দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শুক্রবারই তাদের বড় অংশ হাঁটা শুরু করেন; শনিবারও পথের শেষ সীমা ছোঁয়ার জন্য অবিরাম হাঁটতে দেখা যায়। এছাড়া যেখানে যেমন যানবাহন পেয়েছেন তাতেই সওয়ার হয়েছেন যে যেমন পেরেছেন।
শনিবার গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও সাভারের পথেই দেশের বৈশেদিক মুদ্রা উপার্জনকারী শ্রমিকদের পদঘাতের শব্দ ধ্বনিত হয়েছে।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে গণপরিবহনসহ প্রায় সব কিছু বন্ধ করে সরকারের জনগণ ‘ঘরে থাকো’ কর্মসূচির শুরুর সময় এসব গার্মেন্টস কারখানাও ৪ এপ্রিল অবদি বন্ধ ঘোষণা করে মালিকদের সংগঠন।
এদিকে, সরকার তার জনগণকে ঘরে রাখার এ কর্মসূচি বাড়িয়ে এর মধ্যে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়ে নেয়। এ সময় খাবার, ওষুধের মত নিত্য প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশের কোথাও আর কিছু খুলতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে-বন্ধ সব বাস-ট্রেন।
তবে ৪ এপ্রিল পর্যন্তই ‘সব নিট গার্মেন্টস’ বন্ধ রাখার নির্দেশে অটল থাকে অন্তত ২৫ লাখ শ্রমিকের রোজগারের প্রতিষ্ঠান দুই হাজার ২৮৩টি কারখানার সংগঠন বিকেএমইএ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও ময়মনসিংহ প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদে উঠে এসেছে এ চিত্র।
মুন্সীগঞ্জ
শনিবার দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে হাজার হাজার মানুষকে ঢাকার দিকে যেতে দেখা গেছে। লঞ্চ ও স্পিডবোট বন্ধ থাকায় যাত্রীরা ফেরিতে পারাপার হন। ফলে করোনাভাইরাস রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার আহ্বানের তোয়াক্কা না করে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য মরিয়া যাত্রীদের ফেরিতে ঠাসাঠাসি করতে দেখা যায়।
মাওয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জিএম আশরাফুল কবির বলেন, “ঢাকায় কিছু গার্মেন্টস খোলার কারণে লোকজন রাজধানীতে ফিরে আসতে শুরু করেছে।”
লোকজন ফেরিতে করেই পার হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এ চাপ সকালের দিকে আরও বেশি ছিল। লোকজন ঠাসাসাসি করে ওঠার কারণে ফেরিতে যানবাহন উঠার জায়গা থাকছে না।”
দুপুরে শিমুলিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ফেরিতে হাজার হাজার লোক পদ্মা পাড়ি দিচ্ছে। ঢাকামুখী যাত্রীর চাপই ছিল বেশি।
বাসসহ গণপরিবহন না থাকায় ফেরি থেকে নেমে বিভিন্ন যানবাহনে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছেন সবাই। নসিমন, মাইক্রো ও মোটরসাইকেলসহ নানা ছোট ছোট যানবাহন যে যেটা পাচ্ছেন তাতেই চড়ে বসছেন।
তবে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের লৌহজংয়ের মেদিনী মন্ডলে ডলফিন ট্রেনিং সেন্টারের পাশে সেনাবাহিনীর একটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এ চেকপোস্টে কোনো গাড়ি আসলেই সেনাবাহিনীর সদস্যরা তা উল্টোদিকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। তাই এসব যানবাহন লৌহজং-টঙ্গবাড়ী-মুন্সীগঞ্জ-নারায়নগঞ্জ হয়ে ঢাকায় যাচ্ছে। ভেতরের এ সড়কগুলোতে পুলিশ বা ট্রাফিকের তেমন বাধা নেই বলে জানা গেছে।
গাজীপুর
পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার ঘোষণায় হাজার হাজার শ্রমিক গাজীপুরে ফিরতে শুরু করেছে।
শনিবার বিভিন্ন জেলা থেকে দল বেঁধে শ্রমিকদের কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে ছুটতে দেখা গেছে।
গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় তারা পিকআপ, ট্রাক ও রিকশায় চড়ে বাড়ি থেকে আসছেন।
যানবাহন না পেয়ে অনেকে হেঁটে ছুটছেন গন্তব্যের পথে। আবার অনেকে গাড়ি পাওয়ার আশায় বিভিন্ন স্ট্যান্ডে ও পয়েন্টে জড়ো হয়ে অপেক্ষা করছেন দীর্ঘক্ষণ।
