বেংজিংয়ের হিসাব সেখানকার বাস্তব পরিস্থিতির চেয়ে ‘ভালো দেখাচ্ছে’, বুধবার ওয়াশিংটনে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।
একই ব্রিফিংয়ে তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেছেন, চীনের দেওয়া আক্রান্ত ও মৃতের হিসাব ঠিক কিনা, তা জানার কোনো উপায় নেই।
বেইজিংয়ের তথ্যে রিপাবলিকান দলের শীর্ষ এক আইনপ্রণেতার সন্দেহ প্রকাশ এবং চীন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমিয়ে দেখাচ্ছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ব্লুমবার্গের এক সংবাদের পর ট্রাম্প ও তার উপদেষ্টার এ মন্তব্য এলো।
ডিসেম্বরের শেষদিকে চীনের উহান থেকেই প্রাণঘাতী এ ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রে এখন কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা চীনের তুলনায় অনেক বেশি।
বুধবার পর্যন্ত বিশ্বের ৯ লাখেরও বেশি মানুষের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে; মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৪৭ হাজার।
আক্রান্তের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রই এখন সবার উপরে। দেশটিতে দুই লাখের বেশি মানুষের দেহে কোভিড-১৯ ধরা পড়েছে, মৃতের সংখ্যাও ৫ হাজার পেরিয়ে গেছে।
করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি এখনও ইতালিতে; দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ১০ হাজার ৫৭৪ জন হলেও প্রাণ হারিয়েছেন ১৩ হাজারেরও বেশি মানুষ।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের করোনাভাইরাস টাস্ক ফোর্সের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ট্রাম্প জানান, তিনি চীনের হিসাব নিয়ে মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন দেখেননি।
“যা আমরা দেখেছি এবং যেসব তথ্য পেয়েছি, তাতে (চীনের) সংখ্যাকে বাস্তবের তুলনায় খানিকটা ভালো মনে হচ্ছে,” বলেন তিনি।
ট্রাম্প বলেন, শুক্রবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ফোনালাপে বেইজিং কী করে করোনাভাইরাস মোকাবেলা করলো তা নিয়ে আলোচনা হলেও ‘তাদের সংখ্যা বিষয়ে কথা হয়নি’।
করোনাভাইরাস নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এর আগে কয়েক দফা চীনের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেও শি’র সঙ্গে ফোনালাপের পর থেকে সে সুর খানিকটা নরম হয়ে এসেছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
ব্রিফিংয়ে ট্রাম্প বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক ‘চমৎকার’ এবং উভয় পক্ষই চলতি বছরের শুরুতে হওয়া কয়েকশ কোটি ডলারের বাণিজ্য চুক্তি অটুট রাখার ব্যাপারে আন্তরিক।
“তাদের দেয়া সংখ্যা সঠিক কি ভুল, এটা বলা কঠিন। আমি চীন থেকে আসা হিসাবরক্ষক নই,” বলেছেন তিনি।
একই ব্রিফিংয়ে ট্রাম্পের নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবার্ট ও’ব্রায়েন বলেছেন, “চীন থেকে আসা সংখ্যা সঠিক কিনা তা নিশ্চিত করার মতো অবস্থায় নেই ওয়াশিংটন। ওই সংখ্যা অনেক কম বলে অনেকগুলো প্রতিবেদন জনসমক্ষে এসেছে। আপনারা চীনের সামাজিক মাধ্যমগুলো থেকে আসা প্রতিবেদনগুলোও দেখতে পারেন। সেসব সংখ্যা সঠিক কিনা তা বলার উপায় নেই আমাদের।”
এর আগে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির রিপাবলিকান সদস্য মাইকেল ম্যাককল বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা লুকানোর অভিযোগ এনেছিলেন। চীনের এই লুকোচুরি এবং মহামারী নিয়ে নেওয়া নানান পদক্ষেপ তদন্ত করে দেখতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার চীন তাদের দেশে নতুন সংক্রমণ কমেছে বলে জানিয়েছে; দেশটি প্রথমবারের মতো উপসর্গবিহীন আক্রান্তের সংখ্যাও প্রকাশ করেছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
উহান শহর থেকে প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার তিন মাস পরও চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৮২ হাজার ৩৯৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা তিন হাজার ৩২২ জন বলে জানাচ্ছে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান। দেশটিতে কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা ৭৬ হাজার ৫৭১।