ক্যাটাগরি

শ্রমিকদের বেতন দেয় যে যে গার্মেন্ট, প্রণোদনা পাবে তারাই

নীতিমালায়
বলা হয়েছে, যেসব কারখানা শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়মিত পরিশোধ করছেন, তারাই এই তহবিলের
অর্থ পাওয়ার জন্য বিবেচিত হবে।

এই তহবিল
থেকে ২ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হবে রপ্তানিমুখী শিল্পগুলো। তবে সময় মতো কিস্তির অর্থ পরিশোধ
না করলে বকেয়া কিস্তির উপর দণ্ড সুধ আরোপ হবে।

বৈশ্বিক মহামারী
রূপ নেওয়া নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশেও দেখা দেওয়ার পর এর বিস্তার রোধের
পদক্ষেপে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত হয়ে পড়ায় গত ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে
রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন।

বাংলাদেশে
রপ্তানি খাতের অগ্রগণ্য তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য এই অর্থ
বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।  

বুধবার অর্থমন্ত্রী
আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, এই তহবিল থেকে অর্থ ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ২ শতাংশ সুদে ঋণ
হিসেবে পাবেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকরা। আর ব্যাংকগুলোকে সেই অর্থ জোগান দেবে কেন্দ্রীয়
ব্যাংক।

বৃহস্পতিবার
বাংলাদেশ ব্যাংক এই আর্থিক প্রণোদনা তহবিলের নীতিমালা ঘোষণা করে।

এতে বলা হয়,
যে সব শিল্প প্রতিষ্ঠান মোট উৎপাদনের ন্যূনতম ৮০ শতাংশ রপ্তানি করে, তারা রপ্তানিমুখী
শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই তহবিলের অর্থ পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবে।

যে সব কারখানা
সচল আছে, তারাই কেবল ঋণ পাবেন। যারা ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন-ভাতা
ইতোমধ্যে দিয়ে দিয়েছে, তারাই কেবল সচল কারখানা হিসেবে বিবেচিত হবে।

কর্মীদের সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পিপিই উৎপাদন করে যাচ্ছে নিউ জেনারেশন গার্মেন্টস। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

ঋণ বিতরণ ও আদায় পদ্ধতি

কোনো প্রতিষ্ঠান
তিন মাসের বেতন-ভাতা দেওয়ার সমপরিমাণ অর্থ ঋণ হিসেবে নিতে পারবেন এই তহবিল থেকে।

এই ঋণের গ্রেস
পিরিয়ড হবে ছয় মাস। অর্থাৎ, ঋণ নেওয়ার পর প্রথম ৬ মাস তাদের কিস্তি দিতে হবে না। ঋণের
পুরো অর্থ শোধ করতে তারা দুই বছর সময় পাবেন। তবে কিস্তি দিতে ব্যর্থ হলে খেলাপি হবে।

আবেদনকারী
শিল্প প্রতিষ্ঠানকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের গ্রাহক হতে হবে।

এই তহবিল
থেকে কেবল শ্রমিক-কর্মচারীদের সর্বোচ্চ তিন মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য ঋণ নেওয়া
যাবে। ব্যাংকগুলো ঋণের অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীর ব্যাংক হিসাবে
সরাসরি দেবে। এক্ষেত্রে প্রত্যেক শ্রমিক-কর্মচারীর জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যাংকগুলো যাচাই
করে নেবে।

নীতিমালায়
বলা হয়েছে, “কোনো প্রকার নগদ লেনদেন করা যাবে না এবং শ্রমিক-কর্মচারীর ব্যাংক হিসাব
ব্যতীত অন্য কোনোভাবে লেনদেন করা যাবে না।”

ঋণের সর্বশেষ
কিস্তি নেওয়ার পর অর্থাৎ জুন ২০২০ মাসের বেতন/ভাতার বিপরীতে গৃহীত ঋণের পর ৬ মাস গ্রেস
পিরিয়ডসহ মোট ২ বছরে ১৮টি সমান কিস্তিতে ব্যাংককে সার্ভিস চার্জসহ সমুদয় ঋণ পরিশোধ
করতে হবে।

নীতিমালায়  বলা হয়, কোনো ঋণ গ্রহিতার ঋণের কিস্তি যথাসময়ে পরিশোধিত
না হলে প্রচলিত নিয়মে ওই ঋণ শ্রেণীকরণ করতে হবে এবং ঋণ গ্রহিতা খেলাপী হিসেবে বিবেচিত
হবে। এক্ষেত্রে বকেয়া কিস্তির উপর ২ শতাংশ হারে দণ্ড সুদ আরোপ করা যাবে।

ছয় মাসের
গ্রেস পিরিয়ডসহ আর্থিক প্রণোদনা তহবিল হতে দেওয়া ঋণের সময়কাল হবে দই বছর। গ্রেস পিরিয়ড
অতিবাহিত হওয়ার পর সমান ১৮টি মাসিক কিস্তিতে ঋণের অর্থ ব্যাংকে পরিশোধ্ করতে হবে।

সরকারের এই
উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা
হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই তহবিল থেকে ঋণ নিয়ে আমরা আমাদের সঙ্কট কাটিয়ে
উঠতে পারব বলে আশা করছি।”

বিজিএমইএ-এর
তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৪ হাজারের মত গার্মেন্টস কারখানা রয়েছে। এ শিল্পে কাজ
করছেন ৪০ লাখের মত শ্রমিক, যাদের বড় অংশই নারী।

করোনাভাইরাস
মহামারীর কারণে পুরো বিশ্বেই ব্যবসা-বাণিজ্য একপ্রকার স্থবির হয়ে আছে। আর যেসব দেশ
বাংলাদেশের পোশাক কেনে, তারাই এ মহামারীতে সবচেয়ে বেশি নাজুক দশায় পড়ায় প্রতিদিনই ক্রয়
আদেশ বাতিল করছেন ক্রেতারা।