নভেল করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের বিস্তার ঠেকাতে মঙ্গলবার নেওয়া এ পদক্ষেপকে সমর্থন করে বিবৃতি দিয়েছে দেশটির সরকার, কিন্তু এ পদক্ষেপের ফলে দেশটির লাখ লাখ লোক কর্মহীন হয়ে পড়েছে, তাদের হাতে চলার মতো পর্যাপ্ত অর্থও নেই।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শনিবার রাত পর্যন্ত ভারতে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ৯৩৩ জন এবং মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২০ জনের।
কিন্তু আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন করোনাভাইরাস পরীক্ষার হার যে দেশগুলোতে ভারত তার অন্যতম বলে জানিয়েছে বিবিসি। তবে দেশটি পরীক্ষা সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর একটি ভারতে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়লে বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা আছে।
সরকারের নেওয়া ‘পুরো লকডাউন’ পদক্ষেপে বাড়ি থেকে লোকজনের বের হওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জরুরি নয় এমন সব ধরনের ব্যবসা বন্ধ রাখার পাশাপাশি সব ধরনের জমায়েতও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সরকারের এসব পদক্ষেপের পর দিল্লির মতো বড় শহরগুলো থেকে লাখ লাখ অভিবাসী শ্রমিক তাদের গ্রামের বাড়ির পথে রওনা দেয়। সব ধরনের পরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের অনেকে দীর্ঘ পথ হেঁটে বাড়িতে ফেরার সিদ্ধান্ত নেয়।
মহারাষ্ট্রের নরেন্দ্র শেলকে নামের ২৬ বছর বয়সী একজন দিনমজুর টানা দুই দিন শুধু পানি খেয়ে ১৩৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন। শনিবার আরেক ঘটনায় হেঁটে ২৭০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বাড়িতে ফিরতে গিয়ে আরেক দিনমজুরের মৃত্যু হয়েছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন ভারতের এক পুলিশ কর্মকর্তা।
গণপরিবহন বন্ধ থাকায় হাজার হাজার অভিবাসী শ্রমিক হেঁটেই শত মাইল দূরে বাড়ির পথে রওনা হয়েছে। ছবি: এনডিটিভি
আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, দেশের সব সড়ক-মহাসড়ক যখন শুনশান তখন দিল্লির আনন্দ বিহার বাস টার্মিনালে অন্য প্রদেশ থেকে আাসা হাজার হাজার দিনমজুর আটকা পড়েছে। তিন কিলোমিটার লম্বা লাইন করে তারা বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন, কিন্তু শনিবার রাত পর্যন্ত বেশিরভাগেরই বাড়িতে ফেরার কোনো ব্যবস্থা হয়নি।
লকডাউনের কারণে দিল্লির সবকিছু বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে বেশিরভাগ অস্থায়ী শ্রমিকের কাজ ছুটে গেছে। কাজ না থাকায় খাবার জোগার করার সুযোগও বন্ধ হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে হাজার হাজার মানুষ নিজেদের গ্রামের বাড়িতে ফেরার চেষ্টা নিয়েছে।
এমনই একজন পরিবহন সংস্থায় হেল্পারের কাজ করা ২১ বছর বয়সী অজয়।
তিনি জানান, কাজ বন্ধ, জমানো কোনো টাকা নেই, তাই এই অবস্থায় দিল্লির মতো শহরে তাদের মতো মানুষের থাকা দায়। ঘরভাড়া দেওয়ার টাকা নেই, খাবার কেনার টাকা নেই, তাই গ্রামে ফেরা ছাড়া তাদের সামনে কোনো পথ খোলা নেই।
নির্মাণ শ্রমিক কামতা প্রাসাদ বলেন, “লকডাউন শুরু হওয়ার পর কাজ গেল।জমানো ১০০ রুপি দিয়ে দিল্লিতে এতোদিন থাকা সম্ভব না। তাই বাড়িতে চলে যাচ্ছি।”
লকডাউন চলাকালে তাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষকে বিনামূলে চাল-ডাল দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার, কিন্তু চার দিন পার হওয়ার পরও তাদের খোঁজ নিতে কেউ এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ তাদের অনেকের।