আজ লেফট-উইংয়ে তো কাল রাইট-উইংয়ে।
পরের ম্যাচে তাকে দেখা গেল মাঝমাঠে। শেষ চার ম্যাচে বাপ্পীকে এভাবে ইচ্ছেমতো পজিশন
বদলে পরীক্ষা করেন মোহামেডান কোচ শন লেন। সিদ্ধান্তেও পৌঁছেছেন। দুই পায়ে সমান
ছন্দ থাকায় অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে তরুণ শিষ্যকে সামনের ম্যাচগুলোতে খেলানোর
সিদ্ধান্ত পাকা করে ফেলেছেন তিনি।
“আসলে আমরা ভেবেছিলাম বাপ্পী
একজন স্ট্রাইকার বা উইঙ্গার। কিন্তু যখন তাকে নিয়ে কাজ করা শুরু করলাম, দিন যতই
পার হতে লাগল, দেখা গেল আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে সে বেশি মানানসই।
শারীরিকভাবে শক্তিশালী। ডি-বক্সে চতুরতার সঙ্গে ছোটাছুটি করতে পারে এবং গোল করার
দিকেও দৃষ্টি থাকে ওর।”
স্থগিত হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত
মোহামেডান ম্যাচ খেলেছে ছয়টি। চারটিতে বাপ্পী সুযোগ পেয়েছেন বিভিন্ন পজিশনে বদলি
নামার। অথচ শুরুর দিনগুলোতে কক্সবাজার থেকে উঠে আসা এই তরুণের মূল পরিচয় ছিল
স্ট্রাইকার।
২০১৩ সালে এয়ারটেল রাইজিং
স্টারের ট্রায়ালে সেরা ২০ থেকে ঝরে যাওয়ার পর ঢাকায় এসে যোগ দেন উত্তর বারিধারায়।
দলটির হয়ে অনূর্ধ্ব-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপে দুই গোল করেন। ২০১৫-১৬ তে খিলগাঁও স্পোর্টিং
ক্লাবের হয়ে ১৭ গোল করে প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ায় একটু একটু করে চেনামুখ
হতে থাকেন ক্লাব পাড়ায়।
২০১৭ সালের বাংলাদেশ
চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে কাওরানবাজারের হয়ে ৩ গোল, পরের বছর অগ্রণী ব্যাংকের জার্সিতে ৮
গোল করে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়া তার সামনের পথটুকু আরও সহজ করে দেয়। পা
রাখেন মোহামেডানে। কিন্তু ২০১৮-১৯ মৌসুমের লিগে ঐতিহ্যবাহী দলটির হয়ে ১৫ ম্যাচ
খেললেও সমার্থ্যের ছিটেফোঁটাও দেখাতে পারেননি। গোল করেন মাত্র একটি।
ছবি: ফেইসবুক
বাপ্পী গত বছর জাতীয় দলের
জার্সিতে বয়সভিত্তিক পর্যায়ে খেলেন দুটি প্রতিযোগিতায়। বাহরাইনে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৯
চ্যাম্পিয়নশিপ ও নেপালের সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে। নেপালে গোল করেছিলেন
একটি।
ছোট্ট এই পথচলার মধ্যে নামের
পাশে গোলসংখ্যা একেবারে কম না হলেও নতুন বছরে নির্দিষ্ট পজিশনে থিতু হওয়ার পরীক্ষা
দিতে দিতেই বাপ্পীর পার হয়ে গেছে ছয় রাউন্ড। তবে শেষ পর্যন্ত পজিশন পাকা হওয়ার
মধ্যেই স্বস্তি খুঁজে নিচ্ছেন এই তরুণ।
“শুরুতে আমার পজিশন ছিল
স্ট্রাইকার। কোচ কখনও রাইট উইং, লেফট উইংয়ে খেলাচ্ছেন। মিডফিল্ডেও খেলাচ্ছেন। আমি আসলে
যে কোনো পজিশনে খেলতে পারি। পজিশন নিয়ে যে দোটানা ছিল, সেটা এখন কেটে গেছে।
বর্তমান পজিশনে মানিয়ে নিয়েছি।”
মোহামেডান কোচ অবশ্য ইঙ্গিত
দিলেন বাপ্পীকে নিয়ে তার কাঁটাছেড়া এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। আরেকটু সময় নিয়ে তরুণ
এই শিষ্যের ভেতর থেকে সেরাটা নিংড়ে আনতে চান তিনি।
“টেকনিক্যালি বাপ্পী ভালো; দুই
পায়ে খেলতে পারে। বাতাসেও সে দক্ষ। ট্যাকটিক্যালি সে এখন মাঝমাঠে তার নতুন ভূমিকা
শিখছে; বিশেষ করে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে আমরা তাকে প্রয়োজনের সময় যেভাবে দেখতে চাই
এবং কখন বল ছাড়া সবচেয়ে কার্যকরী হবে-এই বিষয়গুলো সে শিখছে নতুন করে।”
শিখতে কোনো আপত্তি নেই
বাপ্পীর। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে এতটা পথ পাড়ি দিয়ে এসে এখন কোনো পরীক্ষায় ফেল করতে চান
না এই তরুণ। প্রত্যয়ী কণ্ঠে জানিয়েও দিলেন তা।
“ফুটবল ছাড়া আর কিছু নিয়ে আমার
আগ্রহ নাই। ফুটবলের বাইরে আমার কোনো প্রেম নেই। কোচ যা চাইবেন, সেটাই করব।”