দেশে বিভিন্ন স্থানে মানুষের
জমায়েত, আড্ডা, হাটবাজার করা, ঘুরে বেড়ানো চলছেই। কেউ কেউ জরুরি সেবাকে দোহাই দিয়ে
নির্দেশনা অমান্যের অজুহাত দাঁড় করছে।
আইনশৃ্ঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে
কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাধারণ সচেতন মানুষও অমান্যকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন; কিন্তু
ফল হচ্ছে কম। আইনশৃঙ্খখলা বাহিনী জরিমানাও করছে নানা স্থানে।
করোনাভাইরাসের মহামারীর
মধ্যে সারা বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা নয় লাখ ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশে আক্রান্ত
হয়েছে ৫৬ জন; তাদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২৬ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের।
এ সঙ্কটের মধ্যে সরকার
গত ২৬ মার্চ থেকে সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় সব কিছু বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়। দেশের মানুষকে
ঘরে থাকার আহ্বান জানায় এবং বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় নামানো হয় সেনাবাহিনী। ১০ দিনের
এ কর্মসূচি বাড়িয়ে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়েছে।
তবে সরকারের ঘরে থাকার
নির্দেশনার মধ্যে মানুষের ঘুরেফিরে বেড়ানোয় বৃহস্পতিবার থেকে ‘সেনাবাহিনী কঠোর’ হওয়ার
খবর আসে।
বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
ডটকম জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদে উঠে এসছে সামাজিক দূরত্ব মানায় অবহেলার চিত্র।

বরিশাল
জরুরি
প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যেতে ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে বরিশালে কঠোর অবস্থানে
রয়েছে সেনাবাহিনী। রয়েছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতও।
বৃহস্পতিবার
সেনাবাহিনী ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের যৌথভাবে নগরীতে টহল দিতে দেখা গেছে।
জেলা
প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুল হুদা বলেন, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা ও
গণসচেতনতার লক্ষ্যে সেনাবাহিনীসহ টহলে নেমেছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল
নথুল্লাবাদে কভার্ডভ্যানে যাত্রী পরিবহনের সময় হাতেনাতে আটক করা হয়। সেনা সদস্যদের
দেখে যাত্রীরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে ভ্যানের চালক নাইম রহমানকে এক হাজার টাকা
জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বিভিন্ন স্থানে দেখা যায়, যারা সরকারি নির্দেশ অমান্য করে
বাসার বাইরে বের হচ্ছেন, তাদের কারণ জানতে চাওয়া হয় এবং পাশাপাশি তাদের বাসায় ফিরে
যাওয়ার অনুরোধ করা হয়।
এছাড়া টিসিবির ট্রাক, মুদি ও ওষুধের দোকানে সামাজিক দূরত্ব
বজায় রেখে পণ্য বেচাকেনার নির্দেশ দিতেও দেখা যায় সেনাবাহিনী ও জেলা প্রশাসনের
পক্ষ থেকে।
বরিশাল মহানগর পুলিশের কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান জানান, যারা
অপ্রয়োজনে বাসার বাইরে বের হচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে পুলিশ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ
সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলায়
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বাড়ির বাইরে থাকায় বৃহস্পতিবার ২৫ জনকে আটক ও ৫৩ জনকে অর্থদণ্ড
দেওয়া হয়েছে।
সদর থানার ওসি জিয়াউর রহমান
জানান, সকাল থেকে সদর উপাজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশের কয়েকটি দল। এ সময়
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বাইরে অবস্থানকারী ২৫ জনকে আটক করা হয়। শতাধিক যানবাহনও জব্দ
করা হয়।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তা শিমুল আক্তার জানান, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় নিষেধাজ্ঞা
অমান্য করার দায়ে ৫৩ জনকে জরিমানা করা হয়।
পাশাপাশি তাদেরকে বাড়ির
বাইরে অপ্রয়োজনে আর বের না হওয়ার জন্য সতর্ক করা হয়।

চুয়াডাঙ্গা
সামাজিক দূরত্ব মানার তেমন
চিত্র দেখা যাচ্ছে না। বুধবার যে অবস্থা ছিল বৃহস্পতিবারও একই অবস্থা, ভিড় ছিল চুয়াডাঙ্গার
হাট-বাজারে। মানুষ নিষেধাজ্ঞার গুরুত্ব না দিয়ে বাজারে এসেছেন। ভিড় করে কেনাকাটা করেছেন।
কোনো সামাজিক দূরত্ব মানা হয়নি।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার
দিকে চুয়াডাঙ্গার বড় বাজারের নিচের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মাছ, মাংস, চাল, ডাল ও শাকসবজি
কেনার জন্য মানুষ বাজারের ভেতরে ঢুকছেন। ঢোকার রাস্তায় তৈরি হয়েছে মানুষের জট।
নিচের বাজারে আসা চুয়াডাঙ্গা
পৌরসভার এক কর্মী বলেন, “জরুরি কিছু কেনাকাটা ছিল সেজন্য এসেছিলাম। তবে, ভিড় খুব বেশি।
ভিড় ঠেকানোর জন্য কাউকে দেখলাম না।”
পৌর এলাকার ইসলামপাড়ার
রশিদুল হক বলেন, “চাল-ডাল তো কিনতেই হবে। এজন্য এসেছি।”
সকাল ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা
বড় বাজারে ভেতরে দুজন পুলিশকে ঢুকতে দেখা গেছে। তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকান ছাড়া অন্য
দুতিনটি দোকান খোলা থাকতে দেখে বন্ধ করে দেন।
চুয়াডাঙ্গা বড় বাজারের
পাইকারি ও খুচরা ওষুধ বিক্রির দোকান জনতা ফার্মেসির সামনে দেখা গেল বেশ ভিড়। কাছে গিয়ে
দেখা গেল, দোকানের বাইরে তিন ফুট দূরত্ব তৈরি করে রেখা টানা। সেই রেখা মেনে মানুষ দাঁড়িয়ে
থেকে ওষুধ কিনছেন।
দোকানের এক কর্মীকে ক্রেতাদের
উদ্দেশে রেখার বাইরে কাউকে না দাঁড়ানোর আহ্বান জানাতে দেখা গেছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি
আবু জিহাদ মোহাম্মদ ফখরুল আলম খান বলেন, “নির্দেশনা এসেছে নিত্য প্রয়োজনীয় দোকান ছাড়া
অন্য কোনো দোকান খুলতে দেওয়া হবে না। আমরা এমন কয়েকটি দোকান বন্ধ করে দিয়েছি। সামাজিক
দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে পুলিশ তৎপর থাকবে।”

গোপালগঞ্জ
সমাজিক দূরত্ব মানা ও মানুষকে
ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীর পাঁচটি টিম পাঁচ উপজেলায় কাজ শুরু করেছে।
বৃহস্পতিবার জেলার পাঁচজন
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সেনাবাহিনীর পাঁচজন ক্যাপ্টেনের নেতৃত্বে সকালে জেলা প্রশাসকের
কার্যালয়ের সামনে থেকে অভিযান শুরু হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, টিমগুলো
সদর, টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়া, মুকসুদপুর ও কাশিয়ানী উপজেলায় টহল দিচ্ছে। মানুষের সমাগম
দেখলেই গাড়ি থামিয়ে সেনা সদস্যরা মানুষের সাথে কথা বলছেন ও দ্রুত এলাকা ত্যাগ করে ঘরে
থাকার নির্দেশ দিচ্ছেন।
আরও দেখা যায়, সেনা সদস্যরা
ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, প্রইভেটকার, রিকশা থামিয়ে যাত্রী ও চালকদের মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস
আছে কিনা তা দেখছেন। না থাকলে অনেককে মাস্ক পরিয়ে দিয়েছেন।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট
ইলিয়াছুর রহমান বলেন, স্থানীয় জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ৫জন ম্যজিস্ট্রেট সেনা সদস্যদের
৫টি টিমের সাথে ৫টি উপজেলায় কাজ করছেন। তারা সংক্রামক করেনাভাইরাস মোকাবেলায় সামাজিক
দূরত্ব ও মানুষকে ঘরে থাকার বিষয়টি নিশ্চিতে কাজ করছে।

ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহে এখনও অনেকে ঘরে
থাকার নির্দেশ মানছে না। হাটবাজারে ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহ শহরে
সাপ্তাহিক হাটের দিন। হাটে গিয়ে দেখা যায়, ভিড় করে কেনাবেচা চলছে। মানা হচ্ছে না সামাজিক
দূরত্ব। গ্রামাঞ্চলে চায়ের দোকানে সকাল সন্ধ্যায় আড্ডা চলছে।
মহেশপুর উপজেলার শ্যামকুড়
গ্রামের নন্দ দুলাল চৌধুরী বলেন, বৃহস্পতিবার শ্যমকুড় সাপ্তাহিক হাটের দিন। হাটে মানুষের
ভিড় দেখা যায়। নিরাপদ দূরত্ব না মেনে কেনাকাটা করতে দেখা গেছে। চায়ের দোকানগুলোতে গায়ের
সাথে গা ঘেঁষে বসে আড্ডা দিতে দেখা যায়।
শৈলকুপা উপজেলার উমেদপুর
গ্রামের জাহিদুল কবির ফিরোজ বলেন, বুধবার ছিল রয়েড়ার সাপ্তাহিক হাটের দিন। হাটে অনেক
মানুষের সমাগম হয়। ভিড় করে কেনাকাটা করতে দেখা যায়।
জেলা শহরে পুলিশ সেনা বাহিনীর
টহল থাকায় আড্ডা জমাতে পারছে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মানুষকে ঘরে থাকতে প্রচার চালানো
হচ্ছে।
ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার
মো. হাসানুজ্জামান বলেন, “মানুষকে ঘরে আবদ্ধ রাখতে আজ থেকে পুলিশের টহল জোরদার করা
হয়েছে। তারা কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছেন। থানাগুলোকে গ্রামাঞ্চলে টহল বাড়াতে বলা হয়েছে।”

মাগুরা
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই
স্থানীয় প্রশাসন ও সেনাবাহিনী মাঠ পর্যায়ে আরও কঠোরভাবে কাজ করছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার
আবু সুফিয়ান, সহকারী কমিশনার সিতেশ চন্দ্র সরকার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) পাপিয়া আক্তারের
সমন্বয়ে সেনা সদস্যদের একাধিক টিম মাঠে অবস্থান করছে।
জেলা শহর, উপজেলাসহ প্রত্যন্ত
গ্রাম অঞ্চলে হ্যান্ড মাইকে সাধারণ মানুষকে বাইরে অহেতুক ঘোরাফেরা না করার জন্য মাইকিং
করে সচেতন করছেন। এছাড়া অহেতুক রাস্তায় চলাচলের জন্য সেনা সদস্যরা অনেককে মৌখিকভাবে
সর্তক করছেন।
সহকারী কমিশনার (ভূমি)
পাপিয়া আক্তার জানান, সরকারি নিয়ম না মানায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মাগুরা শহরে
কয়েকটি দোকান মালিককে জরিমানা করেছেন তিনি।

মেহেরপুর
সরেজমিনে শহরের বাজারহাট,
ফার্মেসিসহ বিভিন্ন দোকানে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটা করতে দেখা যায়নি। চিরাচরিত
অভ্যাসেই তারা দোকানে যাচ্ছেন এবং পাশাপাশি দাঁড়িয়ে কেনাকাটা করছেন। বাস ছাড়া অন্যসব
পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক আছে। মাস্ক ব্যবহার ছাড়াই ঘোরাফেরা করছেন অনেকেই।
শহরের ঘাটপাড়ার শিলা খাতুন
বলেন, তিনি এক ইজিবাইকে দশজন গাদাগাদি করে ত্রাণের আশায় এসেছেন।
সদর থানার ওসি শাহ দারা
খাঁন বলেন, “স্বল্প পুলিশ দিয়ে সব নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। মানুষের আন্তরিকতা ছাড়া
শুধু পুলিশ দিয়ে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা অসম্ভব।”
জেলা প্রশাসক আতাউল গণি
বলেন, নিজের ভালোমন্দ নিজে না বুঝলে পুলিশ, সেনাবহিনী, ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে অন্যকে ভালো
ও নিরাপদ রাখা সম্ভব না।

নারায়ণগঞ্জ
সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত
করতে এবং অপ্রয়োজনে জনসাধারণের ঘোরাফেরা বন্ধ করতে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ
শহরে সেনাবাহিনীর কড়াকড়ি আরোপ করেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই
শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে সেনা সদস্যরা অবস্থান নেন। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া
জনসাধারণকে বাড়ির বাইরে বের না হতে সতর্ক করে দিচ্ছেন। এদিকে সেনাসদস্যদের
উপস্থিতির কারণে শহরের লোক সমাগম অন্যদিনের তুলনায় ছিল কম।
সকাল থেকেই শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের ক্যাপ্টেন
কানিজ ফাতেমা মহিসনের নেতৃত্বে সেনা সদস্যরা চেকপোস্ট স্থাপন ও মাইকিং করে
জনসাধারণকে ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য নিরুৎসাহিত করেন। বিশেষ প্রয়োজন না হলে
কাউকেই ঘর থেকে বের না হতে অনুরোধ করেন তারা।
একই সঙ্গে তারা
সাধারণকে সতর্কও করে দিচ্ছেন যে সরকারি আদেশ, নির্দেশ অমান্য করা হলে আইনানুগ কঠোর
ব্যবস্থা নিতে তরা বাধ্য হবেন।
সেনাবাহিনীর ৯ পদাতিক
ডিভিশনের ক্যাপ্টেন কানিজ ফাতেমা মহসিন সাংবাদিকদের বলেন, “যারা অযথা গল্প-আড্ডা ও
ঘোরাফেরা করছেন এমন সমাগম আমরা ভেঙে দিচ্ছি। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাচলের আহ্বান
জানাচ্ছি।”

রংপুর
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত
করতে শক্ত অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত দুই/তিন দিন নগরীর সড়কে লোক সমাগম
ও যানবাহন কিছু দেখা গেলেও বৃহস্পতিবার তার তুলনায় কম ছিল।
সকাল থেকে রংপুর নগরীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে মেট্রোপলিটন
পুলিশের টহল দেখা গেছে। টহল বাড়িয়েছে র্যাব ও সেনাবাহিনীও। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে
ফাঁকা হয়ে গেছে নগরীর বিভিন্ন এলাকা।
দুপুরে নগরীর শাপলা চত্বর, জাহাজ কোম্পানি মোড়, মেডিকেল
মোড়, কাচারী বাজার, লালবাগ, পার্কের মোড়, মডার্ণ মোড়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চত্বর
ও সড়কে পুলিশি চেকপোস্ট দেখা গেছে। এসব চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা ঘর থেকে
বের হওয়া মানুষদের সচেতন করছেন। করোনারভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশনা ও বিধিনিষেধ
মেনে চলার অনুরোধ করছেন।
রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার আলিম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
ডটকমকে বলেন, সরকারি বিধিনিষেধ অমান্যকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না। অহেতুক কেউ বাইরে ঘোরাফেরা
বা জমায়েতের চেষ্টা করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেরপুর
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে
ঘরে অবস্থানের সরকারি নির্দেশনা না মেনে ঘর থেকে বের হওয়া এবং সামাজিক দূরত্ব না মানার
হিড়িক পড়ে যায় শেরপুর শহরে। অনেক দোকানপাট খুলে দেওয়া হয়। এর সঙ্গে সড়কে চলতে থাকে
বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। কিন্তু বিকালে সেনাবাহিনীর টহল ও ঘরে থাকার আহবান জানানোর পর
পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা
প্রশাসক কার্যালয়ে প্রশাসন, জেলা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর এক যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভার পর বিকালে ঘাটাইল
সেনানিবাসের ১৯ পদাধিক ডিভিশনের লেফটেনেন্ট নাহিদুল ইসলাম হৃদয়ের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী
শেরপুর শহর টহল দেয়।
সেই সঙ্গে মাইকে মানুষকে
ঘরে থাকা, সামজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবান জানালে ঘর থেকে বের হয়ে
আসা মানুষ ঘরে ফিরে যান এবং অল্প সময়ের মধ্যেই শহরে যানবাহন চলাচল কমে যায় ও দোকানপাট
বন্ধ হয়ে যায়।

