্থিতিতে ক্রেতা না থাকায় থেমে গেছে তার জীবিকার পথ। অন্যন্য দিন ওই বাজারে বেলা ১২টার মধ্যে তার দোকানের শাক-সবজি বিক্রি শেষ হলেও শনিবার ক্রেতার পথ চেয়ে বসে ছিলেন বেলা ২টা পর্যন্ত।

তিনি বলেন,“প্রতিদিন ব্যবসা করে আয় করি তিন থেকে সাড়ে তিনশ টাকা। তাতেই চলে আমার পরিবারের খাওয়া খরচ। গত তিন দিন ধরে ক্রেতা না থাকায় আমার আয় হচ্ছে এক থেকে দেড়শ টাকা। ওই টাকায় আমার সংসার চলেনা”।

নীলফামারী কাঁচাবাজারের আড়তদার আব্দুল হাকিম বলেন, “পাইকারী বাজারে প্রতিদিন শাক-সবজির আমদানী প্রচুর। কিন্তু ক্রেতা না থাকায় বিক্রি হচ্ছে না। ফলে অনেকে শাক-সবজি বাজারে এনে ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন। এমন মন্দাভাবে বেশি বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।”

দ্রত পঁচনশীল সবজির দম বেশি কমেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এগুলোর মধ্যে রয়েছে বেগুণ, শষা, ক্ষিরা, টমেটো, লাউ, সিম, মরিচসহ বিভিন্ন জাতের শাক। তবে আলু, পেঁয়াজ, রসুন, আদার দাম তেমন দাম কমেনি।”

নীলফামারী জেলা শহরের বড়বাজারের কাঁচা শাক-সবজিবর আড়ৎদার মোহাম্মদ মাহমুদ আলী বকুল বলেন, “বাজারে মৌসুমী কাচা সবজীর আমদানি পরিমাণমত আছে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে বাজার প্রায় ক্রেতা শূন্য। এতে উৎপাদনকারী কৃষক ও ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’

নীলফামারীর কাঁচাবাজারে পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, ক্ষিরা পাঁচ টাকা, টমেটো ১৫ থেকে ২০ টাকা, বিভিন্ন জাতের আলু ১৫ থেকে ২২ টাকা, মরিচ ২৫ থেকে ৩০ টাকা, করলা ২৫ থেকে ৩০ টাকা এবং বেগুণ দুই থেকে পাঁচ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।