পত্রিকা পড়ে সবার মতো রোহানও জানতে পারলো, উহানে প্রায় ৫০ হাজার পোষা প্রাণী একা ছিল। খাবারের অভাবে একসময় তাদের মৃত্যু ঝুঁকিও দেখা দিল। অনেকে বাসার প্রাণীগুলোকে খাবার দেওয়ার অনুরোধ করলেন উদ্ধারকর্মীদের কাছে।
উহানের এক প্রাণী উদ্ধারকর্মী ও তার দল এক হাজার প্রাণী উদ্ধার করেছেন। তাদের মধ্যে ছিল দুটি পোষা বিড়াল। মালিক চলে যাওয়ায় পর্যাপ্ত খাবার ও পানি ছাড়া ১০ দিন ওই বাড়িতে আটকে ছিল ওরা। ওদের খাওয়ানোর জন্য মালিকপক্ষ থেকেই উদ্ধারকর্মীদের ফোন করা হয়েছিল।
অমানবিক হলেও সত্য, পোষা কুকুর-বিড়াল থেকেও করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে এমন গুজব ছড়িয়ে যাওয়ায় অনেকেই সংক্রমণের আশঙ্কায় নিজের পোষা প্রাণীদের পর্যন্ত তখন মেরে ফেলেছিলেন। কিন্তু পরে জানা গেছে, করোনাভাইরাসটি মূলত এক মানুষ থেকে অন্য মানুষের মধ্যে ছড়ায়। পোষা প্রাণীদের মাধ্যমে ছড়ায় তার প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস বাংলাদেশেও প্রবেশ করেছে। বিদেশ ফেরতদের বাসায় লাল পতাকা টানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশেও এখন সবাইকে ঘরে থাকার কথা বলা হচ্ছে। ঢাকা শহরকে এখন অনেকে ‘ভাল শহর’ বলছেন। রাস্তায় গাড়ি না থাকায় বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ কোন কিছুই নেই। একেবারেই ভিন্ন এক অচেনা শহর। দুপুর ও সন্ধ্যার পর চারদিক নীরব হয়ে যাচ্ছে। কোথাও কেউ থাকছে না। দেখে মনে হতে পারে সবাই যেন ঘুমিয়ে পড়েছে।
সকালে পাখির কিচিরমিচির শব্দে রোহানের ঘুম ভাঙলো। চোখ কচলাতে কচলাতে বারান্দা থেকে গাছে বসে থাকা পাখিগুলো দেখতে লাগলো। একটি পাখি বারান্দার গ্রিলে এসে বসলো। প্রতিদিনই সে পাখিদের বারান্দা দিয়ে খাবার দেয়। পাখিগুলোও যেন খিদে পেলে রোহানের অপেক্ষায় অনেক বেশি কিচিরমিচির করতে থাকে।
রোহান দৌড়ে পাখিটির জন্য খাবার আনতে গেল। কিন্তু পাখিদের জন্য কেনা খাবার শেষ হয়ে গেছে। বাজারের যে দোকান থেকে রোহানের বাবা পাখির জন্য খাবার কেনেন সেটি দুদিন ধরে বন্ধ রয়েছে।
রোহান বাবার সঙ্গে পাখির জন্য খাবার কিনতে বাজারে গেল। সেখানে গিয়ে তারা জানতে পারলো করোনাভাইরাস সক্রমণের আতঙ্কের কারণে শুধু বিকেলবেলায় অল্প সময়ের জন্য দোকানটি খোলা হয়। রোহানের মনটা খারাপ হয়ে গেল। সে ভাবলো এখন সকাল। বিকেল হতে অনেক দেরি। পাখিগুলো এতোক্ষণ না খেয়ে থাকবে!
বাসায় ফিরে রোহান বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখলো ফাঁকা রাস্তায় একজন মুরগী বিক্রেতা ভ্যানে করে মুরগী বিক্রি করছেন। তার পেছন পেছন ছুটছে কিছু কুকুর। বিক্রেতা এ সময় মুরগীর কিছু উচ্ছিষ্ট কুকুরের উদ্দেশ্যে ছুড়ে দিলেন। কুকুরগুলো দ্রুত তা খেয়ে নিলো। রোহান বুঝে নিলো কুকুরগুলো খুবই ক্ষুধার্ত ছিল।
বিকেলে রোহানের বাবা পাখির জন্য খাবার কিনে আনলেন। রোহান খুবই খুশি হলো। রোহানের বাবার বন্ধুর হোটেলটি কয়েকদিন ধরে বন্ধ। রাতের বেঁচে যাওয়া খাবারগুলো ভোরে কুকুর ও কাকদের খেতে দিতেন তিনি। প্রাণীগুলো এখনো ভোরে ঠিক সময়ই আসছে খাবার খেতে। কিন্তু হোটেল বন্ধ থাকায় তারা খাবার পাচ্ছে না।
রোহানের বাবার পরিচিত ছোট ভাই ইমরান। সারাদিন ঘরে সময় কাটানোর পর রাতে প্রয়োজনীয় কাজ সারতে কিছু সময়ের জন্য বাইরে বের হয়েছেন। তার সঙ্গে ছিল এক বন্ধু। বাসার সামনে কুকুর দেখে তাদের মায়া হলো। দুই বন্ধু মিলে অনেক ঘোরাঘুরির পর সাতটি ড্রাই কেক কিনে এনে কুকুরগুলোকে খাওয়ালেন। পরে ফেইসবুকে তারা লিখলেন, ‘রাস্তার কুকুরগুলো সবসময় মানুষের আশায় বসে থাকে। কেউ না কেউ তাদের খেতে দেবে। এখন কেউ রাস্তায় বের হয় না। তাই কুকুরগুলোও খাবার পায় না। আপনি যদি কোনো দরকারে বাইরে বের হন তাহলে সামনে কোনো কুকুর পেলে সাধ্যমতো খেতে দিন। কারণ ওদেরও খিদে লাগে, ওরাও কষ্ট পায়।’
এ লেখকের আরও লেখা
মুক্তিযোদ্ধারা কখনো হারিয়ে যায় না
বঙ্গবন্ধুর বাংলা জন্ম তারিখ কি আমরা জানি!
জিপিএ-৫ না পেয়েও যেভাবে কৃতিত্ব রাখা যায়
চাকায় ছানা আহত, গাড়ি আটকে দিচ্ছে কুকুরের দল
মানুষের মতো মানুষ কিভাবে হতে হয়
একটি হাতের তর্জনী থামিয়ে দিলো সব গর্জনই
কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি,সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |