শুক্রবার সকাল থেকে ময়মনসিংহ ব্রিজের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় হাজারো
গার্মেন্টস শ্রমিককে ঢাকার দিকে হেঁটে যেতে দেখা যায়। ট্রেন-বাসসহ সব ধরণের
গণপরিবহন বন্ধ থাকায় নিজের দুইটি পা ছাড়া আর কোনো উপায় খুঁজে পাননি তারা-তার উপর
ভরসা করেই পাড়ি দিতে নেমেছেন দীর্ঘপথ।
‘করোনাভাইরাসের ভয়ের চাইতে গার্মেন্টসের চাকরি হারানোর ভয় বেশি’-তাই
এ ঝক্কি পোহাতে হচ্ছে বলছেন তারা।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ২৫ এপ্রিল থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ‘সব
নিট গার্মেন্টস’ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় বিকেএমইএ। তারা বলেছিলেন, সরকারের ‘দৃষ্টিভঙ্গি
অনুসরণ করে পরে কারখানা বন্ধের বিষয়ে আরও বিশদ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
অন্তত ২৫ লাখ শ্রমিকের রোজগারের প্রতিষ্ঠান দুই হাজার ২৮৩টি
কারখানার সংগঠন বিকেএমইএর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
রপ্তানীমুখী শিল্পকে করোনাভাইরাস আক্রান্ত অর্থনৈতিক মন্দা থেকে রক্ষার জন্য বিশাল
প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বিভিন্ন
সুযোগ-সুবিধা এই শিল্পখাতের জন্য প্রদান করেছেন।
“এমন প্রেক্ষাপটে আমাদের কারণে কোনো শ্রমিকের যেন কোনো রূপ ক্ষতি
না হয়, সেজন্য কোনোভাবেই আতঙ্কিত না হয়ে, দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য
সরকারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে বিকেএমইএ-র সদস্যভুক্ত সব নিট পোশাক
কারখানা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
তবে এরমধ্যে সরকার ঘোষিত ১০ দিন থেকে কর্মসূচি বাড়িয়ে আগামী ১১
এপ্রিল পর্যন্ত করেছে। তাই বন্ধ রয়েছে সব ধরনের দূর পাল্লার সব যানবাহন।

ময়মনসিংহ জেলা মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান
বলেন, “যানবাহন বন্ধ থাকায় আমাদের এবং শ্রমিকদের ক্ষতি হলেও আমরা সরকারি নির্দেশনা
অনুযায়ী যানবাহন বন্ধ রেখেছি।
“পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত যানবাহন বন্ধ থাকবে।”
শুক্রবার ময়মনসিংহ ব্রিজের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কথা হয় শ্রমিকদের
কয়েকজনের সাথে। গাজীপুরের স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টসে কাজ করেন বুলবুল আহমেদ।
এ পোশাক কর্মী বলেন, “৪ এপ্রিল থেকে গার্মেন্টস খোলা হবে। যদি আগামীকাল
গার্মেন্টেসে পৌঁছাতে না পারি তাহলে চাকরি থাকবে না।
“অনেকটা বাধ্য হয়েই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি।”
গাজীপুর জেলার চৌরাস্তায় অবস্থিত এমএম গার্মেন্টস। এ গার্মেন্টসের
নারী কর্মী ফারজানা আক্তার জানান, তিনি স্বপরিবারে ঢাকায় থেকে চাকরি করেন।
তাদের ‘করোনাভাইরাসের ভয়ের চাইতে গার্মেন্টসের চাকরি হারানোর ভয়
বেশি,’ বলেন তিনি।
তাই সবার সাথে হেঁটে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন তিনিও।
ময়মনসিংহ থেকে নেত্রকোণা জেলার দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটারের বেশি। সেখান
থেকেও রওনা হয়ে আসা এক শ্রমিকের সাথে আলাপ হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের। কখনো
রিকশায় কখনো হেঁটে ময়মনসিংহ পর্যন্ত এসেছেন খলিল আহম্মেদ।
গাজীপুরের পিএন গার্মেন্টস কর্মী খলিল আহম্মেদ বলেন, “ফজরের
নামাজের পর নেত্রকোণার ইসলামপুর থেকে রওনা দিয়েছি। রাস্তায় গাড়ি তো নাই, রিকশাও
চলছে হালকা হালকা।
“তাই কিছুক্ষণ রিকশায় চড়ে আর কিছুক্ষণ হেঁটেই চলছি।”

পোশাক কারখানায় কাজ করেই তাদের পরিবারের সদস্যদের খাবার জোটাতে হয়।
“কাল গার্মেন্টেসে হাজিরা না দিতে পারলে চাকরি থাকবে না।
“কাল-পরশু বেতনও হবে, তাও পাওয়া যাবে না, তাই পায়ে হেঁটেই ঢাকা
যেতেই হবে।”
ময়মনসিংহ থেকে সড়ক পথে ৬৫ কিলোমিটার দূরে শেরপুর জেলা। সেখান থেকে
চাকরি বাঁচাতে আসছে ইউসুফ আলী।
নারায়ণগঞ্জের অনন্ত
গ্রুগের শ্রমিক ইউসুফ আলী বলেন, “১০ বছর ধরে গার্মেন্টসে কাজ করছি। করোনার মতো এমন
দুর্যোগ আর কোনদিন দেখেনি।
“শেরপুর থেকে অনেক কষ্ট
করে ময়মনসিংহ পর্যন্ত আসলাম। এখন নারায়ণগঞ্জে পায়ে হেঁটে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায়
দেখছি না।
“সময় না যেতে পারলে
বেতনও তুলতে পারব না।”
এ নিয়ে কথা হয় ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামানের সাথে।
সরকারি নির্দেশনায় কিছু গার্মেন্টস বন্ধ, কিছু গার্মেন্টস চলছে
জানিয়ে তিনি বলেন, “আবার কিছু গার্মেন্টস আগামীকাল থেকে খোলা। প্রয়োজনের তাগিদেই
গার্মেন্টস শ্রমিকরা ঢাকা যাচ্ছে।”
যানবাহন বন্ধ থাকায় তাদের ভোগান্তি হচ্ছে বলে স্বীকার করে তিনি যোগ
করেন-“আমরা যতটুকু পারছি তাদের সহযোগিতা করছি।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
ডটকমের সঙ্গে দেশের জন্য বিদেশী মুদ্রা উপার্জনকারী এসব পোশাক কর্মীর কথা হয় ময়মনসিংহে।
যেখান থেকে ঢাকার দূরত্ব ১১২ কিলোমিটার। গুগলের হিসাবে টানা হেঁটে গেলে কাউকে ১৮
ঘণ্টা আর কাউকে ২৮ ঘণ্টা হাঁটতে হবে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে।
শুক্রবার সকালে আলাপ
হওয়া এক শ্রমিক রাত সাড়ে ১১টায় মোবাইল ফোনে জানালেন তখনও তিনি পথে।
সরকার করোনাভাইরাস
রোধের এ সঙ্কট মোকাবেলায় পোশাক শিল্পের জন্য পাঁচ হাজার টাকার এক থোক বরাদ্দের
ঘোষণা দিয়েছে এরই মধ্যে।