গাজীপুরের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ির‘মেঘনা নিট কম্পোজিট’ পোশাক কারখানার সহকারী মহাব্যবস্থাপক (মানব সম্পদ ও প্রশাসন) ইকবাল হোসেন বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের পোশাক কারখানা বন্ধ থাকার নির্দেশনা নাই। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের নির্দেশনা সমর্থন করে এ কারখানাসহ জেলার বেশ কিছু কারখানা বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
“এই কারখানায় তিন সহস্রাধিক শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করে। ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ৫ এপ্রিল থেকে ফের চালু হবে।”
শনিবার দুপুরে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা, রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা, মাওনা চৌরাস্তাসহ বিভিন্ন স্ট্যান্ডে ও পয়েন্টে গিয়ে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ভিড় দেখা গেছে। টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, জামালপুর, শেরপুর অঞ্চলের গ্রামের বাড়ি থেকে সকাল থেকে পিকআপ, ট্রাক ও ভ্যানগাড়িতে চড়ে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার পোশাক কারখানার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।
বিভিন্ন বিভিন্ন স্ট্যান্ডগুলোতে যানবাহনের আশায় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে অগণিত নারী-পুরুষ শ্রমিককে। যানবাহন স্বল্পতার সুযোগে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে পরিবহণ শ্রমিকরা।
কারখানা থেকে তাদেরকে ৫ এপ্রিল কাজে যোগদান করার জন্য ফোন দেওয়া হয়েছে বলে শ্রমিকরা জানান।
ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বড়পুটিয়ার আকরাম হোসেন কাজ করেন গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘেরবাজারের মন্ডল গার্মেন্টস লিমিটেডে।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার তাকে অফিস থেকে ফোন দিয়ে ৫ এপ্রিল কাজে যোগাদান করতে বলেছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। সে অনুযায়ী শনিবার ভোর সাড়ে ৬টায় তিনি বাড়ি থেকে রওয়ানা হন। কোথাও তিনি যাত্রীবাহী বাসের দেখা পাননি। কখনও অটোরিকশা, কখনও সিএনজিচালিত অটোরিকশা, আবার কখনও হেঁটে দুপুর ২টার সময় মাওনা চৌরাস্তা এসে পৌঁছান।
ময়মনসিংহের ফুলপুরের সোনিয়া গাজীপুরের একই পোশাক কারখানার সহকারী অপারেটর।
তিনি বলেন, “শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় স্বামী সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে মুখে মাস্ক লাগিয়ে বাড়ি থেকে রওয়ানা হন কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে। কোনো যানবাহন না পেয়ে প্রথমে হেঁটে, আবার রিকশায় এক হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে দুপুর আড়াইটায় মাওনা চৌরাস্তা এসে পৌঁছেছি। ”
গাজীপুর সদর উপজেলার ইউটা গার্মেন্টেস লিমিটেডের সুইং অপারেটর জহুরা বেগম জানান, তিনি শনিবার ভোর ৬টার দিকে নেত্রকোণার কেন্দুয়ার গ্রামের বাড়ি থেকে রওয়ানা হন।
শেরপুরের শ্রীবর্দী উপজেলার শ্রমিক সুফিয়া খাতুন বলেন, “কারখানা খুলে গেছে তাই যাচ্ছি। আজ কারখানায় উপস্থিত না হতে পারলে যে কয়দিন ছুটি পাইছি সে কয়দিন অনুপস্থিত দেখাবে কর্তৃপক্ষ; যার কারণে অতিরিক্ত টাকা দিয়েই কারখানায় যাচ্ছি।”
মাওনা হাইওয়ে থানার ওসি মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, “করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ট্রাক পিকাপ চালকদেরকে বাধা দেওয়া হচ্ছে। যাত্রীদেরকেও ওইসব পরিবহন থেকে নেমে যেতে বলা হচ্ছে। অনেকে দলবেঁধে হেঁটে গাজীপুর মহানগর ও ঢাকা অভিমুখে চলছেন।”
