দেশের অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের অভিঘাত মোকাবেলায় রোববার প্রধানমন্ত্রী ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার পর এই প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী এর আগে রপ্তানি খাতের শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছিলেন। রোববার নতুন চারটি প্যাকেজে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টর, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন ঋণ সুবিধা, এক্সপোর্ট ডেভলপমেন্ট ফান্ডের (ইডিএফ) সুবিধা বৃদ্ধি এবং প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিম চালুর ঘোষণা দেন।
রোববার বিকালে নিজের উত্তরার বাসায় এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “প্রধানমন্ত্রী রেন্সপন্স করেছেন, এটা পজিটিভ তখনই বলতে পারতাম যদি আমরা দেখতাম যে আসল সমস্যার সমাধান করার জন্য উদ্যোগী হয়েছেন। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের, খেটে খাওয়া মানুষের, ইনফরমাল সেক্টারের কৃষকদের, তাদের কোনো কথা এখানে (প্রণোদনা প্যাকেজ) নেই।
“এখানে আমার কাছে যেটা মনে হয়ে যে, ৭২ হাজার কোটি টাকা.. পুরোটাই ঋণ। এখানে অনুদান বলতে কিছু নেই। সব ঋণের প্যাকেজ।”
এর্ আগের দিন বিএনপি মহাসচিব সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের কাছে ৮৭ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের দাবি জানিয়েছিলেন।
তিনি রোববার বলেন, “দিন আনে দিন খায়, এমন গরিব মানুষের জন্য আমরা সরকারকে ১৫ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার কথা বলেছিলাম। সুনির্দিষ্টভাবে বলেছিলাম এটা অনুদান দিতে হবে। আমরা বলেছি, ভাতা বাড়াতে, চিকিৎসক-নার্স, চিকিৎসাকর্মীদের প্রণোদনা দিতে হবে, স্বাস্থ্য খাতে প্রণোদনা বাড়াতে হবে।
“শুধুমাত্র ঋণ নয়। আপনাকে এভাবে তাদেরকে অনুদান, ভাতা, বেতন বাড়িয়ে তাদেরকে সহযোগিতা করতে হবে। যে বিষয়গুলো অত্যন্ত জরুরি, সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সেইভাবে কথা বলেননি। ‘দিন আনে দিন খায়’-এই শ্রেণির মানুষের সংখ্যা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। আনফুরচুনেটলি সেই সেক্টরের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্যে কোথাও, তার প্যাকেজের মধ্যে কোথাও সেই ধরনের কিছু আমরা দেখতে পাই নাই। রেমিটেন্স যারা পাঠান, তাদের কোনো কথা এই প্রণোদনা প্যাকেজে নেই।”
স্বাস্থ্য খাতে বেশি অর্থায়ন প্রয়োজন ছিল মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, “হেলথ সেক্টরটা একেবারেই নেগলেকটেড, কোনো কথাই বলা হয়নি এখানে। ভেন্টিলেটর কত আছে আপনারা জানেন। আরও বেশি সেটা তৈরি করার কোনো কথা এখানে (প্রণোদনা প্যাকেজে) নেই।
“সব চেয়ে বড় দুর্বলতা দেখুন। হেলথ ডিপার্টমেন্টের মধ্যে পারস্পরিক যে সমন্বয় থাকা দরকার, সেটাও ঠিক নেই। ডিজি হেলথ এক কথা বলছেন, আইইডিসিআরের ডিজি আরেক কথা বলছেন, আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী তো আরও ভীষণ কথা বলছেন। যেসব কথা শুনলে মনে হবে, দেশে কোনো ভাইরাস নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। সারা পৃথিবী ভয়ংকর মহামারীর মধ্যে পড়েছে, সারা পৃথিবী গ্রেট ডিপরেশনের দিকে যাচ্ছে। সেই বিষয়গুলো সরকারের যদি দায়িত্ববোধ না থাকে, তাহলে এই রাষ্ট্র কিভাবে টিকে থাকবে এটা আমাদের বোধগম্য নয়।”
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা সবাই হাত বাড়িয়ে আছি, আমরা সবাই উদ্যোগী আছি। তারপরেও তারা বলছেন যে আমরা না কি দায়িত্বজ্ঞানহীন-কাণ্ডজ্ঞানহীনের মতো কথা বলছি। কোথায় দেখালেন তারা এসব?
