ক্যাটাগরি

ব্রহ্মপুত্রের বালু উত্তোলন চলছে ইজারা ছাড়া

গাইবান্ধা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে কামারজানি
বাজার এলাকা থেকে বালুবাহী ট্রাক্টরের সাহায্যে রাত-দিন বালু তুলছে তারা।  

  শুক্রবার সরেজমিন দেখা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদ শুকিয়ে যাওয়ায়
দুই তীরে জেগে উঠেছে ধু-ধু বালুচর। কিছু শ্রমিক বালু খনন করে স্তূপ করে রাখছে।
আবার কেউ ওই স্তূপ থেকে ট্রাক্টরে তুলছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শ্রমিক জানান,
করোনাভাইরাসের কারণে দিনে ঘর থেকে বের হওয়া নিষেধ। তাই দিনে গোপনে কিছু কাজ এগিয়ে
রাখছেন। পরিবহনের কাজ করবেন রাতে।

তারা জানান, বালু তুলতে কাউকে টাকা দিতে হয় না। যত
বালু তোলা যাবে, তত লাভ হবে। নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত এক ট্রাক্টর (স্থানীয় ভাষায় কাঁকড়া)
বালু বিক্রি হয় এক হাজার ৬০০ টাকায়।

স্থানীয়রা জানান, এভাবে গত একমাস ধরে প্রতিদিন রাত
৯টা থেকে ভোররাত পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র থেকে উত্তোলনকৃত বালু ট্রাক্টর দিয়ে নিয়ে
যাচ্ছে প্রভাবশালী একটি মহল। এসব ট্রাক্টরের বিকট শব্দে সড়কের দুইপাশের সাধারণ
মানুষকে র্নিঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে।

সরকারি কোনো স্থান থেকে বালু তুলতে হলে বৈধভাবে
ইজারা নিতে হয়। ইজারা ছাড়া নাদী, খাল কিংবা সরকারি অন্য যেকোনো জায়গা থেকে বালু
তোলা বেআইনি। 

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ এর ১১ ধারায়
বলা হয়েছে: ‘কোনো বালুমহাল ইজারা প্রদান করা না হইয়া থাকিল, উক্ত বালুমহাল হইতে এই
আইনের অধীন ইজারা প্রদান ব্যতীত অন্য কোনো পদ্ধতিতে বালু বা মাটি উত্তোলন, পরিবহণ,
বিপণন ও সরবরাহ করা যাইবে না এবং এই মর্মে কোনো রাজস্বও আদায় করা যাইবে না।’

কামারজানি বাজারের ব্যবসায়ী আলমগীর কবির বলেন,
কামারজানি অতিমাত্রায় নদী ভাঙনকবলিত এলাকা। প্রতিবছর বর্ষার সময় ব্যাপক আকারে নদী ভাঙে।

“অবৈধভাবে এই বালু উত্তোলনের কারণে কামারজানি
বাজারের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হওয়া ব্রহ্মপুত্র নদ বাজারের দিকে আরও গভীর হয়ে যাচ্ছে।
এই বালু উত্তোলন এখনই বন্ধ করা না হলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে নদীর ভাঙন আরও ভয়াবহ
হবে। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে কামারজানি বাজার।”

কামারজানি বাজার এলাকার কলেজছাত্র মাজু মিয়া বলেন, “প্রায়
এক মাস থেকে এইসব বালুবাহী অবৈধ ট্রাক্টরের শব্দে আমাদের পরিবারের কেউ ঘুমাতে
পারছি না। দুয়েক মিনিট পরপর ট্রাক্টরের শব্দে আমারা ভয়ে চমকে উঠি। বিষয়টি
কামারজানি ইউপি চেয়ারম্যানকে জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি।”

কামারজানি বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী টিটু মিয়া বলেন,
“বাজার সংলগ্ন নদের তলদেশ থেকে বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে। পাশাপাশি
শব্দ দূষণ হচ্ছে। এ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বরদের বলেও প্রতিকার
মেলেনি।”

কামারজানি বাজার এলাকার সংস্কৃতিকর্মী এম সাদ্দাম
হোসেন বলেন, “বালুমহাল আইনের প্রয়োগ না থাকায় কামারজানিতে বেপরোয়াভাবে অবৈধ বালু
উত্তোলন ও পরিবহন চলছে। ঘটনাটি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া
হয়নি।”

কমারজানি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুস সালাম বলেন,
“বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।”

গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রসূন
কুমার চক্রবর্তী কামারজানিতে বালু উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, “বালু
উত্তোলন বন্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” 

বালু উত্তোলনকারী রোস্তাম আলী ও মহির উদ্দিন বলেন,
সরকারি জায়গা থেকে বালু উত্তোলন করছেন বলে কারও কিছু বলার নেই। কিছু মহল ঈর্ষাপরায়ণ
হয়ে বানোয়াট অভিযোগ তুলছে। 

বালু তোলার জন্য তারা কোনো ইজারা নেননি বলে স্বীকার
করেছেন।