ক্যাটাগরি

কারখানা খোলা-বন্ধ যা হোক বেতন দেওয়ার নির্দেশ

তবে কারখানা খোলা রাখুক
বা বন্ধ করে দিক, যা-ই করা হোক না কেন শ্রমিক ও কর্মচারীদের মার্চ মাসের বেতন নির্ধারিত
সময়ের মধ্যে পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন তারা।

রপ্তানিমুখী নিট পোশাক
কারখানা মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান বলেছেন, “আগামী ৪ এপ্রিলের
পর থেকে আপনি আপনার করাখানাটি পরিচালনা করবেন কি না তা একান্তই আপনার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।
কারখানা পরিচালনা করার জন্য অবশ্যই করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের
রক্ষা করার জন্য সব স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিকের সব দায়-দায়িত্ব
সংশ্লিষ্ট মালিকের থাকবে।

“কারখানা চালু রাখা
বা বন্ধ রাখা যে কোনো অবস্থাতেই কর্মকর্তা- কর্মচারীদের মার্চ মাসের বেতন যথাসময়ে পরিশোধ
করতে হবে।”

বেতন পরিশোধের বিষয়ে
কারখানা মালিকদের প্রতি একই আহ্বান জানিয়েছেন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক।

বৈশ্বিক মহামারী রূপ
নেওয়া নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাংলাদেশে ধরা পড়ার পর এর বিস্তার রোধে গত ২৬ মার্চ
থেকে ৪ এপ্রিল নাগাদ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ করে দেয় সরকার।
বন্ধ করা হয় জরুরি প্রয়োজনের ফার্মেসি ও খাবারের দোকান ছাড়া অন্য সব দোকানপাট। জরুরি
প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতেই নিষেধ করা হচ্ছে, এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে
সেনাবাহিনীও।

এই পরিস্থিতির মধ্যে
লাখ লাখ শ্রমিকের তৈরি পোশাক কারখানাগুলো খোলা রাখা হবে কি না সেই সিদ্ধান্ত কারখানা
মালিকদের উপরই ছেড়ে দিয়েছিল বিজিএমইএ।

কারখানা মালিকদের সংগঠনটির
সভাপতি রুবানা হক তখন বলেছিলেন, কারখানা বন্ধের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কারখানার মালিক ও
অথবা সরকারি সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। তবে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায়
কারখানা আপাতত বন্ধ রাখার পরামর্শ থাকল।

তবে সে সময় মালিকদের
প্রতি কারখানা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান।

এদিকে করোনাভাইরাসের
প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ঘরে অবস্থান কর্মসূচি চলমান রাখতে সরকারি ছুটির (লকডাউন) মেয়াদ
১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

এখন বিকেএমইএ সভাপতিও
বলছেন, পোশাক তৈরির ক্রয়াদেশ বা অন্য কোনো কাজ থাকলে আগামী ৪ এপ্রিলের পর কারখানা চালু
রাখা যাবে। কারখানা চালু বা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত মালিকই নেবেন।

বাংলাদেশে বিজিএমইএর
অধীনে ৩২০০ এবং বিকেএমইএর অধীনে ২২০০ কারখানা চালু আছে বলে দুই সমিতির পক্ষ থেকে বলা
হয়ে থাকে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সারা দেশে অচলাবস্থার মধ্যেও নানা কারণে
অন্তত ১০ শতাংশ কারখানা উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে।

এ বিষয়ে পোশাক শ্রমিকদের
১১টি সংগঠনের জোট গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের সমন্বয়কারী মাহবুবুর রহমান ইসমাঈল
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা বার বার বলে এসেছি শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি
বিবেচনায় নিয়ে আপাতত কারখানা বন্ধ রাখার জন্য। কিন্তু নানা অজুহাতে সারা দেশে অচলাবস্থার
মাঝেও মালিকপক্ষের অনেকেই কারখানা চালু রেখেছেন। এখন সরকার ঘোষিত ঘরে অবস্থান কর্মসূচি
বেড়েছে। কিন্তু আমাদের দাবি হচ্ছে আগামী ৭ এপ্রিলের মধ্যেই সব পাওনা পরিশোধ করতে হবে।”

‘লে-অফ হতে হবে আইন মেনে’

চলতি বছরের শুরুতে
চীনে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ার এক মাসের মধ্যেই তা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে
প্রায় পুরো ইউরোপেই লকডাউন পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির
অন্যতম কেন্দ্র ইউরোপের এই পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে পোশাকের ক্রয়াদেশে। ইউরোপের ব্র্যান্ডগুলো
বাংলাদেশের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্রয়াদেশ বাতিল বা আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তের
কথা জানিয়ে দিয়েছে।

গত এক মাসে পোশাকের
ক্রয়াদেশ প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ কমেছে বলে মালিকদের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে।

বিজিএমইএর শুক্রবারের
তথ্য অনুযায়ী, গত ১২ দিনে এক হাজার ৯৭টি কারখানা তাদের ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত হওয়ার
তথ্য জানিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত করা
হয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে বার্ষিক
প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করা হয়, যা মোট রপ্তানি আয়ের ৮৫ ভাগ। সেই হিসাবে
করোনাভাইরাসের কারণে যে পরিমাণ ক্রয়াদেশ বাতিল অথবা স্থগিতের খবর এসেছে তা পোশাক খাতের
এক মাসের রপ্তানি আয়ের চেয়েও বেশি।

ক্রয়াদেশের এই খরার
মধ্যে অনেক কারখানায় লে-অফ ঘোষণা করা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে
বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ক্রয়াদেশের যেই পরিস্থিতি
দাঁড়িয়েছে তাতে অনেক কারখানাকে তিন মাস কর্মহীন হয়ে পড়ে থাকতে হতে পারে।

বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম
ওসমান বলেন, কেউ কারখানা বন্ধ করতে চাইলে তা অবশ্যই শ্রম আইন মেনে বন্ধ করতে হবে। বন্ধের
সিদ্ধান্ত নিলে তা সবার আগে লিখিতভাবে বিকেএমইএর কাছে জানাতে হবে।

“আপনি যদি আপনার কারখানাটি
বন্ধ করার বিষয়ে ভাবেন, তা অবশ্যই শ্রম আইন অনুযায়ী করতে হবে। তবে ফ্যাক্টরি বন্ধ করার
অভিপ্রায়টি সর্বপ্রথম লিখিতভাবে বিকেএমইএ-কে জানাতে হবে।”

আইনজীবী ও অধিকারকর্মী
ইসমাঈল এ বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, করোনাভাইরাসের এই বৈশ্বিক সমস্যার
কারণে মালিকদের অনেকেই শ্রম আইনের ১২তম ধারা অনুসরণ করে কারখানায় লে-অফ ঘোষণা করতে
পারেন বলে শুনতে পেয়েছেন।

“সেক্ষত্রে শ্রমিকরা
৪৫ দিনের মূল বেতনের অর্ধেক পাবেন। এর বাইরে বাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য সুবিধাগুলো তাদের
প্রাপ্ত রয়েছে। যদি পরিস্থিতির কারণে ৪৫ দিনের সঙ্গে আরও ১৫ দিনের ছুটি যোগ করতে হয়
তাহলে ওই ১৫ দিনের জন্য মূল বেতনের ২৫ শতাংশ তারা প্রাপ্ত থাকবেন এবং অন্যান্য সুবিধাদি
পাবেন। কারখানা একেবারে বন্ধ ঘোষণা করলে আর্নলিভসহ অনেক কিছু পাবেন শ্রমিকরা,” বলেন
ইসমাইল।

চলমান সঙ্কট থেকে উত্তরণের
জন্য সরকারের পক্ষ থেকে রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার স্বল্প সুদের
তহবিল ঘোষণা করা হয়েছে। কারখানাগুলো এপ্রিল, মে ও জুন মাসে শ্রমিকের বেতন পরিশোধের
জন্য এই তহবিল থেকে ২ শতাংশ সার্ভিস চার্জের বিনিময়ে ঋণ নিতে পারবেন বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের
এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

আরও খবর-

করোনাভাইরাস: গার্মেন্টে ছুটি ঘোষণার দাবি
 

করোনাভাইরাস: বিকেএমইএর সব কারখানায় ছুটির সিদ্ধান্ত
 

কারখানা বন্ধ রাখার পরামর্শ বিজিএমইএর
 

শ্রমিকদের বেতন দেয় যে যে গার্মেন্ট, প্রণোদনা পাবে তারাই
 

৯০ ভাগ কারখানায় ছুটি কার্যকর: বিজিএমইএ