পরিবহন শ্রমিকদের ভোগান্তি চরমে।ছবি: এমএএম ইব্রাহীম
সম্প্রতি করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশব্যাপী চলমান গণপরিবহন বন্ধের সিদ্ধান্ত আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করেছে সরকার। এদিকে সরকারের ঘোষিত সাধারণ ছুটির জন্য বিপাকে পড়েছে সাধারণ শ্রমিকেরা। দিনমজুর এই শ্রমিকদের আয়ের পথ একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে।
এমন অবস্থায় সংশ্লিষ্ট শ্রমিক ইউনিয়ন ও মালিকের পদক্ষেপে খুশি নন খোদ পরিবহন শ্রমিকরাই। বরং শ্রমিকেরা অভিযোগ করে জানিয়েছেন শ্রমিক সংগঠন ও পরিবহণন মালিকের পক্ষ থেকে পাচ্ছে না কোন প্রকারের সাহায্য সহযোগিতা।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে সাহায্য সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ জানিয়ে আক্তারুজ্জামান নামে এক পরিবহন শ্রমিক বলেন, আমরা সরকার থেকে যেমন সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছি না পাশাপাশি মালিক পক্ষ ও শ্রমিক ফেডারেশন থেকেও কোনও সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছি না। আমরা এখন বেকার জীবনযাপন করছি। কেউ আমাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছে না। আমি মালিক পক্ষকে আমার অবস্থার কথা জানালেও তারা কোনও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
একই অভিযোগ জানান অপর আরেক শ্রমিক সুমন। তিনি বলেন, আমাদের ৪ তারিখ পর্যন্ত গাড়ি বন্ধ থাকবে ঘোষণা দিয়েছিল মালিকপক্ষ। কিন্তু ৪ তারিখ থেকে বাড়িয়ে আবার ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এমন অবস্থায় যেসব শ্রমিকেরা দৈনিক কাজ করে দৈনিক খায় তাদের জন্য অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আমাদের তেমন পুঁজি নেই যে ভেঙ্গে খাবো। এখন যদি গাড়িগুলো এমন করে বন্ধ রাখে তাহলে আমরা কীভাবে চলবো। আমাদের মালিকও আমাদের সাহায্য করেনি। এছাড়া শ্রমিকদের সংগঠনগুলো থেকেও সাহায্য করেনি। এখন আমাদের যদি সাহায্য না করে আমরা কীভাবে খাবো।
করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে এবং মানুষের ভিড় এড়ানোর জন্য দেশের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ শ্রমিকেরা। তবে এ ক্ষতি থেকে কাটিয়ে উঠতে শ্রমিকরা সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা চাচ্ছেন জোরালভাবে।
শ্রমিকদের সাহায্য সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশ বাস মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার এ্যানায়েত উল্লাহ ইত্তেফাককে বলেন, শ্রমিকদের জন্য মালিকেরা ব্যক্তিগত পর্যায়ে যতটুকু সম্ভব সাহায্য সহযোগিতা করা হচ্ছে। এইটা মানবতার ব্যাপার মালিকেরা যেভাবে পারছে সাহায্য করছে। সাহায্যের ক্ষেত্রে আমরা সরকার থেকে কোনো প্রকারের সাহায্য সহযোগিতা এখনো পাইনি।
আরো পড়ুন: অবশষে বন্ধ থাকছে গার্মেন্টস কারখানা
রাজধানীর ‘বঙ্গবন্ধু এভিনিউ টু এয়ারপোর্ট’ পরিবহনের মালিক বাবুল শেখ ইত্তেফাককে বলেন, আমরা আমাদের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে আসছি। যারা খাবার সংকটে আছেন। আমরা তাদের আর্থিকভাবে এবং খাবার দিয়ে সাহায্য করছি। যারা গ্রামে আছে তাদের আমরা টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি। তবে আমরা আমাদের নিজস্ব ফান্ড থেকেই এ সাহায্য করছি সরকার থেকে কোনো সাহায্য সহযোগিতা আমরা মালিকেরা পাইনি।
শ্রমিকদের ত্রাণ এবং অন্যান্য সাহায্য-সহযোগিতা বিতরণ প্রসঙ্গে সাবেক নৌ-পরিবহন মন্ত্রী ও শ্রমিক নেতা শাজাহান খান ইত্তেফাককে বলেন, প্রত্যেক শ্রমিকদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। শ্রমিকদের একটি তালিকা ডিসি এর কাছে দেয়া হয়েছে, ডিসি ঐ তালিকা অনুযায়ী শ্রমিকদের ত্রাণ দিবেন। এছাড়া আমাদের শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর কল্যাণ তহবিল থেকেও ত্রাণ দেয়া হবে। এছাড়া মালিক সমিতির পক্ষ থেকে শ্রমিকদের সাহায্য সহযোগিতা করা হচ্ছে।
ইত্তেফাক/এএএম