বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম
সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) পরিচ্ছন্নতা সুপারভাইজারদের সাথে এক সভায় প্রধানমন্ত্রীর
নির্দেশনার কখা উল্লেখ করে মশা নিধনে ‘নতুন উদ্যোমে’ কাজ শুরুর কথা বলেন মেয়র নাছির।
নগরীতে মশার উপদ্রব
থাকার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে মেয়র মশক নিধনে কাজে গাফিলতি হলে ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি
উচ্চারণ করে ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ শুরুর ঘোষণা দেন।
৩১ মার্চ গণভবন থেকে
এক ভিডিও কনফারেন্সে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময়ে মশার প্রাদুর্ভাব কমাতে
সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি অহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
সেদিন দুপুরে ‘মশা
নিধন কার্যক্রম’ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মেয়র নাছির।
এরআগে গত প্রায় দুই
সপ্তাহ ধরে বন্দর নগরীতে মশার উপদ্রব ভয়াবহ আকার ধারণ করে। সরকারি ছুটি শুরু হওয়ার
পর ঘরবন্দি মানুষ মশার কামড়ে অস্থির হয়ে পড়ে।
নগরবাসীর অভিযোগ, এক
মাসের বেশি সময় ধরে নগরীতে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না। এ কারণে মশার উপদ্রব বেড়েছে।
তবে সিসিসি কর্মকর্তারা এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
বৃহস্পতিবার টাইগারপাসের
অস্থায়ী নগর ভবনের সভায় সিটি মেয়র আ জ ম নাছির বলেন, “মশা ও এইডিস মশার প্রজনন স্থান
ধ্বংস করার লক্ষ্য নিয়ে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করতে হবে।”
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর
নির্দেশনার কথা উল্লেখ তিনি বলেন, “মশা নিধন কার্যক্রম শতভাগ নিশ্চিতকরণের ব্যাপারে
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তারই প্রেক্ষিতে করোনাভাইরাসের
সংক্রমণ রোধে প্রতি ওয়ার্ডে জীবাণুনাশক পানি ছিটানোর পাশাপাশি মশা নিধনে লার্ভিসাইড
ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।”
মঙ্গলবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) ‘মশা নিধন কার্যক্রম’ উদ্বোধন করেন মেয়র আ জ ম নাছির।
এজন্য ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয়
প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে জানিয়ে নাছির বলেন, “আজ বৃহস্পতিবার থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে ওষুধ
ছিটানো হচ্ছে। নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে লার্ভিসাইড (মশার ডিম ধ্বংসকারী ওষুধ) ছিটাচ্ছি।
মশার উপদ্রব যতদিন না কমবে ততদিন পর্যন্ত এই ওষুধ ছিটানো হবে।
“এ কাজে নিয়োজিত প্রত্যেককে
স্বচ্ছতা ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এতে কোনো ধরনের গাফলতি সহ্য করা যাবে
না। কোনো ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে কাউকে ছাড় দেওয়া
হবে না।”
সিসিসির হাতে পূর্ণবয়স্ক
মশা ধ্বংসকারী (এডাল্টিসাইড) ও লার্ভিসাইড পর্যাপ্ত আছে দাবি করে মেয়র নাছির বলেন,
“প্রয়োজনে আরও ওষুধ কেনা হবে। মশা এবং চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু রোধে প্রত্যেক ওয়ার্ডের
ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা ও নালা-নর্দমায় যেখানে মশা জন্ম হয় সেখানে ওষুধ ছিটানো হবে।”
১৬৪ জন পরিচ্ছ্ন্নতা
কর্মী প্রতিদিন ৪১টি ওয়ার্ডে মশার ওষুধ ছিটাবে বলেও সভায় জানান মেয়র।
এদিকে নগরীতে চলমান
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজে নগরীর প্রধান কয়েকটি খালের মুখে বাঁধ দেওয়ায় সেখানে
পানি জমে মশার প্রজনন হচ্ছে জানিয়ে মেয়র নাছির বলেন, “এ প্রকল্পের দায়িত্ববশীল ব্যক্তির
সঙ্গে আগেও কথা বলেছি। আবারো বলব। উনাদের যে প্রকল্প চলমান আছে সেখানে পানি স্থির হয়ে
আছে এবং সেখানে মশার প্রজনন হচ্ছে। উনারা আমাদেরকে একটা ধারণা দিয়েছেন পাইপের মাধ্যমে
পানিগুলো অপসারণ করবেন। এর বাইরে আমরাও কার্যকর পদক্ষেপ নেব।”
এইডিস মশার প্রজনন
রোধে বাসা-বাড়ির আশপাশে কোথাও যাতে পানি জমে না থাকে সে বিষয়ে সচেতন থাকতে নগরবাসীর
প্রতি আহ্বান জানান নাছির।
সিসিসির ১১০টি ফগার
মেশিনের সাহায্যে এডাল্টিসাইড ওষুধও (ধোঁয়া আকারে) ছিটানো হবে বলে জানান মেয়র আ জ ম
নাছির।
এর আগে করোনাভাইরাসের
সংক্রমণ শুরুর পর শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে এমন যুক্তি দেখিয়ে ধোঁয়া সৃষ্টিকারী এডাল্টিসাইট
ছেটানো চলতি মাসের মাঝামাঝি থেকে সিসিসি বন্ধ রাখে বলে স্থানীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ
প্রকাশিত হয়।
এদিকে মার্চের শেষ
সপ্তাহেই ‘মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে’ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে তিন কোটি
টাকা ছাড় পায় সিসিসি। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে মশা নিধনের জন্য মন্ত্রণালয়ের কাছে ২০ কোটি
টাকা বরাদ্দ চেয়েছিলেন মেয়র নাছির।
চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০২০)
মশক নিধনে সিসিসির বরাদ্দ ছয় কোটি টাকা। এরমধ্যে তিন কোটি টাকা ওষুধ কেনায়, দুই কোটি
টাকা ওষুধ ছিটানোর মেশিন কেনায় এবং বাকি টাকা অন্যান্য খাতে বরাদ্দ আছে।
বৃহস্পতিবারের সভায়
সিসিসির প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা শফিকুল মান্নান সিদ্দিকী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী
সুদীপ বসাক, উপ প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।