সুমন চাকমা নামের ওই শিক্ষার্থী কোথাও চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে গিয়েছিলেন খাগড়াছড়ির ইটছড়ির বাড়িতে। সেখানেই সোমবার সকালে মারা যান শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্নাতক শেষ বর্ষের (২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ) এই শিক্ষার্থী।
সুমনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে তার বাবা সুপেন চাকমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার ছেলেটা চিকিৎসার অভাবে মারা গেল। ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে তাকে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করেছি। করোনার ভয়ে আমার ছেলেকে কোথাও চিকিৎসা দিতে চায়নি, ভর্তি নেয়নি।”
অসুস্থ সুমনের পাশে সবসময়ই থাকতেন একই জেলার শিক্ষার্থী নিখিল চাকমা।
তিনি বলেন, “দুই বছর আগে সুমনের ক্যান্সার ধরা পড়ে। পরে সবার সহযোগিতায় তাকে চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার ডাক্তাররা বলেছেন তার বুকে টিউমার হয়েছে। তারপর ওষুধে অনেকদিন ভালো ছিল।
“মার্চের মাঝামাঝি সময়ে সুমনের শরীরে আবার সমস্যা দেখা দিলে তাকে আমরা ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাই। সেখানকার ডাক্তাররা করোনার ভয়ে তাকে মুগদা হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। সেখানেও চিকিৎসা না দিয়ে আমাদের আইইডিসিআরে যেতে বলে। আইইডিসিআরে গেলে সেখান থেকে বলা হয় তারা শুধু বিদেশিদের দেখেন। পরে হতাশ হয়ে বাড়িতেই অবস্থান করে সুমন। শেষ পর্যন্ত বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে হয়েছে তাকে।”
তবে কবে কোন হাসপাতালে সুমনকে নেওয়া হয়েছিল তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি নিখিল চাকমা।
“মার্চের ১২-১৫ তারিখের মধ্যে হবে। যেহেতু চিকিৎসকরা কোনো প্রেসক্রিপশন দেয়নি, তাই নির্দিষ্ট তারিখও মনে নেই,” বলেন তিনি।
মারা যাওয়ার আগে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘোরার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা ফেইসবুকেও লিখেছিলেন সুমন চাকমা। গত ২৬ মার্চ সুমন তার ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে স্ট্যাটাসে লেখেন, “আমার করোনা হয়নি। অথচ পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে করোনার কারণেই আমাকে মারা যেতে হবে।”
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক সৈয়দা তাহমিনা আখতার বলেন, “সুমনের ক্যান্সার ধরা পড়ার পর আমরা তার চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা করেছি। ভারত থেকে চিকিৎসার পর অনেকদিন ক্লাসও করেছে। সর্বশেষ কেন মারা গেল, সেটা জানিনা। আমরা তার মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত।”
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আলাউদ্দিন আল আজাদ বলেন, “অত আগের ঘটনা আমার মনে নেই, তাছাড়া এ বিষয় কারও কোনো অভিযোগও পাইনি। যদি ডাক্তার দেখানোর জন্য ১০ টাকার টিকেট করেও সেবা পায়নি এমন ঘটে থাকে, তাহলে তার তথ্যপ্রমাণ দিলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।
“তবে আমাদের নীতিমালায় আছে, কোনো রোগীকেই প্রাথমিক চিকিৎসা না দিয়ে আমরা অন্যত্র পাঠাই না।”
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগাযোগ করেও কারও বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
এদিকে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদও (পিসিপি) তার অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে।
পিসিপির কেন্দ্রীয় সভাপতি বিপুল চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক সুনয়ন চাকমা এক শোক বার্তায় বলেন, “চিকিৎসার অভাবে সুমন চাকমার মৃত্যু আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় দেশের মানুষ বর্তমানে কী ভয়ানক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একজন দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধার অকাল মৃত্যু পর্বতের চেয়েও ভারি এবং পীড়াদায়ক। এই ক্ষতি কোনোভাবে পূরণ হবার নয়।”