এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের জন্য পাঁচটি ভেন্টিলেটর সম্পন্ন একটি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) স্থাপনের সিদ্ধান্ত হলেও সেই কাজ শেষ হতে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে বলে জানা গেছে।
তাছাড়া এই হাসপাতালে আইসিইউকে কাজ করার মতো চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশায়ন নেই। কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থাও নেই।
অন্যদিকে ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজে (বিআইটিআইডি) করোনাভাইরাস শনাক্তের সুযোগ থাকলেও সেখানে আইসিইউ নেই।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ দুটি হাসপাতালেই অভিজ্ঞ চিকিৎসকসহ আইসিইউ প্রয়োজন। পাশাপাশি হাসপাতাল দুটিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি করে পূর্ণাঙ্গ দল না থাকলে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর অন্যান্য রোগের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে না।
নিউমোনিয়ার মতোই শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা বাড়িয়ে তুলতে পারে কোভিড-১৯। এসময় ফুসফুসের সংক্রমণ বেড়ে গেলে সঙ্কটাপন্ন ব্যক্তিকে কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র বা ভেন্টিলেটর সেবা দেওয়া জরুরি হয়ে পড়ে।
রোগীর শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ তীব্র হলে ফুসফুসে পানি জমে শ্বাস নেওয়া কষ্টকর করে তোলে। কারণ এসময় রোগীর শরীর প্রয়োজনীয় অক্সিজেন টেনে নিতে পারে না। অক্সিজেনের এই অভাব পূরণে ভেন্টিলেটর ব্যবহার করে কৃত্রিমভাবে ফুসফুসে বাতাস সরবরাহ করা হয়।
নগরীর আন্দরকিল্লা এলাকার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ১০০টি শয্যা এবং সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটে বিআইটিআইডির ৫০টি শয্যা নির্ধারণ করা হয়েছে আইসোলেশনের জন্য। এছাড়া নগরীর সিআরবি এলাকার রেলওয়ে হাসপাতালের ৫০টি শয্যা রাখা হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য।
এর মধ্যে দুইদিন আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে পাঁচটি ভেন্টিলেটর সম্পন্ন আইসিইউ ইউনিট স্থাপনের কথা জানানো হয়।
জেনারেল হাসপাতালের সুপারিনটেন্ডেন্ট অসীম কুমার নাথ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের জন্য পাঁচটি ভেন্টিলেটর বরাদ্দ করা হযেছে। এ দিয়ে পাঁচ বা সর্বোচ্চ ১০ শয্যার আইসিইউ চালানো যাবে।”
তবে আইসিইউর জন্য প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, সেবক ও টেকনিশিয়ান নেই জানিয়ে তিনি বলেন, “অন্য হাসপাতাল থেকে প্রেষণে আনতে হবে।”
জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ পরিচালনায় প্রয়োজনীয় কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা ও নেগেটিভ এয়ার প্রেসার মেশিনও নেই। এমনকি নেই ভ্রাম্যমাণ এক্স-রে মেশিনও।
ডা. অসীম বলেন, “কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে বড় আকারের অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে করা যাবে। কিন্তু সেটাতে ঝুঁকি থাকে। যেকোনো সময় অক্সিজেন সরবরাহ শেষ হলে ভেন্টিলেটর তখন চলবে না।”
মঙ্গলবার এই হাসপাতাল পরিদর্শনে যান শিক্ষা উপমন্ত্রী চট্টগ্রাম-৯ আসনের সাংসদ মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব বিষয় তাকে জানায়।
উপমন্ত্রী দ্রুত এসব বিষয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে জানানোর আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান অসীম কুমার।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি জানিয়েছেন, ভেন্টিলেটর স্থাপনে সাধারণত দুই সপ্তাহ সময় লাগে।
এদিকে বিআইটিআইডির এক চিকিৎসক প্রশ্ন তুলেছেন, এখানে করোনাভাইরাস শনাক্তের সুযোগ আছে কিন্তু কোনো আইসিইউ নেই। তাহলে যেসব রোগী গুরুতর শ্বাসকষ্টে ভুগবেন তাদের কিভাবে চিকিৎসা দেওয়া হবে?
এমন পরিস্থিতিতে ভরসা চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০টি এবং অন্য বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ৩০টির মত আইসিইউ বেড আছে।
সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, “চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০টির মধ্যে চারটি আইসিইউ বেড আলাদা করতে বলা হয়েছে। বেসরকারি পার্ক ভিউ হাসপাতালে পাঁচটি ভেন্টিলেটরসহ ১০টি আইসিইউ বেড আছে। সেগুলো প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া অন্য বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে বলেছি।”
এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক চিকিৎসক মাহফুজুর রহমানের ভাষ্য, আইসিইউ এবং ভেন্টিলেশন সুবিধা না থাকলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত জটিল রোগীদের সেওবা দেয়া সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে তারা নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাবেন।
“জেনারেল হাসপাতালে অবিলম্বে ১৫-২০ জন চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশায়ন প্রয়োজন, যারা ভেন্টিলেটর ও আইসিইউ পরিচালনায় দক্ষ। এখনও রোগের প্রকোপ বেশি নয়। এসময়ের মধ্যে আইসিইউ স্থাপনসহ সব প্রস্তুতি নিতে হবে জরুরি ভিত্তিতে।
“পাশাপাশি দুটি হাসপাতালেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি করে পূর্ণাঙ্গ টিম দরকার। তা না হলে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর হৃদরোগ, ডায়বেটিসসহ অন্য রোগ থাকলে টোটাল ট্রিটমেন্ট দেওয়া যাবে না। এতে অন্য রোগেই তাদের মৃত্যু হতে পারে।”
বুধবার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দৈনিক প্রতিবেদন অনুসারে, চট্টগ্রামে এই দুটি হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ মোট ১৭টি হাসপাতালের ৩১৫টি শয্যা কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত আছে।
পাশাপাশি এ কাজে নিয়োজিত থাকবেন ৬৭৩ জন চিকিৎসক এবং ৯০৫ জন নার্স। শনিবার পর্যন্ত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রি (পিপিই) মজুদ আছে ২৮৮৯টি, বিতরণ করা হয়েছে ২২৮৯টি।
সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, জেনারেল হাসপাতাল, বিআইটিআইডি, চমেক হাসপাতালের ফ্লু কর্নার এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে পিপিই বিতরণ করা হয়েছে।