ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে বেশ কার্যকর হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন কোভিড ১৯-র চিকিৎসায়ও ভালো ফল দিতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ওষুধটির সফলতা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের আশাবাদের মধ্যে ভারতের সরকার সপ্তাহ দুয়েক আগে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল।
কিন্তু ট্রাম্প ‘পাল্টা ব্যবস্থা’ নেয়ার হুমকি দেয়ার একদিনের মাথায়ই মঙ্গলবার ভারত সরকার সুর বদলে ফেলে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
‘মহামারীতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে’ এ ম্যালেরিয়ার ওষুধটি পাঠানো হবে, বলেছে তারা।
এর আগে রোববার ট্রাম্প টেলিফোনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ওষুধ পাঠানোর অনুরোধ করেছিলেন।
“আমি খুব বিস্মিত হবো যদি তিনি ( মোদী) ওষুধটি দিতে রাজি না হন, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের ভালো সম্পর্ক বিদ্যমান,” সোমবার হোয়াইট হাউসের ব্রিফিংয়ে বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ভারত রাজি না হলে তাদের বিরুদ্ধে ‘পাল্টা ব্যবস্থা’ নেওয়ার কথা ট্রাম্প ভাবছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে এ রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমি তাদের এই সিদ্ধান্ত পছন্দ করবো না। এখনো শুনিনি, এটাই তার (মোদী) সিদ্ধান্ত কি না। আমি জেনেছি, তিনি অন্য দেশে এ ওষুধ রপ্তানি বন্ধ করেছেন।
“গতকাল তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমাদের মধ্যে চমৎকার কথাবার্তা হয়েছে, দেখি তিনি দিতে রাজি হন কিনা । অনেক বছর ধরে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বাণিজ্য বিষয়ক সুবিধা নিয়েছে। আমি খুব বিস্মিত হবো, যদি তিনি রাজি না হন।
তার আমাকে এটা বলতে হবে। রোববার সকালে তাকে ফোন করেছিলাম আমি। বলেছি, তিনি যদি ওই সরবরাহ ছাড় করেন, তাহলে আমরা খুশি হবো। তিনি যদি না দেন, তাহলে ঠিক আছে। অবশ্যই, পাল্টা ব্যবস্থা হতে পারে। কেন নয়,” বলেছেন ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এর আগেও হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনকে ‘গেম-চেঞ্জার’ হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করেছিলেন; যদিও ম্যালেরিয়ার এ ওষুধ কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সফল, তা বলার সময় এখনো আসেনি, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভারতের কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) গত মাসে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় স্বাস্থ্যকর্মীদের হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল।
এরপর ২৫ মার্চ নয়া দিল্লি এই ওষুধ রপ্তানি স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয়; যদিও তাতে মানবিক কারণে প্রয়োজনে ওষুধটি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ রাখা ছিল।
মঙ্গলবার সকালে ভারতের সরকার বলেছে, করোনাভাইরাস মহামারীতে ‘মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে’ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন পাঠানো হতে পারে।
“মহামারীর সময় মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমাদের সক্ষমতার উপর নির্ভরশীল প্রতিবেশী দেশগুলোতে উপযুক্ত পরিমাণ প্যারাসিটামল ও হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন পাঠানোর অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই জরুরি ওষুধগুলো আমরা অন্যান্য কিছু দেশেও সরবরাহ করবো, মহামারীতে যারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এ বিষয় নিয়ে কেনো ধরনের রাজনীতির চেষ্টাকে আমরা নিরুৎসাহিত করছি,” বলেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর অনুমান, ট্রাম্পের অনুরোধেই ভারত তাদের নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কথা বিবেচনায় নিয়েই নয়া দিল্লি এখন ‘মহামারীতে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত’ দেশগুলোতে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন পাঠাতে রাজি হয়েছে বলে ধারণা তাদের।
ডিসেম্বরের শেষে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে এই মুহুর্তে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্র। গত সপ্তাহে দেশটির খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) এক বিবৃতিতে হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন ৫০ কেজির বেশি ওজনধারী করোনাভাইরাস রোগীদের জন্য রাষ্ট্রীয় মজুদ থেকে জরুরি ভিত্তিতে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন সালফেট সরবরাহ করতে বলেছে।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ৩ লাখ ৬৮ হাজারের বেশি মানুষের দেহে কোভিড-১৯ ধরা পড়েছে; মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ছুঁইছুঁই।