বাগেরহাট
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা
এবং মানুষকে ঘরবন্দি রাখতে স্থানীয় প্রশাসন কঠোর নজরদারি করছে। জেলা প্রশাসনের ৩০টি
ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে কাজ করছে।
বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা
ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহীনুজ্জামান বলেন, জনগণকে ঘরবন্দি রাখতে জেলা প্রশাসন সরকারের
নির্দেশনা মেনে মাঠে কাজ করছে। বাগেরহাটের নয় উপজেলা ও তিন পৌরসভায় ৩০ জন নির্বাহী
ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৩০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত গঠন করা হয়েছে। তারা পাড়া-মহল্লা,
গ্রামীণ হাটবাজারে ঘুরছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে
মাঠের নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে।
“যেখানে বেশি জনসমাগম দেখতে
পাচ্ছে সেখানে তাদের বোঝাচ্ছে। যারা জেনে বুঝে সামাজিক দূরত্ব মানছেন না তাদের অর্থদণ্ড
দিতে বাধ্য হচ্ছি। গত এক সপ্তাহে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারকরা সত্তরটির উপরে মামলা
করেছেন।”

সাভার
সাভারে পুলিশ, সেনাবাহিনী
কিছু সময় পরপরই টহল দিচ্ছে। মাইকিং করে সবাইকে ঘরে থাকতে বলছে। এত কড়াকড়ির মধ্যেও প্র্রয়োজন
ছাড়া ঘর থেকে বেরিয়ে জরিমানা গুনছে অনেকেই।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা-আরিচা
মহাসড়কের সাভার থানা বাসস্ট্যান্ডে রিকশা, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে চলাচলরত লোকজনকে
আটক করে ঘর থেকে বের হওয়ার কারণ জানতে চান ভ্রাম্যমাণ আদালতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট
আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ। যারা সঠিক জবাব দিতে পারছে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। আর যারা ঘর
থেকে বের হওয়ার কারণ বলতে পারেনি তাদের জরিমানা করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন,
জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। তবুও অনেকেই কোনো প্রয়োজন
ছাড়াই বাইরে ঘোরাফেরা করছে। এরকম ১৫ জনকে ৯ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

টাঙ্গাইল
সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত
করতে বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইলে সেনাবাহিনী ও পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।
বিকালে টাঙ্গাইল সদর উজেলার
সহকারী কমিশনার (ভূমি) উপমা ফারিসাসহ পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা শহরের নিরালার মোড়,
বেবি স্ট্যান্ড, পার্ক বাজার, গালার হাট, বৈল্লা বাজার, বটতলা বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায়
টহল দেয়।
এ সময় মাইকিং করে লোকজনকে
ঘরে ফেরার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।

