সরেজমিনে শ্রীমঙ্গলে জেরিন চা বাগান এবং ভাড়াউড়া চা বাগানে গিয়ে শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা গেছে।
এসব কর্মক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের ব্যাপারে যথাযথ সতর্কতা মানা হয় বলে বাগান কর্তৃপক্ষের ভাষ্য। বাগানে বাইরের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না এবং ভেতরের কাউকে বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
গত মঙ্গলবার গণভবন থেকে জেলা প্রশাসকসহ মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও চা বাগানের কাজ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত দেন।
ভিডিও কনফারেন্সে সিলেট জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম সিলেটে কয়েকটি চা বাগানে শ্রমিকদের কর্মবিরতি ও দুটি বাগানে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিচ্ছেন না বলে প্রধানমন্ত্রীকে জানান।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, উৎপাদনমুখী, রপ্তানিমুখী খাত চালু রাখতে হবে। আর চা শ্রমিকরা যখন পাতা তোলে তখন তারা বিক্ষিপ্তভাবে দূরে দূরে তোলে। চা শ্রমিকরা এমনিতেই প্রকৃতির সাথে থাকে আর চা বাগানে যেহেতু সংক্রমণও নাই, সুতরাং ভয় পাওয়ারও কিছু নাই। শুধুমাত্র পাতা যখন জমা করবে তখন লাইন ধরে দূরত্ব বজায় রেখে দেবে।
‘এমএম ইস্পাহানি টি লিমিটেড’-এর জেরিন চা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, প্রবেশের দরজা বন্ধ। দরজার পাশে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বাগান থেকে কেউ খাবার বা অন্যকিছু সংগ্রহে বাইরে গেলে ফিরে আবার হাত-পা ধুয়েই বাগানে প্রবেশ করতে হবে। আর বাগানের লোকজন ছাড়া বাইরের কারো ভেতরে ঢোকা নিষেধ।
জেরিন চা বাগানের উপ-মহাব্যবস্থাপক সেলিম রেজা চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকার সবাইকে বাড়িতে থাকতে বলেছেন। আর আমাদের বাড়ি মানে আমাদের বাগান। আমরা আমাদের বাড়িতে লকডাউন হয়ে আছি। ঘরে থাকলে যেভাবে রান্নাবান্না হয়, ঘরের কাজ করতে হয় আমরাও সেরকম করছি।”
বাগানে অনেক শ্রমিক একসঙ্গে কাজ করায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “চা বাগানে শ্রমিকরা পাতা তোলেন অনেক দূরত্ব বজায় রেখে। একজনের সঙ্গে আরেকজনের গায়ে-গা মিশে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। শ্রমিকরা পাতা ওজনের সময়ও সব সময় ৩-৪ ফুট দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে থাকেন এবং মজুরি গ্রহণের সময়ও একই নিয়ম মানেন।
“এছাড়া কারাখানাতেও প্রত্যেক শ্রমিক ২০-২৫ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করেন। শ্রমিকদের খাবারের সময় দূরত্বে বজায় রাখার ব্যবস্থাও চালু করা হয়েছে।”
সেলিম রেজা আরও বলেন, সরকার বার বার হাত ধোয়ার ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই বিষয়টি মাথায় রেখে তারা শ্রমিদের জন্য হাত ধোয়ার ব্যবস্থা চালু করেছেন। খাওয়ার আগে ও টাকা স্পর্শ করার পর সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার জন্য শ্রমিকদের সতর্ক করা হচ্ছে।
“সেই সঙ্গে প্রত্যেক শ্রমিক ও তাদের সন্তানদের মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে এবং বাগানের চারপাশও প্রত্যেক শ্রমিকের বাড়ির আশপাশে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে।”
শ্রীমঙ্গলে ফিনলে টির বিভিন্ন বাগানে গিয়েও একই অবস্থা দেখা যায়। ফিনলে টির ভাড়াউড়া চা বাগানের প্রবেশ ফটক বন্ধ রয়েছে। বাইরের কারো ভেতরে ঢোকার সুযোগ নেই।
ভাড়াউড়া চা বাগানের জেনারেল ম্যানেজার ও বাংলাদেশীয় চা সংসদ সিলেট সার্কেলের ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান গোলাম মো. শিবলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চা পাতা একটি পচনশীল দ্রব্য। এটি উত্তোলনের পর বৈজ্ঞানিক নিয়মে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ও সময়ে প্রক্রিয়াজাত করতে হয়। তা মানা না হলে এর গুণগতমান ঠিক থাকবে না।
“এছাড়া জেলা প্রশাসন থেকেও বাগান বন্ধ রাখার কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি।”
এছাড়া করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে তাদের প্রত্যেকটি বাগানে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
করোনাভাইরাসের এ সময়ে শ্রমিকদের একসঙ্গে কাজ করা নিরাপদ কিনা জানতে চইলে ফিনলে টি’র চিফ অপারেটিং অফিসার তাহ্সিন আহমদ বলেন, চা বাগান বন্ধ করে দিলে চা শিল্প দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিতে পড়বে। এটি অনান্য ঘন অবস্থানের ইন্ডাস্ট্রির মতো না। তা ছাড়া তারা সব সময় নজর রাখছেন। প্রয়োজন হলেই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন বলেন, করোনাভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে নিরাপত্তার স্বার্থে তারা এখন চা বাগানের ভেতরে সংশ্লিষ্ট লোকজন ছাড়া অন্যদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছেন।