ক্যাটাগরি

ভয়কে জয় করেছেন, এখন ভাইরাস জয়ের অপেক্ষা

ঢাকার একটি হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে শুয়ে এভাবেই টেলিফোনে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলছিলেন তরুণ একজন পেশাজীবী, যার শরীরে দিন দশেক আগে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। 

বিশ্বব্যাপী মহামারীর আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ এ বাংলাদেশে শুক্রবার পর্যন্ত ৬১ জনের আক্রান্ত এবং ৬ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। 

আক্রান্তদের চিকিৎসা কেমন হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে, হাসপাতালে তারা কীভাবে থাকছেন, যারা চিকিৎসা দিচ্ছেন তারাই বা এ রোগটি নিয়ে কী ভাবছেন- এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই কোভিড-১৯ আক্রান্তের সঙ্গে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা বলেছেন কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত দুজন নার্সও। তবে তারা নাম পরিচয় প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

গত ৮ মার্চ আইইডিসিআর দেশে প্রথমবারের মতো কারও নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার খবর জানায়। আর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম যার সঙ্গে কথা বলেছে, তার সংক্রমণ ধরা পড়ে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে।

এখন কেমন আছেন জানতে চাইলে টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বরেন, “শুরুতে যেসব উপসর্গ ছিল, এখন তেমন কিছু নেই। শারীরিকভাবে সুস্থ আছি বলেই মনে হচ্ছে। তবে দুর্বলতা আছে, সেটাও কেটে যেতে সময় লাগবে না আশা করি।”

তিনি জানালেন, পরিবার বা বাইরের কারও হাসপাতালে যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে ফোনে নিয়মিত কথা হচ্ছে পরিবারের সঙ্গে।

হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন সময়মত খাবার দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসক ও নার্সরা এসে দেখে যাচ্ছেন নিয়ম করে।

“তারা এলে তাদের সঙ্গেও মাঝে মাঝে কথা হয়। তবে আশপাশের রুমে কারা আছেন, তা জানার সুযোগ নেই। আমার রুমেই অ্যাটাচড টয়লেট আছে। বাইরে বের হওয়ার নিয়ম নেই।”

এই তরুণ পেশাজীবী জানালেন, প্রতিদিন যে সময় ঘুম থেকে উঠতেন, হাসপাতালে ওই সময়ই ওঠেন। মোবাইলে বন্ধু-স্বজনদের সঙ্গে কথা হয়। তাছাড়া সময় কাটানোর জন্য বই পড়েন। 

“বাসা থেকে অনেকগুলো বই নিয়ে এসেছিলাম সেগুলো পড়ছি। এখানে কোনো টেলিভিশন নাই। মোবাইলই খবরাখবর রাখার ভরসা। ফ্যামিলির লোকজন খুব টেনশন করে। তাদের সঙ্গে কথা বলতে হয়, বোঝাতে হয়।”

যারা ইতোমধ্যে সংক্রমিত হয়েছেন, তাদের জন্য নিজের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু পরামর্শও দিয়েছেন আইসোলেশনে থাকা ত্রিশোর্ধ্ব এই ব্যক্তি।

“কম বয়সীরা এই রোগে আক্রান্ত হলেও কাবু হয় না সাধারণত। তরুণ-যুবাদের মৃত্যুহারও কম। বয়স্ক মানুষের বেশি ঝুঁকি। আমার বয়স এখনও কম, তাই খুব একটা চিন্তা করছি না। সবাইকে বলব ভয়ের কিছু নেই, মানসিকভাবে শক্ত থাকুন। প্রথম দুই চারদিন একটু খারাপ লাগে। পরে ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।”

তিনি জানান, প্রাথমিক লক্ষণগুলো সেরে যাওয়ার পর এ পর্যন্ত দুবার নভেল করোনাভাইরাসের পরীক্ষা হয়েছে তার; কিন্তু দুবারই পজেটিভ এসেছে।

“মানে শরীরে এখনও ভাইরাস রয়ে গেছে। আপনারা দোয়া করবেন, আমরা যেন সুস্থ্য হয়ে ফিরে আসতে পারি।”

শুধু কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এরকম একটি হাসপাতালের একজন নার্সের সঙ্গে কথা হয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

তিনি জানান, ওই হাসপাতালে বর্তমানে ৪০ জনের মতো নার্সিং স্টাফ রয়েছেন। সবাই পালা করে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের থাকার জন্য হাসপাতালের কাছেই আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাসপাতালেই রান্নার ব্যবস্থা হয়েছে।

এই নার্স বলেন, রোগটি নতুন বলে রোগীদের সামনে যেতে প্রথমে কিছুটা ভয় কাজ করত। সেজন্য সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেন তারা।

“পিপিই ছাড়া তো তাদের সামনে যাওয়ার সুযোগ নেই। তারপরও কিছুটা ভয় কাজ করে কখনও। কিন্তু পেশাদার স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে এটা আমাদের দায়িত্বের অংশ।”

আরেকটি হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে কাজ করেন এমন একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স জানান, এই রোগের ব্যাপকতা, পরিসর, ছড়িয়ে পড়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের সবারই ভালো ধারণা রয়েছে। তারপরও শুরুতে কিছুটা ভয় কাজ করে।

“এই জায়গায় কাজ করতে গেলে তো ভয় লাগেই। কিন্তু কাজটা আমাদেরই করতে হবে, সেই দায়িত্ববোধের কাছেই সংকোচ, মৃত্যুভয়, আতঙ্ক সবকিছুই হার মানে। এখন যেহেতু এই যুদ্ধের সৈনিক আমরা, এখান থেকে পিছু হটার কোনো সুযোগ নাই।”