গাজীপুর শিল্প পুলিশের কাশিমপুর এলাকার ইন্সপেক্টর অপূর্ব বলেন, “এ এলাকার বেশিরভাগ পোশাক কারখানা রোববার থেকে চালু হচ্ছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের কারখানা চালু করলে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো বাধা নেই। তবে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতন থেকে তাদেরকে সামাজিক দূরত্ব ও নিয়মকানুন বজায় রাখার ব্যাপারে শিল্প পুলিশ কাজ করবে।
শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা নাসরিন জানান, সরকারি নির্দেশ অমান্য করে ট্রাক পিকআপে যাত্রী বহন করায় বেশ কয়েকজন ট্রাক চালককে অর্থদণ্ড করে তা আদায় করা হয়েছে।
“আইন শঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সরকারি নির্দেশ বাস্তবায়নেও তৎপর রয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ
গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় ভোগান্তি নিয়ে নারায়ণগঞ্জে রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকেরা কাজে ফিরতে শুরু করেছেন।
শনিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা দেশের গুরুত্বপূর্ণ দুটি মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আসতে দেখা গেছে।
নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক মোল্ল্যা তাসলিম হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সকাল থেকে বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ঢল নামে। তাদেরকে হেঁটে আসতে দেখা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তি নিয়েই পোশাক শ্রমিকেরা ছোট ছোট মিনি পিকআপভ্যান, সিএনজি অটোরিকশা, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশায় করে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে আসতে দেখা গেছে। ছোট ছোট যানবাহনে গাদাগাদি করে তাদেরকে আসতে দেখা গেছে। তবে শ্রমিকদের চোঁখে মুখে ভয় ও শঙ্কা দেখা গেছে। অনেকে করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।
শিল্প পুলিশ-৪ পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আদমজী ইপিজেডর কিছু কিছু কারখানা খুলবে। আর কিছু কারখানা বন্ধ থাকবে। অনেক শ্রমিক এসেছে তারা হয়তো তাদের বাড়িতে এসেছে। রোববার তারা কাজে যোগ দেবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা ও পোশাক শ্রমিকরা বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য উৎপাদন করে শিপমেন্ট না করতে পারলে এয়ার শিপমেন্ট করতে হবে। এতে করে প্রতিষ্ঠানকে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে। এছাড়া নির্দিষ্ট সময়ে কাজে যোগদান না করলে চাকরি হারানোর ভয় রয়েছে। এসব কারণেও ঝুঁকি নিয়ে তারা কাজে যোগ দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইপিজেড এর এক কারখানার কর্মকর্তা বলেন, কিছু কারখানার কাল থেকে খোলার কথা ছিল। তবে বিজিএমইএ আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন; তাই কারখানা চালু হবে কী না তা নিশ্চিত নয়। কারখানা খোলা থাকবে না বন্ধ থাকবে তা রোববার বিষয়টি পরিষ্কার বোঝা যাবে।
মানিকগঞ্জ
শনিবার দুপুরে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় পোশাক শ্রমিকদের উপচপেড়া ভিড় ছিল। সামজিক দূরত্ব রক্ষার নির্দেশনা মানছেন না তারা। সরকারি আদেশ অমান্য করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বিভিন্ন পণ্যবাহী গাড়িতে করে যাতায়াত করেন পোশাকশ্রমিকরা।
বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মহিউদ্দিন রাসেল বলেন, “রোববার থেকে পোশাক কারখানাগুলো খোলা থাকায় কর্মস্থলে যোগ দিতে শনিবার সকাল থেকেই রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া প্রান্ত থেকে ফেরিতে করে পাটুরিয়া ঘাটে আসতে শুরু করেন পোশাক শ্রমিকরা।
“ঠাসাঠাসি করে ফেরিতে করে তারা নদী পার হন।”
ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আব্দুল হান্নান সাভারের আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় একটি পোশাককারখানায় কাজ করেন।
মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় শনিবার দুপুরে তিনি বলেন, “সরকার একদিকে গণপরিবহন বন্ধ করেছে, অপর দিকে পোশাককারখানা খোলা রেখেছে। এতে কর্মস্থলে যেতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। পোশাককারখানা বন্ধ রাখলে এই ভোগান্তির শিকার হতে হতো না।”
কয়েকজন পোশাক শ্রমিক বলেন, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় পাটুরিয়া থেকে ভেঙে ভেঙে ব্যাটারিচালিত হ্যালোবাইক, অটোরিকশায় করে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত এসেছেন। এরপর ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে করে আবার অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে কর্মস্থলে আসতে হয়েছে।
ময়মনসিংহ
গত শুক্রবার সকাল থেকে ময়মনসিংহ ব্রিজের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় হাজারো গার্মেন্টস শ্রমিককে ঢাকার দিকে হেঁটে যেতে দেখা যায়।
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে লকডাউনের মধ্যে ট্রেন-বাসসহ সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকায় নিজের দুটি পা ছাড়া আর কোনো উপায় খুঁজে পাননি তারা-তার উপর ভরসা করেই পাড়ি দিতে নেমেছেন দীর্ঘপথ।
‘করোনাভাইরাসের ভয়ের চাইতে গার্মেন্টসের চাকরি হারানোর ভয় বেশি’-তাই এ ঝক্কি পোহাতে হচ্ছে বলছেন তারা।
গার্মেন্টস খুলছে: ময়মনসিংহ থেকে হেঁটে ঢাকার পথে কয়েকশ শ্রমিক
শুক্রবার ময়মনসিংহ ব্রিজের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কথা হয় শ্রমিকদের কয়েকজনের সাথে।
গাজীপুরের স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টসে কাজ করেন বুলবুল আহমেদ।
এ পোশাক কর্মী বলেন, “৪ এপ্রিল থেকে গার্মেন্টস খোলা হবে। যদি আগামীকাল গার্মেন্টেসে পৌঁছাতে না পারি তাহলে চাকরি থাকবে না।
“অনেকটা বাধ্য হয়েই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছি।”
গাজীপুর জেলার চৌরাস্তায় অবস্থিত এমএম গার্মেন্টস। এ গার্মেন্টসের নারী কর্মী ফারজানা আক্তার জানান, তিনি সপরিবারে ঢাকায় থেকে চাকরি করেন।
তাদের ‘করোনাভাইরাসের ভয়ের চাইতে গার্মেন্টসের চাকরি হারানোর ভয় বেশি,’ বলেন তিনি।
তাই সবার সাথে হেঁটে ঢাকার পথে রওনা হয়েছেন তিনিও।
ময়মনসিংহ থেকে নেত্রকোণা জেলার দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটারের বেশি। সেখান থেকেও রওনা হয়ে আসা এক শ্রমিকের সাথে আলাপ হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের। কখনো রিকশায় কখনো হেঁটে ময়মনসিংহ পর্যন্ত এসেছেন খলিল আহম্মেদ।
গাজীপুরের পিএন গার্মেন্টস কর্মী খলিল বলেন, “ফজরের নামাজের পর নেত্রকোণার ইসলামপুর থেকে রওনা দিয়েছি। রাস্তায় গাড়ি তো নাই, রিকশাও চলছে হালকা হালকা।
“তাই কিছুক্ষণ রিকশায় চড়ে আর কিছুক্ষণ হেঁটেই চলছি।”
পোশাক কারখানায় কাজ করেই তাদের পরিবারের সদস্যদের খাবার জোটাতে হয়।
“কাল গার্মেন্টেসে হাজিরা না দিতে পারলে চাকরি থাকবে না।
“কাল-পরশু বেতনও হবে, তাও পাওয়া যাবে না, তাই পায়ে হেঁটেই ঢাকা যেতেই হবে।”
ময়মনসিংহ থেকে সড়ক পথে ৬৫ কিলোমিটার দূরে শেরপুর জেলা। সেখান থেকে চাকরি বাঁচাতে আসছে ইউসুফ আলী।
নারায়ণগঞ্জের অনন্ত গ্রুগের শ্রমিক ইউসুফ আলী বলেন, “১০ বছর ধরে গার্মেন্টসে কাজ করছি। করোনার মতো এমন দুর্যোগ আর কোনদিন দেখেনি।
“শেরপুর থেকে অনেক কষ্ট করে ময়মনসিংহ পর্যন্ত আসলাম। এখন নারায়ণগঞ্জে পায়ে হেঁটে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় দেখছি না।
“সময় না যেতে পারলে বেতনও তুলতে পারব না।”
রোববার সকালেই কারখানার ফটকে ফটকে জড় হবে তাদের ক্লান্ত এসব মুখ।