২০১১ সালের থ্রিলার ছবি ‘কন্টেইজন’ এর কাহিনির সঙ্গে বর্তমান করোনাভাইরাস মহামারীর অদ্ভুত মিল রয়েছে।
স্টেভেন সডেরবার্ঘের এই ছবিতে দেখানো হয়, এশিয়া থেকে ছড়িয়া পড়া এক ভাইরাসের কারণে শ্বাসকষ্ট এবং জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সারা পৃথিবীর মানুষ মারা যেতে থাকে। ভাইরাসের ছড়িয়ে যাওয়া ঠেকাতে পৃথিবী জুড়ে শুরু হয় ‘আইসলেইশন’ এবং ‘লক ডাউন’।
সেই ছবির পাত্রপাত্রীরা অভিনয়ের অংশ হিসেবে মহামারী এবং স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে বিশেষ শিক্ষাও লাভ করে।
আর সেই তথ্য জানার পর কলাম্বিায়া’র ‘মেইলম্যান স্কুল অফ পাবলিক হেল্থ’ এর পক্ষ থেকে কন্টেইজন ছবির শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রস্তাব দেওয়া হয় করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো ভিডিও বার্তা দিতে চায় কিনা?
প্রস্তাব কেউ ফিরিয়ে দিতে পারেননি। তাই তো ভিডিও বার্তা দিতে এগিয়ে আসেন ম্যাট ডেমন, কেট উইন্সলেট, জেনিফার এহলে এবং লরেন্স ফিশবার্ন।
বিবিসি’র একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষকদের সহযোগিতায় এই ভিডিওগুলো তৈরি করা হয়। একেকজন শিল্পী একেক বিষয়ের ওপর কথা বলেন। আর কলাম্বিয়া পাবলিক হেল্থ এর অফিশিয়ার টুইটার পেইজে এইসব ভিডিও প্রকাশ করা হয়।
ভিডিও বার্তায় কেট উইন্সলেট বলেন, “এমন ভাবে হাত ধোবেন যাতে মনে হয় আপনার বেঁচে থাকা এর ওপরেই নির্ভর করছে।”
ছবিতে তিনি মহামারী বিশেষজ্ঞ হিসেবে অভিনয় করেন।
করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করার পর থেকে ‘কন্টেইজন’ আবার ‘আই টিউন্স ফিল্ম’ তালিকায় শীর্ষে চলে আসতে থাকে।
আর এই বিষয়ে ম্যাট ডেমন বলেন, “প্রচুর পরিমাণে ডাউনলোড হওয়ার একটাই কারণ, ছবির মতো আমরা এখন একই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।”
ডেমন ‘কন্টেইজন’ ছবিতে যে চরিত্রে অভিনয় করেন সেটাতে দেখানো হয় প্রাকৃতিকভাবেই তার শরীরে সেই ভাইরাস থেকে রক্ষা করার প্রতিরোধ ব্যবস্থা রয়েছে।
সেই কথা তুলে ধরে ডেমন বলেন, “বাস্তবে আমি তা নই। বরং বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজেকে সুরক্ষার জন্য একা থাকছি। আপনিও তাই করুন।”
“এর মানে অন্য মানুষের কাছ থেকে ছয় ফিট দূরত্বে থাকুন। এর মানে দলবেঁধে ভিড় করা যাবে না। এবং এর মানে ঘরে থাকুন কিংবা সরকারীভাবে কোনো জায়গায় আশ্রয় নিতে বললে সেখানে চলে যান।”
লক্ষণ দেখা দেয়নি বা অল্প লক্ষণ দেখা দিচ্ছে এরকম মানুষও করোনাভাইরাস অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারে।
এই বিষয়টা উল্লেখ করে ডেমন আরও বলেন, “এমনকি তাদের যদি স্বাস্থবান মনে হয়, বা নিজেকেও সুস্থ মনে হয় তারপরও কোনো সুযোগ নেওয়ার কারণ দেখি না।”
“যতবার এই ভাইরাস আপনার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে ততবারই তিন-চারজন আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। তাদের মাধ্যমে আরও অনেকজনের মধ্যে ছড়িয়ে যেতে থাকবে। আর একজন থেকে একশজনের মধ্যে, সেখান থেকে হাজার জনের মধ্যে ছড়িয়ে যেতে যেতে বর্তমান পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছে।”
‘কন্টেইজন’ ছবিতে চিকিৎসকের ভূমিকায় অভিনয় করা লরেন্স ফিশবার্ন বলেন, “গুটিবসন্ত এবং পলিও’র সময় যেভাবে পৃথিবীর মানুষ ছিল, কভিড-১৯ এখন আমাদের সেভাবেই থাকতে শেখাচ্ছে।”
“সহজে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় হতে পারে যদি মনে করেন আপনি ইতিমধ্যেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গেছেন।”
এই সময়ে মানসিক সমস্যাও অনেকটা ভাইরাসের মতো- মন্তব্য করেন ‘কন্টেইজন’ ছবিতে ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারকের ভূমিকায় অভিনয় করা এহলে।
“ভয় এবং ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার কারণে মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর এই সমস্যার প্রতিকারের জন্য শান্ত থাকা এবং সাধারণ কাণ্ড-জ্ঞানই যথেষ্ট; কোনো বৈজ্ঞানিকের দরকার নেই।”