“আমরা তো ২৭টা দফা দিয়েছি। তার বর্ণনা দিয়েছি। প্রত্যেকটা বিষয় যুক্তসঙ্গতভাবে বলেছি। আজকে সরকার দুর্ভাগ্যজনকভাবে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে এই করোনাভাইরাসকে মোকাবেলার জন্যে। যেই মানসিকতার দরকার ছিল, সেটাকে তৈরি করবার জন্য তারা ব্যর্থ হয়েছে বলে আমার কাছে মনে হয়েছে।”
‘পূর্ণ লকডাউন দরকার’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশে কোভিড-১৯ রোগের মহামারী ঠেকাতে এখন পরিপূর্ণ লকডাউন প্রয়োজন।
“আমি তো মনে করি যে, পরিপূর্ণ লকডাউন করা উচিত। দ্যাট ইজ দ্য অনলি এনসার। যে ভয়াবহতা আসছে, এখনও রিয়েলাইজ করতে পারছে না তারা (সরকার)।
“অলরেডি কিন্তু গতকালের চেয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। এটা জ্যামিতিক হারে বাড়বে।”
তিনি বলেন, “আজকে একটা পত্রিকায় রিপোর্ট বেরিয়েছে যে, ৮৭% হাসপাতালে সাধারণ চিকিৎসা নেই। যেমন আপনার এপেনডিসাইটিস হল, আপনি চাইবেন যে, ডাক্তারের কাছে গিয়ে আলট্রাসেনোগ্রাম করা হোক, সেটা আপনি পাবেন না। আপনার হার্ট এ্যাটাক হল, হাসপাতালে গেলে চিকিৎসা পাবেন না।
“এই বিষয়গুলোতে সরকার নজর দিচ্ছে বলে আমরা দৃশ্যমান কিছু দেখছি না। অন্যদিকে সমন্বয় কোনোখানেই নেই। এই বিষয়গুলো জনগণের মধ্যে অনাস্থা তৈরি করেছে এবং প্রথম দিক থেকে প্রত্যেকটা ইস্যুতে কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের আস্থা এই সরকারের ওপর থেকে প্রায় চলে গেছে।”
এই সঙ্কট মোকাবেলায় বিএনপি নেতারা ঘরে বসে শুধু অভিযোগ করছে, তাদের কোনো ভূমিকা নেই- আওয়ামী লীগ নেতাদের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, “দায়িত্ব তো সম্পূর্ণ সরকারের।
“ইতোমধ্যে আমাদের নেতা-কর্মীদের যতটুকু সম্ভব নিরাপত্তার মধ্যে থেকে কর্মজীবী দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তারা খাবার দিচ্ছেন, তারা মাস্ক দিচ্ছেন। সিলেটে মেয়র জানেন যে, তিনি বৃহৎ আকারে খাবার নিয়ে মানুষের পাশে যাচ্ছেন, প্রত্যেকটা জেলা, প্রত্যেকটা উপজেলা, প্রত্যেকটা ইউনিয়নে আমাদের নেতা-কর্মীরা কাজ করছে। ফলে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য সঠিক নয়, এসব অলীক অভিযোগ।”
“গতকাল আমরা মহাদুর্যোগ মোকাবেলায় অর্থনৈতিক কিছু আবেদন রেখেছি। তার প্রতিউত্তরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পা্দক সাহেব যে বক্তব্য দিয়েছেন, যে মন্তব্যগুলো করেছেন যে, এটা আশা করি নাই যে, তার মতো একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব উনি এই ধরনের মন্তব্য রাখবেন,” বলেন ফখরুল।