তবে
হাসপাতালে ভিড় কমলেও এখনও অনেক রোগী যাচ্ছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
জেলার
শহর, ঘাটাইল উপজেলা সদর, কালিহাতি উপজেলার এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড ও বিভিন্ন বাজার
এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণত জ্বর ও সর্দি-কাশিতে কয়েক দিন ভোগার পর লোকজন
ওষুধের দোকানে গিয়ে সমস্যার কথা বলছেন আর দোকানিরাও ওষুধ বিক্রি করছেন।
এলেঙ্গা
বাজারের খালিদ ড্রাগ হাউজে বুধবার বিকালে একদল ক্রেতাকে ভিড় করে ওষুধ কিনতে দেখা
গেছে। সেখানে ওষুধ কিনতে যাওয়া এক নারী নিজেকে পারভিন নামে পরিচয় দিয়ে বলেন, তার
বয়স ৪৫ বছর। তিনি কয়েক দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। তিনি চিকিৎসকের কাছে যাননি।
কেন
যাননি জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “ডাক্তাররা রোগী দেখছেন বলে শুনেছি। অনেকে ফিরে এসেছে
শুনলাম। এই ভয়ে যাই নাই। তাই সরাসরি দোকানে আসলাম।”
জ্বর
হয়েছে বলার পর দোকানি তাকে ওষুধ দিয়েছেন বলে তিনি জানান।
এ
বিষয়ে খালিদ ড্রাগ হাউজের মালিক আনোয়ার হোসেন বাদল বলেন, “বুধবার অনেকে এসে
ঠাণ্ডা-জ্বরের কথা বলে ওষুধ নিয়েছেন।”
ব্যবস্থাপত্র
ছাড়া ওষুধ বিক্রি করার নিয়ম আছে কিনা সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি।
কালিহাতি
উপজেলার ভৌমিক ফার্মেসির মালিক অক্ষয় কুমার ভৌমিক জানান, তার দোকানে সম্প্রতি
দৈনিক অনেক মানুষ ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ওষুধ কিনতে আসেন।
তিনি
বলেন, “আগর চেয়ে অনেক বেশি লোক জ্বর-ঠাণ্ডা-কাশি এসব বলে ওষুধ চাচ্ছে। সম্প্রতি
দৈনিক অন্তত ১০০ মানুষ ছোটখাটো সমস্যার কথা বলে ওষুধ চাচ্ছেন। বেশি রোগী আসছে হাসপাতাল
ঘুরে। হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে তারা দোকানে আসছে বলে শুনেছি।”
আর
তিনিও ওষুধ দিচ্ছেন বলে স্বীকার করেছেন।
তার
পল্লি চিকিৎসকের প্রশিক্ষণ রয়েছে এবং তিনি নিয়মিত প্রাকটিসও করেন বলে জানিয়েছেন।
কালিহাতি
উপজেলা ড্রাগিস্ট অ্যান্ড কেমিস্ট সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির এলেঙ্গা
বাসস্ট্যান্ডের লাকি ফার্মেসির মালিক।
তিনি
বলেন, “আগের তুলনায় ঠাণ্ডা-জ্বরের রোগী বেশি দেখা যাচ্ছে। ওষুধের দোকানে বেচাকেনাও
বেড়েছে। আগে তারা এসব রোগের জন্য হাসপাতালে যেতেন। এসব ওষুধ হাসপাতাল থেকে ফ্রি
দেওয়া হয়।”
টাঙ্গাইল
শহরের রেজিস্ট্রিপাড়ার জনতা ফার্মেসিতে বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ভিড় করেছিলেন
অন্তত ১৫ জন। তখন ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ কোনো কথা বলতে চাননি। তারা তাদের নামও বলতে
চাননি।
পরে
জনতা ফার্মেসির মালিক বিপ্লব কুমার সরকার ফোন করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে
বলেন, তারা শুধু ব্যবস্থাপত্র থাকলে ওষুধ বিক্রি করেন।
“আমরা
প্রধানত পাইকারি বিক্রি করি। খুচরা বিক্রেরা আমাদের কাছ থেকে পাইকারি দরে ওষুধ
কিনে নেন। তবে অনেক সময় ব্যবস্থাপত্র থাকলে আমরা খুচরাও বিক্রি করি।”
জেলার
করোটিয়া সাদত কলেজের সম্মান শ্রেণির এক ছাত্রী বলেন, তিনি কয়েক দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন।
কিন্তু চিকিৎসকরা রোগী দেখছেন না শুনে দোকানে গিয়ে ওষুধ কিনে এনেছেন।
ব্যবস্থাপত্র
ছাড়া ওষুধ সেবন বা বিক্রির বিষয়ে টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামান
বলেন, খুব হালকা দু-একটা ওষুধ আছে যা ব্যবস্থাপত্র ছাড়া বিক্রি করা যায়। চিকিৎসকের
পরামর্শ ছাড়া অনেক ওষুধই বিপদ ডেকে আনতে পারে।
আবার
সবাই দোকানে গিয়ে সব ওষুধ কিনতেও পারছেন না।
বাসাইল
উপজেলার কাশিল এলাকা থেকে বুধবার সকালে টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে আসেন নাজনীন আক্তার
নামে এক কলেজ ছাত্রী।
নাজনীন
বলেন, তিনি অনেক দিন ধরে কানের সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু চিকিৎসক নেই। চিকিৎসক পাবেন
কিনা তাও তিনি জানেন না। চিকিৎসক না পেলে তার সমস্যা সমাধানের কোনো উপায় নেই।
কালিহাতী
উপজেলার পাইকড়া এলকার লাল মাহমুদ, সদর উপজেলার সন্তোষ এলাকার মনিরা আক্তারসহ
অনেকেই চিকিৎসক না পেয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন বলে জানান।
এ
বিষয়ে টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মো. শফিকুল ইসলাম সজীব বলেন, করোনাভাইরাস
আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর থকে হাসপাতালে রোগী কমে গেছে। তবে তারা চিকিৎসাসেবা দেওয়া
বন্ধ করেননি। বুধবার তাদের হাসপাতালে আউটডোরে ১৬২ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। আর ভর্তি
ছিলেন ১৪৬ জন রোগী।
ওই
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রমজান আলী বলেন, এই সময় সর্দি-জ্বর-কাশিসহ নানা
রকম সাধারণ রোগ নিয়ে এখানে রোগীদের উপচে পড়া ভিড় থাকত। কিন্তু এখন তা নেই। তবে
চিকিৎসাসেবা চলছে।