গবেষণার
এই তথ্য বিড়ালপ্রেমীদের জন্য সুখকর নয়, তবে এখনই এটা নিয়ে বিচলিত না হওয়ার পরামর্শ
দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ওই গবেষণার
বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বেজিতেও নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ
ঘটতে পারে, যদিও তা এই প্রাণীর কোনো ক্ষতি করে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। অপরদিকে কুকুরে
এই ভাইরাস সংক্রমণ ঘটে না বলেই মনে হচ্ছে। পাঁচটি কুকুরের মলে ভাইরাস দেখা গেলেও সেগুলোর
দেহে সংক্রমণ ঘটার মতো কোনো ভাইরাস পাওয়া যায়নি। এছাড়া শুকর, মুরগি ও হাঁসও এই ভাইরাসের
জন্য ভালো জায়গা নয়।
এখনই বিড়ালপ্রেমীদের
আতঙ্কিত হওয়ার কিছু দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। নভেল করোনাভাইরাসে পোষা প্রাণী খুব অসুস্থ
বা মারা যায় এমন কোনো প্রমাণ এখনও নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের
ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্গ মেডিকেল সেন্টার চিলড্রেনস হসপিটাল অব পিটসবার্গের পেডিয়াট্রিক
ইনফেকশাস ডিজিজেস বিভাগের প্রধান ডা. জন উইলিয়ামস সিএনএনকে বলেন, “মানুষ যেন তার পোষা
প্রাণীটিকে জড়িয়ে ধরা ছেড়ে না দেয়। এই গবেষকরা বিড়ালে নাসারন্ধ্র দিয়ে ‘হাই কনসেনট্রেশনের’
ভাইরাস প্রবেশ করিয়েছিল, যা ছিল একেবারেই কৃত্রিম।”
সিএনএনের
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিড়ালের করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটতে পারে কি না তা বোঝার জন্য এই
পরীক্ষায় আট মাসের পাঁচটি পোষা বিড়ালের নারারন্ধ্রে ভাইরাস প্রয়োগ করা্ হয়।
এর ঠিক
ছয় দিন পর দুটি বিড়াল মারা যায়। তাদের শ্বাসতন্ত্রে ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল।
ভাইরাস
প্রয়োগ করা বাকি তিনটি বিড়ালকে একটি খাঁচায় পুরে রাখা হয়। এর পাশে আরেকটি খাঁচায় রাখা
হয় তিনটি সুস্থ বিড়ালকে।
কিছু দিন
পর পরীক্ষা করে ওই তিনটি সুস্থ বিড়ালের একটিকে করোনাভাইরাস পজিটিভ পাওয়া যায়। অন্য
দুটি বিড়ালের শরীরে কোনো ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়েনি। লালার মধ্য দিয়ে ভাইরাস এক বিড়াল
থেকে আরেক বিড়ালে সংক্রমিত হয়েছে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
কোনো বিড়ালের মধ্যেই অসুস্থতার লক্ষণ দেখা যায়নি। এমনকি সেগুলোর
একটি থেকে আরেকটিতে ভাইরাস সংক্রমিত হলেও বিড়াল মানবদেহে সংক্রমণ ঘটাতে পারে তা বোঝায়
না।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মার্চে বেলজিয়ামে এক ব্যক্তি ইতালি
ভ্রমণ শেষে ফিরে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার পর তার বিড়ালও অসুস্থ হয়।
বিড়ালটির শ্বাসকষ্ট এবং বমি ও মলে উচ্চ মাত্রায় ভাইরাস পাওয়া গেলেও
সেটি কোভিড-১৯ না অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত হয়েছিল, তা নিশ্চিত করতে পারেননি গবেষকরা।
প্রায় দুই দশক আগে সার্সের সময়ও দেখা গিয়েছিল বিড়াল এই ভাইরাসে
আক্রান্ত হতে পারে এবং একটি থেকে আরেকেটি সংক্রমিত হতে পারে। কিন্তু ২০০২-২০০৪ সালের
ওই মহামারীর সময় পোষা বিড়ালের মধ্যে ব্যাপকভাবে ভাইরাস সংক্রমণ ঘটেনি বা বিড়াল থেকে
মানুষে এই ভাইরাস সংক্রমণের কোনো ঘটনা জানা যায়নি।
আমেরিকান ভেটেরিনারি মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, “দুটো কুকুর
(হংকং) এবং একটি বিড়ালের (বেলজিয়াম) সার্স-সিওভি-২ সংক্রমণ হয়েছে বলে খবর হলেও সংক্রামক
ব্যধি বিশেষজ্ঞ এবং একাধিক আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ মানুষ ও পশুর স্বাস্থ্য সংস্থা
একমত যে, গৃহপালিত প্রাণী মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণীর মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঘটাচ্ছে
বলে ইঙ্গিত দেওয়ার মতো কোনো প্রমাণ নেই।”
তাদের পরামর্শ, এই ভাইরাস সম্পর্কে আরও তথ্য স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত
কারও কোভিড-১৯ এর লক্ষণ দেখা গেলে তিনি যেন এই সময়ে পোষা প্রাণীর কাছে যাওয়া কমিয়ে
দেন।
“যদি আপনার পোষা প্রাণীর দেখভাল করা ছাড়া উপায় না তাকে তাহলে মাস্ক
পরে নেবেন। নিজের খাওয়া কিছু তাদের দেবেন না, চুমু বা আলিঙ্গন করবেন এবং সেগুলোর সংস্পর্শে
যাওয়ার আগে বা পরে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নেবেন।”
বেজির শরীরে থাকতে পারে করোনাভাইরাস
পরীক্ষায় আরো দেখা গেছে, অসুস্থতার কোনো রকম লক্ষণ ছাড়াই বেজির
শরীরে এই ভাইরাস দিব্যি বাস করতে পারে।
গবেষণার বরাতে সিএনএন বলছে, এই প্রাণীর শরীরে ভাইরাসটি সহজেই বংশবিস্তার
করতে পারে।
“সার্স-সিওভি-২ বেজির শ্বাসতন্ত্রের উপরের অংশে আট দিন পর্যন্ত
বংশবিস্তার করতে পারে। তবে এরপরও বেজির মধ্যে কোনো শারীরিক অসুস্থতা দেখা যায়নি বা
মৃত্যু ঝুঁকিও তৈরি হয়নি,” বলা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বেজির শ্বাসতন্ত্রের গঠন অনেকটাই মানুষের মতো।
এমনকি ইঁদুরের চেয়েও মানুষের সঙ্গে বেজিরই মিল পাওয়া যায় বেশি।
কভিড-১৯ রোগের ভ্যাকসিন গবেষণায় এই মিল কাজে দেবে বলে মনে করছেন
ভানডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের প্রতিষেধক ওষুধ ও সংক্রামক রোগ বিভাগের
অধ্যাপক ডা. উইলিয়াম শাফনের।
তিনি সিএনএনকে বলেন, “মানুষের শরীরের মত কাজ করে এমন একটি নমুনা
প্রাণী ভ্যাকসিন পরীক্ষার জন্য জরুরি; এতে বোঝা যাবে ভাইরাসটি কীভাবে শরীরকে কাবু করছে।
“আর এক্ষেত্রে বেজি হতে পারে আদর্শ প্রাণি। কয়েক দশক ধরেই ইনফ্লুয়েঞ্জার
গবেষণায় বেজির উপর পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।”