এছাড়া রাজধানীসহ নারায়ণগঞ্জ,
মাদারীপুর ও গাইবান্ধা জেলাতে ‘ক্লাস্টার’ (একই এলাকায় কম দূরত্বে একাধিক আক্রান্ত)
ব্যক্তি পাওয়ার তথ্য দিয়েছেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ।
সোমবার নভেল করোনাভাইরাসের
প্রাদুর্ভাবের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানাতে অনলাইন ব্রিফিংয়ে এসে তিনি এসব তথ্য জানান।
পরীক্ষার আওতা বাড়ার
পর দেশে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে; একদিনে নতুন ৩৫
জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২৩ জন।
আক্রান্তদের মধ্যে
গত ২৪ ঘণ্টায় আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে, তাতে দেশে কোভিড-১৯ এ মৃতের সংখা বেড়ে হয়েছে
১২ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের
মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, “এখন পর্যন্ত ১২৩ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
আমার কাছে ১২১ জনের তথ্য আছে।”
এদিন তিনি দেশের ১৫টি
জেলার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।
আইইডিসিআরের হিসাবে গত ২৪ ঘণ্টায় কোন জেলায় কত রোগী:
ক্রমিক |
জেলার নাম |
রোগীর সংখ্যা |
মৃত |
১
|
ঢাকা মহানগরী |
৬৪ |
১ |
|
ঢাকার বিভিন্ন উপজেলা |
৪ |
|
২ |
নারায়ণগঞ্জ |
২৩ |
২ |
৩ |
মাদারীপুর |
১১ |
|
৪ |
চট্টগ্রাম |
২ |
|
৫ |
গাইবান্ধা |
৫ |
|
৬ |
চুয়াডাঙ্গা |
১ |
|
৭ |
কুমিল্লা |
১ |
|
৮ |
কক্সবাজার |
১ |
|
৯ |
গাজীপুর |
১ |
|
১০ |
জামালপুর |
৩ |
|
১১ |
মৌলভীবাজার |
১ |
|
১২ |
নরসিংদী |
১ |
|
১৩ |
রংপুর |
১ |
|
১৪ |
শরীয়তপুর |
১ |
|
১৫ |
সিলেট |
১ |
|
|
|
মোট-১২১ জন |
মোট-২জন |
আবুল কালাম আজাদ বলেন,
“বাংলাদেশের ১৫টি জেলায় কেইস পেয়েছি। ক্লাস্টার আমরা বলব, যেখানে একাধিক ব্যক্তি আছেন
এবং এক জায়গার মধ্যে সীমাবদ্ধ আছেন, সে জায়গাটা। এ ধরনের ব্যবস্থা (ক্লাস্টার) হতে
পারে ঢাকা মহানগরী, নারায়ণগঞ্জ, মাদারীপুর, গাইবান্ধায়।”
নজর নারায়ণগঞ্জে
গত রোববার নারায়ণগঞ্জ
সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীও গোটা সিটি করপোরেশন এলাকা ও সদর উপজেলা লকডাউন
করতে প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে চিঠি দিয়েছেন।
আইভী তার সিটিতে কারফিউ
জারির দাবির পর কড়া অবস্থান নিয়েছে প্রশাসন। এ পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে রোববার রাতে
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলনে কক্ষে জরুরি সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায়
নারায়ণগঞ্জের দুই বাসিন্দা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এখন
নারায়ণগঞ্জের দিকে বিশেষ নজর রাখছে।
আইইডিসিআর পরিচালক
মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সোমবার ব্রিফিংয়ে বলেন, “গত ২৪ ঘণ্টায় যাদের সংক্রমণ আমরা
নিশ্চিৎ করতে পেরেছি তাদের ১২ জন নারায়ণগঞ্জের। নারায়ণগঞ্জে ক্লাস্টার হিসেবে চিহ্নিত
করেছি, সেখানে বেশ কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে ওখান থেকে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে
না পড়ে। পরবর্তীতে রয়েছে মাদারীপুরের এলাকা।”
নারায়ণগঞ্জের দুই রোগীই
হাসপাতালে আসার কিছুক্ষণ পর মারা যান বলে জানান ফ্লোরা।
তিনি জানান, নারায়ণগঞ্জের
যে দুজন মারা গিয়েছেন, সাথে সাথেই তাদের কন্টাক্ট ট্রেসিং শুরু করেছে আইইডিসিআর। এ
পর্যন্ত তাদের কন্টাক্টে যতজন পাওয়া গিয়েছে তাদের সবাইকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা
বলেন, “পুরো নারায়ণগঞ্জকে হটস্পট হিসেবে আইডেন্টিফাই করে সেখানে কোয়ারেন্টিন কার্যক্রমকে
আরও বেশি শক্তিশালী করার জন্য আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। ওখানে প্রশাসন আমাদের
কার্যক্রমের সাথে যুক্ত রয়েছেন। রোগী যখন চিহ্নিত হয় তখন থেকেই আমরা কোয়ারেন্টিন কার্যক্রম
শুরু করি। রোগী জীবিত না মৃত সেটা কিন্তু বিবেচনার বিষয় নয়। কারণ কোয়ারেন্টিন করা হয়
যাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের
মহাপরিচালক জানান, এ পর্যন্ত সারা দেশ থেকে চার হাজার ১১ জন ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ
করা হয়েছে, যার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৬৮টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এ নমুনার সবগুলোই
পরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সেব্রিনা ফ্লোরা জানান,
নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ১২৩ জনের গত ২৪ ঘণ্টায় সে ৩৫ জন আক্রান্ত রোগীর কন্টাক্ট
ট্রেসিং চলছে।
“এদের কারও কন্টাক্ট
ট্রেসিং কমপ্লিট হয়ে যায়নি। যারা মিসিং কন্টাক্ট তাদের নাম তালিকাভুক্ত থাকে। ১২৩ জনের
মধ্যে বিভিন্ন রকমের কন্টাক্টের সংখ্যা রয়েছে। কন্টাক্ট ট্রেসিং প্রক্রিয়াটি কিন্তু
খুব সহজ নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা সমস্ত কন্টাক্টকে ট্রেস করতে পারি।
“কিন্তু কোনো কোনো
ক্ষেত্রে যেটা হয়….. কেউ যদি গণমাধ্যমের… চলাফেরা করে থাকেন সেই মুহূর্তে
অথবা এমন কোনো অনুষ্ঠানে গেছেন যেখানে বড় সমাবেশ ছিল… সেক্ষেত্রে
কিছু মিসিং কন্টাক্ট থাকে। আমাদের হিসাবের মধ্যে মিসিং কন্টাক্ট কতজন সেটাও আমরা তালিকাভুক্ত
করে সে এলাকাটিও কনটেইনমেন্টের মধ্যে নিয়ে আসি।”
ক্লাস্টার এলাকার বিষয়ে
ফ্লোরা বলেন, “যদি কোথাও একই জায়গায় কম দূরত্বের মধ্যে একাধিক রোগী থাকে তখনই আমরা
সেটাকে ক্লাস্টার হিসেবে আইডেন্টিফাই করে ইনভেস্টিগেশন করে থাকি।”