এই দুই বিশ্বকাপের আয়োজক নির্ধারণে ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত ভোট প্রক্রিয়া নিয়ে
দুর্নীতির অভিযোগ এই প্রথম নয়। নানা সন্দেহ ও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে গত কয়েক বছর ধরে।
তবে এই প্রথম প্রসিকিউটরদের লিখিত আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রে ঘুষের অভিযোগ আনা হলো।
প্রসিকিউটরদের মতে, রাশিয়া ও কাতারের প্রতিনিধিরা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের
ক্ষেত্রে তাদের পক্ষে ভোট আদায়ের জন্য ফিফা নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়েছিল।
এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থাটির মন্তব্য এখনও পাওয়া যায়নি।
তবে এর আগে গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে আসা অভিযোগ নিয়ে ফিফা দৃঢ়ভাবে জানিয়েছিল,
এই দুই বিশ্বকাপের আয়োজক নির্বাচনে কোনোরকম দুর্নীতি হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন
এই অভিযোগ কাতার বিশ্বকাপকে ঘিরে প্রশ্নগুলিকে আরও উচ্চকিত করছে। ২০২২ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে
হওয়ার কথা রয়েছে আগামী বিশ্বকাপ।
ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস এর অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ২০১৮ বিশ্বকাপের স্বত্ব
নির্বাচনে রাশিয়ার পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য ওই সময়ের ফিফা সহ-সভাপতি জ্যাক ওয়ার্নারকে
বিভিন্ন শেল কোম্পানির মাধ্যমে ৫০ লাখ ডলার ঘুষ দেওয়া হয়েছিল।
দীর্ঘদিন ধরে চলা যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তে ওয়ার্নারের বিরুদ্ধে নানা সময়ে আরও
অনেকগুলো অভিযোগ উঠেছে। নিজের জন্মভূমি ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে দুর্নীতির অভিযোগের বিরুদ্ধে
লড়াই করছেন তিনি। এর আগে ২০১০ বিশ্বকাপ দক্ষিণ আফ্রিকায় আয়োজনের পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্যও
ওয়ার্নারকে এক কোটি ডলার ঘুষ দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল।
শুরু থেকেই অবশ্য তার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন
৭৭ বছর বয়সী এই ফুটবল কর্মকর্তা। ওইসময় উত্তর ও মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের
ফুটবল সংস্থা কনকাকাফের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ওয়ার্নার।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস-এর অভিযোগপত্রে ফিফা-২০১০ নির্বাহী কমিটির দক্ষিণ
আমেরিকার তিন সদস্যের বিরুদ্ধেও ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে। ব্রাজিলের রিকার্দো
তেইসেইরা, প্যারাগুয়ের নিকোলাস লেওস ও এই ষড়যন্ত্রে সাহায্যকারী (নাম অজানা) ২০২২ বিশ্বকাপের
স্বাগতিক নির্বাচনে কাতারকে ভোট দেওয়ার বিনিময়ে নাকি ঘুষ নিয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের দুর্নীতি মামলায় লড়াই করতে থাকা লেওস গৃহবন্দি থাকা অবস্থায়
২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুযারি মারা যান। আর তেইসেইরা ২০০৬ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে বিভিন্ন
ফুটবল প্রতিযোগিতার মার্কেটিং ও মিডিয়া স্বত্ব পাইয়ে দেওয়ার জন্য ঘুষ নেওয়ার দায়ে আজীবন
নিষিদ্ধ হয়েছেন।
২০১৪ সালে ওই সময়ের সভাপতি জেপ ব্লাটারের সময়ে ফিফা রাশিয়া ও কাতারকে বিশ্বকাপের
আয়োজক করা নিয়ে সব রকমের দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছিল।
২০১৫ সালের ২৭ মে জুরিখে দুর্নীতির অভিযোগে ফিফার সাত কর্মকর্তা গ্রেপ্তার
হন। তার দুদিন পর ব্লাটার পঞ্চমবারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হলেও কদিন পরেই ফিফাকে ঘিরে
ঘুষ কেলেঙ্কারি ও দুর্নীতির তদন্ত শুরু হওয়ায় পদত্যাগের ঘোষণা দেন ৭৯ বছর বয়সী ব্লাটার।
পরে সেসবে জড়িত থাকার অভিযোগে নিষিদ্ধ হন ১৬ বছরের বেশি সংস্থাটির সভাপতির দায়িত্ব
পালন করা এই কর্মকর্তা।