আইনমন্ত্রী
আনিসুল হক মঙ্গলবার সন্ধ্যায়
এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, “এখন ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদের বিরুদ্ধে রায় কার্যকর করার জন্য আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে গেছে এবং আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেই রায় কার্যকর করা হবে।”
কী
সেই আনুষ্ঠানিকতা? দণ্ড কার্যকর করার আগে কী কী প্রক্রিয়া
নিয়ম অনুযায়ী সারতে হবে? সেজন্য কতদিন সময় লাগতে পারে?
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি প্রয়াত সিরাজুল হকের সহযোগী হিসেবে সেসময় কাজ করেছেন আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল, যিনি এখন দুদকের হয়ে মামলা লড়েন।
বিডিনিউজ
টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করার আগে সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালত থেকে তার নামে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করতে হয়। লাল শালু কাপড়ে মুড়ে সেই মৃত্যু পরোয়ানা পৌঁছে দেওয়া হয় কারাগারে।
“আমরা
যত দ্রুত সম্ভব ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ
আদালত থেকে মৃত্যু পরোয়ানা জারির আবেদন করব। তারপর সেটা কারাগারে যাবে। কারা কর্তৃপক্ষ এরপর কারাবিধি অনুযায়ী দণ্ড কাযর্কর করার উদ্যোগ নেবে।”
বঙ্গবন্ধু হত্যার সাড়ে চার দশক পর খুনি মাজেদ কারাগারে
এত আকাঙ্ক্ষার আসামি এত সহজে ধরা!
১৯৯৮
সালের ৮ নভেম্বর ঢাকার
তখনকার জেলা ও দায়রা জজ
কাজী গোলাম রসুল এ মামলার রায়ে
আবদুল মাজেদসহ ১৫ জন সাবেক
সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাই
কোর্টের রায়ে ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ
বহাল থাকে।
এরপর
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর চূড়ান্ত
রায়ে হাই কোর্টের সিদ্ধান্ত বহাল রাখলে পাঁচ আসামি রিভিউ আবেদন করেন।
তা
খারিজ হয়ে যাওয়ার পর ২০১০ সালের
২৮ জানুয়ারি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে আসামি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), এ কে বজলুল
হুদা ও এ কে
এম মহিউদ্দিনের (আর্টিলারি) মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত
আসামিদের মধ্যে আবদুল মাজেদ ছাড়াও খন্দকার আবদুর রশিদ, এ এম রাশেদ
চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি
নূর চৌধুরী, আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম
উদ্দিন খান সে সময় পলাতক
ছিলেন। মঙ্গলবার ভোরে মাজেদকে গ্রেপ্তার করার পর আদালতের মাধ্যমে
তাকে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দায়ে ফাঁসির রায় মাথায় নিয়ে পলাতক আবদুল মাজেদকে গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার কারাগারে পাঠানো হয়।
এতদিন
পলাতক থাকা মাজেদ কী এখন মৃত্যুদণ্ডের
রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন?
এর
উত্তরে আইনজীবী কাজল বলেন, “সে সময় অনেক
আগেই পার হয়ে গেছে। আপিল করতে বিলম্বের জন্য কোনো যৌক্তিক কারণ মাজেদ দেখাতে পারবেন না। সুতরাং কোনো সুযোগ তিনি পাচ্ছেন না।”
তবে
সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করে ফাঁসির দড়ি এড়ানোর একটি চেষ্টা তিনি করতে পারবেন, তা হল রাষ্ট্রপতির
কাছে প্রাণভিক্ষা।
আদালত
মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে কারাগারে পাাঠালে কারা কর্তৃপক্ষ তা আসামিকে পড়ে
শোনাবে। তখন আসামি বা তার পরিবারের
সদস্যরা রাষ্ট্রপতির কাছে তার প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন।
কারা
বিধিতে প্রাণভিক্ষার আবেদন করার জন্য ৭ থেকে ২১
দিন সময় বেঁধে দেওয়া রয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর
খুনি আবদুল মাজেদ অপরাধের জন্য ক্ষমা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন না করলে বা
তার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে কারা কর্তৃপক্ষের সামনে দণ্ড কার্যকরে আর কোনো বাধা
থাকবে না।