ব্যবসা-বাণিজ্যসহ
নানা ক্ষেত্রে মানুষ কর্মহীন দিন কাটাচ্ছে দিনের পর দিন। টানা কর্মহীন দিনগুলোতে
সরকারের পাশাপাশি সমাজের নানা শ্রেণির বিত্তবানেরা অসহায় মানুষের সহায়তায় এগিয়ে
আসছে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় কাজ করছে সবাই নিজ নিজ অবস্থান
থেকে।
সোমবার বিডিনিউজ
টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ:
বগুড়া
ক্রেতা না
থাকায় মুরগি ও ডিমের দাম কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে বগুড়ার আট হাজার খামার এবং একশ
হ্যাচারি মালিক। খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে।
জেলার কয়েকটি
পোল্ট্রি খামারে গিয়ে দেখা গেছে খামারিদের করুন অবস্থা। কেউ খামার বন্ধ করেছে,
আবার কেউ লোকসানের মুখে বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবছেন। এই শিল্পের কর্মচারীরাও চাকরি
হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন।
বগুড়া জেলা
পোল্ট্রি হ্যাচারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিক জানান, বগুড়ায় ৮
হাজার খামার এবং একশ হ্যাচারি রয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে গত কয়েক দিনে যানবাহন
বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং বাজারে মুরগি এবং ডিম বিক্রি কম হওয়ায় খামারগুলো ক্রেতাশূন্য
হয়ে পড়েছে।
“২০ থেকে
২৫ টাকার মুরগির বাচ্চাবিক্রি হচ্ছে ২ থেকে ৪ টাকায়। এমন অবস্থায় হ্যাচারি এবং
খামার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক।”
সরকারি
সহায়তা ছাড়াএ ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি।
গাজীপুর
গাজীপুরের
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনাভাইরাসের আইসোলেশন ইউনিটে
ভর্তির চারদিন পর সোমবার এক যুবকের নমুনা অবশেষে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে।
শহীদ
তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক খলিলুর রহমান জানান, সর্দি, হাঁচি-কাশি,
জ্বর ও গলা ব্যথ্যা নিয়ে এক ব্যক্তি বৃহস্পতিবার হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি
হন।
“তার নমুনা
সংগ্রহের জন্য ঢাকার আইইডিসিআরে দুই দফা চিঠি দেওয়া হয়েছে।কিন্তু তারপরও সেখান
থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে কেউ আসেনি। এ কারণে আমরা টেনশনে ছিলাম।”
তিনি বলেন,
“ইতোমধ্যে আইইডিসিআর-এর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল
কলেজ হাসপাতালের ৮জন টেকনিশিয়ান করোনাভাইরাস রোগ ও রোগীর স্যাম্পল সংগ্রহের
প্রশিক্ষণ নেন। পরে আইইডিসিআরের পরামর্শ মত সোমবার দপুরে আমাদের ওই প্রশিক্ষিত
টেকনিশিয়ানের মাধ্যমে সতর্কতার সঙ্গে ওই যুবকের (রক্তের) নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায়
পাঠানো হয়েছে।”
জামালপুর
ঢাকা থেকে জামালপুরে ফেরা গৃহবধূর কোভিড-১৯ সন্দেহে ২০ বাড়ি লক ডাউনে
জামালপুরের
ইসলামপুরের এক নারীর নমুনা পরীক্ষার পর করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব মেলেনি।
সোমবার
সন্ধ্যায় আইইডিসিআরেরেউদ্ধৃতি দিয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জামালপুরের সিভিল সার্জন
গৌতম রায়।
সিভিল
সার্জন বলেন, ইসলামপুর উপজেলার ঢেংগারগড় গ্রামের ২৪ বছর বয়সী ওই গৃহবধূর শরীরে
করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকায় রোববার রাতে নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। আইইডিসিআর
পরীক্ষার পর নিশ্চিত করেছে ওই নারীর শরীরে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব নেই।
জয়পুরহাট
সরকারী
উদ্যোগের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সমাজকর্মীরা যে যার সাধ্যমত
কাজ করে যাচ্ছেনকরেনাভাইরাস মোকাবেলায়।
সোমবার
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার আমিরহাট বাজারের ‘বৃত্ত সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায়
সমিতি লি.’ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এলাকাবাসীর মাঝে মাস্ক, সাবান, হ্যান্ড
স্যানিটাইজার সামগ্রী বিতরণ করেছে।
এছাড়া সদর
উপজেলার ধলাহার ও পাঁচবিবি উপজেলার আয়মা রসুলপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গরীব,
রিকশা ও ভ্যান চালক, দিনমজুর ছিন্নমূল পথচারীদের মাঝে মাস্ক, সাবান ও জীবানু নাশক
বিতরণ করেন ‘সেবিকা মানবকল্যাণ সংস্থার সদস্যরা।
জয়পুরহাট-১
আসনের সংসদ সদস্য সামছুল আলম দুদু জেলা আধুনিক হাসপাতালে দুই লাখ টাকা, সাবানসহ অন্যান্য
জীবাণুনাশক দ্রব্য জয়পুরহাট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রদান করেন।
জয়পুনহাট
পৌর মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তাক সাবান ও হ্যান্ড ওয়াশসহ ১৮টি ভ্রাম্যমাণ
