সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে মসজিদ বন্ধের সিদ্ধান্ত আসার পর দেরিতে হলেও বাংলাদেশ সরকার একই ধরনের নির্দেশনা দিল।
এ আদেশ অমান্য করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ার করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
সোমবার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. সাখাওয়াৎ হোসেন স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৯ মার্চ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডাকে দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমরা মিলিত হয়ে মসজিদে মুসল্লিদের উপস্থিতি সীমিত রাখার বিষয়ে সর্বসম্মত আহ্বান জানিয়েছিলেন।
“তৎপরবর্তীতে পরিস্থিতি দ্রুত ভয়ঙ্কর অবনতির দিকে যাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সর্বোচ্চ পর্যায়ে সকলের সঙ্গে পরামর্শক্রমে” এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
>> মসজিদের ক্ষেত্রে খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেম ব্যতীত অন্য সকল মুসল্লিকে সরকারের পক্ষ থেকে নিজ নিজ বাসস্থানে নামাজ আদায় এবং জুমার জামাতে অংশগ্রহণ এর পরিবর্তে জোহরের নামাজ আদায়ের নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।
>> মসজিদে জামাত চালু রাখার প্রয়োজন হলে প্রতি ওয়াক্তে খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেমসহ সর্বোচ্চ পাঁচজন এবং জুমার জামাতে সর্বোচ্চ ১০ জন শরিক হতে পারবেন।
>> অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের উপাসনালয়ের সমবেত না হয়ে নিজ নিজ বাসায় উপাসনা করার নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।
>> সারাদেশে কোথাও এখন ওয়াজ-মাহফিল, তাফসির মাহফিল, তাবলীগ তালিম বা মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা যাবে না। সবাই ব্যক্তিগতভাবে জিকির ও দোয়ার মাধ্যমে বিপদমুক্তির প্রার্থনা করবেন।
>> অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরা এই সময়ে কোনো ধর্মীয় বা সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে সমবেত হতে পারবেন না।
“সব ধর্মের মূল নীতির আলোকে এবং জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে” এই নির্দেশনা জারি করা হলো জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “উল্লেখিত নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটিকে অনুরোধ জানানো হল। কোন প্রতিষ্ঠানে সরকারি নির্দেশে লংঘিত হলে প্রশাসন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।”
আহমদ শফীর সমর্থন
জামাত ও জুমার উপস্থিতিকে সীমিত
রাখার আদেশ শরীয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে সঠিক ও যথার্থ বলে এতে সমর্থন জানিয়েছেন
হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী।
তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, “ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত জামাত ও জুমার উপস্থিতিকে
সীমিত রাখার আদেশ শরীয়ার দৃষ্টিতে সঠিক ও যথার্থ। তাই সরকার কর্তৃক জারিকৃত
নির্দেশনাকে মূল্যায়ন করা ও তা উত্তমরূপে গ্রহণ করা মানবতার কল্যাণে আমাদের অপরিহার্য
কর্তব্য।”
কুরআনের সুরা বাকারাহ ও সুরা নিসা থেকে দুটি আয়াত উদ্ধৃত করে আহমদ শফী বলেন, “ইসলাম
নিজের বা অন্যের ক্ষতির কারণ হওয়াকে সমর্থন করে না; বরং নিষেধ করে। সর্তকতা ও সচেতনতা ইসলামের
অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যে কোনো আশু ক্ষতি থেকে সতর্ক থাকা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান।”
চলমান সঙ্কটময় পরিস্থিতির বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “বিশ্ব আজ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত।
আমাদের দেশও বর্তমানে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। বর্তমান চিত্র ভয়াবহরূপ নিয়েছে।
“সতর্কতার জন্য
সরকার উলামায়ে কেরামের সাথে পরামর্শ করে, যে কোনো ধরনের বড় জমায়েতকে নিষেধ করেছে। সামাজিক দূরত্ব
বজায় রাখার আদেশ দিয়েছে। জামাত ও জুমার উপস্থিতিকে সীমিত রাখার আদেশ জারি করেছে।
“শরীয়ার
দৃষ্টিতে এসকল সতর্কতামূলক নির্দেশনা সঠিক ও যথার্থ। সরকার কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনাকে
মূল্যায়ন করা এবং তা উত্তমরূপে গ্রহণ ও পালন করা মানবতার কল্যাণে আমাদের অপরিহার্য
কর্তব্য।”
আরও খবর
আপাতত মসজিদ এড়িয়ে চলার পরামর্শ ইসলামি চিন্তাবিদদের
জুমার নামাজে উপস্থিতি সীমিত রাখার আহ্বান
মক্কা ও মদিনায় ২৪ ঘন্টার কারফিউ