পাশাপাশি ১১ এপ্রিলের পরও যদি গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত আসে তারপর থেকে শ্রমিকদের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে দাবি জানাবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।
করোনাভাইরাসের কারণে ‘লকডাউনের’ মধ্যে হঠাৎ কর্মহীন হয়ে পড়া দরিদ্র কর্মজীবী মানুষ যেন টিকে থাকতে পারে, সেজন্য সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি করার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার গণভবনে এক ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা জনগণ, দিনমজুর এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত জনসাধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণে বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি করা হবে।
এর আওতায় সরকার পাঁচ ধরনের কার্যক্রম নেবে।
>> বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ।
>> ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রয়।
>> লক্ষ্যভিত্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ।
>> সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০ উপজেলায় বয়স্ক ভাতা এবং বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীদের জন্য ভাতা কর্মসূচির আওতা বাড়িয়ে শতভাগে উন্নীত করা।
পরিবহন শ্রমিকদের জন্য ১০ টাকা কেজি চাল বরাদ্দ রাখার দাবি জানিয়ে গত ২৭ মার্চ সরকারের কাছে পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন থেকে চিঠি দিলেও এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি জানিয়ে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, “সারা দেশে ২৪৯টি শ্রমিক ইউনিয়ন রয়েছে। ঢাকায় বাস ও ট্রাক টার্মিনালকেন্দ্রিক শ্রমিক ইউনিয়ন ছাড়াও প্রতিটি জেলাতে অন্তত দুটি করে বাস ও ট্রাকের জন্য আলাদা শ্রমিক ইউনিয়ন আছে। এসব ইউনিয়নের অধীনে শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ।”
করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে ১০ টাকা কেজির চাল বিক্রি করা হচ্ছে দরিদ্রদের মাঝে।
সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা ওসমান আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের দাবিটা হল, খোলাবাজারে ১০ টাকা কেজি দরে যে চাউল বিক্রি করা হয় তা যেন জেলার ডিসিদের মাধ্যমে পরিবহন শ্রমিকদের দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। কারণ যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় হাজার হাজার শ্রমিক এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে।”
বাস ও ট্রাক শ্রমিক মিলে সারা দেশে প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “করোনাভাইরাসের কারণে যেদিন থেকে লকডাউন শুরু হল সেদিন থেকে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ। যদিও বলা হচ্ছে মালামাল পরিবহন স্বাভাবিক আছে। কিন্তু যে পরিস্থিতিতে কলকারখানা বন্ধ, বন্দর বন্ধ, আইসিডি বন্ধ। একমাত্র কাঁচামাল ও খাদ্য সরবরাহ ছাড়া অন্য শ্রমিকদের কোনো কাজ নেই, বেতন নেই।”
ওসমান আলী বলেন, “আমরা বলেছিলাম, এই সময়ে প্রণোদনা দেওয়ার দরকার নেই। শুধু ১০ টাকা কেজি যে চাউল সেই চাউল আমরা একটা তালিকা করে দেই সেই তালিকা ধরে যদি আপনারা সরবরাহ করেন তাহলে আমাদের শ্রমিকরা প্রাণে বেঁচে যায়।”
করোনাভাইরাস: সঙ্কট উত্তরণে বাড়ছে সামাজিক সুরক্ষার আওতা
২০১৩ থেকে ২০১৫ সালে বিএনপির আন্দোলনের কারণে ‘সরকারের দুরাবস্থা, সারাদেশ বন্ধ’ তখন পরিবহন শ্রমিকরা দেশকে সচল রেখেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “একথা মনে করিয়ে দিচ্ছি, কিন্তু শ্রমিকদের সাহায্য-সহযোগিতায় সরকার কোনো সময় এগিয়ে আসেনি।
“যদি ১১ এপ্রিলের পরে সরকার গাড়ি চলাচল বন্ধের ফের সিদ্ধান্ত নেয় তখন পরিবহন শ্রমিকদের জন্য সরকার থেকে ত্রাণের ব্যবস্থা রাখতে হবে। তা না হলে তাদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।”
এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে পরিবহন শ্রমিকদের জন্য এখনও কোনো সহযোগিতা না এলেও পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নগুলো ‘সাধ্যমত’ কোথাও কোথাও ১০ কেজি চাল, তিন কেজি আলু, এক কেজি করে তেল, ডাল ও পেঁয়াজ দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে বলে জানান ওসমান আলী।
“আমাদের নিজেদের শ্রমিক ইউনিয়নগুলো যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছে তা তো অপ্রতুল। একটা শ্রমিক ইউনিয়নের যদি পাঁচ হাজার শ্রমিক থাকে তাদের মধ্যে আর কয় জনকেই বা দেওয়া সম্ভব?”
শনিবার রামপুরায় আবু হানিফ নামে সিএনজি অটোরিক্সার এক চালক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এতদিন ধরে গাড়ি চালাতে পারিনি, এখন আর্থিক অনটনের মধ্যে পড়েছি। ১০ তারিখের মধ্যে বাসা ভাড়া দিতে হবে, কিন্তু পকেটে খাবারের টাকাও নাই। এই জন্য গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিলাম, কিন্তু যাত্রী নাই। না জানি এই দশা আর কতদিন ধরে চলে।”
এই ‘দৈন্য দশায়’ সরকারি যে কোনো ধরনের সহযোগিতা পেলে উপকৃত হতেন বলে জানান আবু হানিফ।
ঢাকা জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব সাখাওয়াত হোসেন দুলাল বলেন, “এই ঢাকাতেই সিএনজি অটোরিকশার ৫০ হাজার ড্রাইভার এখন বেকার। গাড়ি চলাচল বন্ধ মানে তাদের কাজ নাই। তারা অনেক কষ্ট করে জীবন যাপন করতেছে।
“আমাদের সবার দাবি, ১০ টাকা দরে ওএমএসের চাল যদি সরকার পরিবহন শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দ দেয় তাহলে এই শ্রমিকরা কিছুটা হলেও উপকৃত হত। এমনিতেই তো তাদের পরিস্থিতি খুবই খারাপ।”