নীলফামারী
অন্য দিনের তুলনায় বৃহস্পতিবার
বেশি সক্রিয় ছিল পুলিশ ও সেনাবাহিনী। শহরের বিভিন্ন স্থানে পথচারী ও যানবাহন থামিয়ে
জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা গেছে। এ সময় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের হওয়াদের ফিরিয়ে
দেওয়া হয়েছে।
দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত
ঘুরে দেখা গেছে, শহরের বড়বাজার ট্রাফিক মোড়ে বিভিন্ন যানবাহন ও পথচারীদের থামিয়ে বাড়ি
থেকে বের হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হয়।
জরুরি প্রয়োজনের প্রমাণ
দিতে না পারায় অনেককে ফিরিয়ে দেওয়া হয় বাড়িতে। পাশপাশি সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের অনুরোধ
জানাতে দেখা গেছে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদেরকে।
ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক
আজাদ হোসেন খান বলেন, যানবাহন নিয়ে যারা জরুরি প্রয়োজনে বের হননি তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া
হয়েছে।
নীলফামারী পুলিশ সুপার
মোহাম্মদ মোকলেছুর রহমান বলেন, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে বৃহস্পতিবার থেকে কার্যক্রম
জোরদার করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পুলিশ ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে কাজ করছে। সাথে রয়েছেন নির্বাহী
ম্যজিস্ট্রেট।
পার্বতীপুর বীর উত্তম শহীদ
মাহবুব সেনানিবাসের ১৯ মিডিয়াম রেজিমেন্ট আর্টিলারির ভারপ্রাপ্ত উপ-অধিনায়ক মেজর এরফান
বলেন, বিভিন্ন হাটবাজার, পাড়া-মহল্লায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকার যে নির্দেশনা
দিয়েছে সেই নির্দেশনা মানার জন্য মানুষকে বার বার অনুরোধ করা হচ্ছে।

নাটোর
বৃহস্পতিবার বিকালে মিষ্টি
বিক্রির দায়ে নাটোরের লালপুর বাজারের এক ব্যবসায়ীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে উপজেলা
নির্বাহী কর্মকর্তা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
উম্মুল বানীন দ্যুতি বলেন, খাবার হোটেলসহ বিশেষ কিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যান্য দোকান
বন্ধ রাখার নির্দেশ রয়েছে। অথচ সরকারি এ নির্দেশ অমান্য করে লালপুর বাজারের লোকনাথ
হোটেল অ্যান্ড মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে মিষ্টি বেচাকনা করছিল।
“দোকানের ক্রেতা-বিক্রেতারা
মাস্ক পরে ছিলেন না এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেননি। তাই প্রতিষ্ঠানটিকে ১০ হাজার
টাকা জরিমানা করা হয়েছে।”

কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পাঁচশর
বেশি লোক জড়ো করে চাল ব্যবসায়ীদের দেওয়া চাল বিতরণ করেছেন কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনের
সংসদ সদস্য সরওয়ার জাহান বাদশা।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায়
তারাগুনিয়া ডাকবাংলা চত্বরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকসমাগম ঘটিয়ে তিনি চাল বিতরণ করেন।
এতে সামাজিক দূরত্ব স্থাপনের কঠোর থাকলেও তা মানা হয়নি।
দৌলতপুর চাল ব্যবসায়ী সমিতির
আয়োজনে এ ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি থেকে তারাগুনিয়া এলাকার ৪০০ জন দরিদ্র ব্যক্তির মাঝে
প্রতিজনকে ৫ কেজি চাল, আধ-কেজি তেল, আধ-কেজি ডাল ও একটি সাবান বিতরণ করা হয় বলে জানান
সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী
কমিশনার (ভুমি) আজগর আলী বলেন, “আমরা অনেক চেষ্টা করেছি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার।
কিন্তু ত্রাণ বিতরণ শুরু করার পরে আর ট্যাকেল করা যায়নি।”

গত শুক্রবার দেশের বিভিন্ন মসজিদে ভিড় করে জুমার নামাজ পড়তে দেখা গেছে। সেনা বাহিনীর কঠোর হওয়ার দ্বিতীয় দিনটি শুক্রবার।