ওয়াশিং রুম স্থাপন ও ২ মেট্রিক টন ব্লিচিং পাউডার দিয়ে শহর পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু
করেছেন।
এছাড়া তিনি
ও তার প্রতিনিধিরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে ২০ হাজার মাস্ক ও সমপরিমাণ সাবান ও হ্যান্ড ওয়াশ
বিতরণ করেন।
খুলনা
খুলনায় হোম
কোয়ারেন্টিনে থাকা সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের
জন্য স্যাম্পল সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
খুলনার
সিভিল সার্জন সুজাত আহমেদ বলেন, জেলায় হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের সন্দেহ
হলে তাদের বাড়িতে ল্যাব টেকনোলজিস্টদের পাঠিয়ে টেস্টের স্যাম্পল গ্রহণ করার জন্য
উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
খুলনার
হাসপাতালের সকল ল্যাব টেকনোলিস্টকে সোমবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একযোগে করোনাভাইরাস
টেস্টের স্যাম্পল সংগ্রহের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি আরও জানান,
খুলনা ডায়াবেটিক হাসপাতালে করোনা আইসোলেশন চালুর জন্য ইতোমধ্যে ৩০টি বেড বসানো
হয়েছে। আরও ৭০টি বেড আনা হচ্ছে। আগামী দু-একদিনের মধ্যে ওই হাসপাতালে করোনা
আইসোলেশন চালু হবে।
খুলনা
নগরীর তিনটি আবাসিক হোটেলকে কোয়ারেন্টাইনের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে বলেও তিনি
জানান।
লক্ষ্মীপুর
লক্ষ্মীপুর
প্রেসক্লাবের সদস্যদের জন্য মাস্ক ও পিপিই দিয়েছেন সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক
বিমান পরিবহন ও পর্যাটন মন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল।
সোমবার লক্ষ্মীপুরপ্রেসক্লাব
প্রাঙ্গণে তার পক্ষে বায়েজিদ ভুঁইয়া ৫০টি মাস্ক ও ১১টি পিপিই হস্তান্তর করেন।
এর আগে এ
কে এম শাহজাহান কামালের পক্ষ থেকে পুলিশ, ডাক্তার-নার্স ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের
জন্য পিপিই প্রদান করা হয়।
মুন্সীগঞ্জ
করোনাভাইরাসে
আক্রান্ত কিনা দেখার জন্য মুন্সীগঞ্জে সোয়াব টেস্ট করবে স্বাস্থ্য বিভাগ। শরীরে
উপসর্গসহ আনুষঙ্গিক বিষয়সমূহ মিলে গেলে নাক ও গলা থেকে শ্লেষ্মা সংগ্রহ করে পাঠানো
হবে ঢাকার পাবলিক হেলথ ইনস্টিটিউটসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষাগারে।
মুন্সীগঞ্জ
সিভিল সার্জন আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য সন্দেহভাজনের
সোয়াব নেওয়া হবে। সোয়াব মানে নাক ও গলা থেকে শ্লেষ্মা নিয়ে পরীক্ষা; যা পরীক্ষা
নিরিক্ষার মাধ্যমে জানা যাবে করোনাভাইরাস পজিটিভ নাকি নেগেটিভ।
“সন্দেহভাজন
কাউকে মিললে তার থেকে নমুনা সংগ্রহ করে প্রেরণ করা হবে ঢাকায়। টেস্টটিউবে করে
ব্যাগে করে নিরাপদভাবে যাবে পাবলিক হেলথ ইনস্টিটিউটে, সেখানে পরীক্ষার মাধ্যমে
জানা যাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিনা।”
শরীয়তপুর
শরীয়তপুর
সদর উপজেলায় বেদেপল্লি ও তৃতীয় লিংগের সদস্যদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা
হয়েছে।
সোমবার
বিকালে সদর উপজেলার ডোমসার, আংগারিয়া ও শরীয়তপুর পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডে বেদেপল্লি ও
তৃতীয় লিংগের মধ্যে এসব খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের।
গাইবান্ধা
গাইবান্ধায়
নানা শ্রেণির কর্মজীবীর মধ্যে সহায়তার সামগ্রী বিতরণ করেছেন জেলা প্রশাসক।
করোনাভাইরাসের কারণে এসব কর্মজীবী কর্মহীন দিন কাটাচ্ছে।
গাইবান্ধার
জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন বলেন, জেলায় সরকারি সহায়তা হিসেবে ১০০ মেট্রিক টন চাল ও ৭
লাখ বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ১০০ মেট্রিক টন চাল ও ৫ লাখ টাকা উপজেলা পর্যায়ে
বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।
“উপজেলা
পর্যায়ে সুবিধাভোগীদের তালিকা প্রস্তুতের কার্যক্রম করা হচ্ছে। তালিকা প্রস্তুতের
পর প্রত্যেক পরিবারে চাল, ডাল, আলুসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য দিয়ে প্যাকেট
প্রস্তুত করে সরবরাহ করা হবে।”
নীলফামারী
‘আপনারা
ঘরে থাকুন, আপনাদের ঘরে ঘরে আমরা খাদ্য দিয়ে আসব’-এই শ্লোগানে নীলফামারীতে করোনা
পরিস্থিতিতে স্বল্প আয়ের মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছে বিভিন্ন
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ব্যক্তি।
কয়েকদিন
থেকে জেলা শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে গিয়ে রিকশাচালক ও অস্বচ্ছল মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী
বিতরণ করছে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ‘আমাদের ক্ষুদ্র প্রয়াস’ নামের স্বেচ্ছাসেবী
সংগঠন।
এই সংগঠনের
সদস্যরা রিকশাচালকদের হাতে খাদ্য সহায়তার প্যাকেট তুলে দিয়ে বলছেন ‘আপনারা ঘরে
থাকুন, আপনাদের বাড়িতে গিয়ে আমরা খাদ্য পৌঁছে দেব।’