করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় বিশ্ব মানের ভেন্টিলেটর তৈরি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে সম্পৃক্ত হয়ে ওয়ালটন, মাইওয়ান, মিনিস্টারসহ কয়েকটি দেশীয় প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদক কোম্পানি এই ভেন্টিলেটর তৈরি করবে।
এর আগে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও যাতে চিকিৎসক ও রোগীদের জন্য দ্রুততম সময়ে ভেন্টিলেটর তৈরি করতে পারে তার জন্য নিজেদের ভেন্টিলেটরটির ডিজাইন স্পেসিফিকেশন উন্মুক্ত করার ঘোষণা দেয় মেডট্রনিক পিএলসি।
তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক নিজে এই উদ্যোগের সমন্বয় করছেন। সরকারি-বেসরকারি সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনকে যার যার সক্ষমতা অনুযায়ী এই কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করেছেন।
মঙ্গলবার অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে জুনাইদ আহমেদ পলক জানান, এদিন দুপুরেই বিশ্বখ্যাত মেডিকেল প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদক কোম্পানি মেডট্রোনিক ভেন্টিলেটর বানানোর সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের সোর্স কোড, ডিজাইনসহ পেটেন্ট তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের আরএনডি টিমকে দিয়েছে।
এখন টেসলা, ফোর্ড, জেনারেল ইলেক্ট্রনিক্স ভেন্টিলেটর বানাতে যাচ্ছে। সেখানে মেডট্রোনিক বাংলাদেশকে শুধু পেটেন্ট নয় তাদের গবেষক ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সবরকম সহায়তার হাত বাড়িয়েছে’ জানান পলক।
প্রতিমন্ত্রী জানান, ভেন্টিলেটর বানানোর এই উদ্যোগে ওয়ালটন, মাইওয়ান, সেলট্রন, এটুআই ইনোভেশন ল্যাব, এমআইএসটি, মিনিস্টার, স্টার্টআপ বাংলাদেশ, আইডিয়াকে প্রাথমিকভাবে যুক্ত করা হয়েছে।
তবে দেশে কী পরিমাণ ভেন্টিলেটর উৎপাদন করা হবে, কবে নাগাদ বাজারে আসবে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে। মেডট্রোনিক ও বাংলাদেশের গবেষকদের কয়েকটি টিম, উৎপাদক কোম্পানি লাগাতার কাজ করছে। এসব বিষয়ে সবাইকে নিয়ে বৈঠক-আলোচনা হবে, সেখানে মেডট্রোনিকের প্রতিনিধিরাও অংশ নেবেন। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে ধারণা পাওয়া যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলম বলেন, বাংলা টাইগার টিম মেডট্রোনিকের কাছ হতে ভেন্টিলেটরের পেটেন্ট বুঝে নিয়েছে। স্থানীয়ভাবে যেসব চ্যালেঞ্জ আসবে তা এই টিম সলভ করতে পারবে।
এটুআইয়ের পলিসি এডভাইজার আনীর চৌধুরী জানান, সারা পৃথিবীতে এখন ১০ লাখ ভেন্টিলেটরের চাহিদা। সে তুলনায় উৎপাদন সক্ষমতা ১০ ভাগের এক ভাগ। বাংলাদেশ যদি এটি উৎপাদন করতে পারে তাহলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বৈশ্বিক চাহিদা মেটাতেও ভূমিকা রাখতে পারবে। সেক্ষেত্রে দেশের অর্থনীতিতেও এই দু:সময়ে অবদান রাখা যাবে।
এর আগে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও যাতে চিকিৎসক ও রোগীদের জন্য দ্রুততম সময়ে ভেন্টিলেটর তৈরি করতে পারে তার জন্য নিজেদের ভেন্টিলেটরটির ডিজাইন স্পেসিফিকেশন উন্মুক্ত করার ঘোষণা দেয় মেডট্রনিক পিএলসি।
এ ঘোষণাটি সাম্প্রতিক এফডিএ নির্দেশনা এবং বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা সরকারি সংস্থাসমূহের নিয়মের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ উল্লেখ করে মেডট্রনিক এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের জন্যও এর পেটেন্ট উন্মুক্ত করেছে। এর ফলে, স্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তায় বাংলাদেশ সরকারও খুব দ্রুত ভেন্টিলেটর উৎপাদন করতে পারবে।
এছাড়াও, মেডট্রনিকের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের সদস্যরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভেন্টিলেটর উৎপাদনের জন্য এ দেশীয় প্রকৌশলীদের সহায়তা দেবে।
২০১০ সালে বাজারে আসে পিবি ৫৬০। বাজারে অবমুক্ত হওয়ার পর বিশ্বের প্রায় ৩৫টি দেশে বিক্রি হয় এই ভেন্টিলেটরটি। এ ভেন্টিলেটরটির প্রযুক্তিগত নকশা এমনভাবে করা হয়েছে যাতে উৎপাদন প্রতিষ্ঠান, উদ্ভাবক, স্টার্টআপ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহজেই এ ভেন্টিলেটর নকশা ও প্রস্তুত করতে পারবে।
উল্লেখ্য, পিবি ৫৬০ ভেনটিলেটরটি সুবিন্যাস্ত, ওজনে হালকা ও বহনযোগ্য। একারণে, ভেনটিলেটরটির মাধ্যমে বয়স্ক ও শিশুদের সহজেই অক্সিজেন দেয়া যাবে। ভেন্টিলেটরটি খুব সহজেই যে কোন পরিচর্যা কেন্দ্রে (ক্লিনিক্যাল সেটিং) ও বাসায় ব্যবহারের জন্য উপযোগী। এবং এর মাধ্যমে মোবাইল রেসপিরেটরি সাপোর্ট দেয়া যাবে।
বিজ্ঞপ্তিতে এ নিয়ে মেডট্রনিকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মিনিম্যালি ইনভেসিভ থেরাপিস গ্রুপের প্রেসিডেন্ট বব হোয়াইটের বক্তব্য উল্লেখ করা।
তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম হিসেবে ভেন্টিলেটর অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয় এবং এই বৈশ্বিক সঙ্কট মোকাবিলায় সকলের সম্মিলিত প্রয়াস অত্যন্ত জরুরি। ‘ভেনটিলেটরের চাহিদার কথা বিবেচনা করে, গত কয়েক সপ্তাহে আমরা আমাদের পিউরিটান বেনেট™ ৯৮০ ভেনটিলেটরটির উৎপাদন বাড়িয়েছি।’ তিনি বলেন, আমরা জানি, আমাদের আরও অনেক কিছু করার সক্ষমতা আছে এবং আমরা সে লক্ষ্যে নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
বব হোয়াইট আরও বলেন, ‘ইতিমধ্যেই পিবি ৫৬০ ভেনটিলেটরটির নকশা সংক্রান্ত বিষয়গুলো সকলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ‘আমরা আশা করছি, এর ফলে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ভেন্টিলেটরের সঙ্কট দূর করতে বৈশ্বিকভাবে ভেন্টিলেটরের উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে।’
কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়া ছাড়াও তীব্র শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যায় ভেন্টিলেটর কার্যকরী ভূমিকা রাখে। শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাজনিত রোগীদের ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করলে তারা শ্বাস নিতে পারে। রোগীকে ভেন্টিলেটর দেয়া হলে ওই সময় রোগীর ফুসফুস বিশ্রাম নিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসতে থাকে। অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক রাখার মাধ্যমে ওই সময় রোগীর শাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে ভেন্টিলেটর। বাসস
ইত্তেফাক/কেকে