স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এই কমিটি করে তাদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী কষ্টে থাকা মানুষগুলোর ঘরে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার সকালে গণভবন থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন, “আমাদের সামাজিক সুরক্ষার কাজগুলো অব্যাহত থাকবে। কিন্তু তার বাইরে যেই শ্রেণিটা কাজ করে খেত কিন্তু এখন সেই উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে সেই শ্রেণিটা যেন কষ্ট না পায়। তাদেরকে খুঁজে বের করা, তাদের তালিকা করা। আমি অনুরোধ করব, এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
প্রতিটি এলাকার সংসদ সদস্য, চেয়ারম্যান, মেয়র, কমিশনারদের নিয়ে কমিটি গঠন করে এই তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রতিটা ইউনিয়নে একটা ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটি থাকবে এবং সেই কমিটি আমরা ভিজিএফ, ভিজিডি যাদের দেই তাদের জন্য না। তাদের তো তালিকা আছেই। তাদের বাদ রেখে বা সরকারের ভাতা যারা পাচ্ছে এর বাইরে যেই শ্রেণিটা,
যারা নিজেরা খেটে খেত, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, চায়ের দোকানদার এমন অনেক ধরনের মানুষ কিন্তু জীবন জীবিকা করে খেত তাদের একটা তালিকা করতে হবে।
“সকলে মিলে এই তালিকাটা এমনভাবে করা যেন সত্যিকার যার অভাব রয়েছে, কষ্ট পাচ্ছে তাদের তালিকাটা যেন হয়। তাদের কাছে যেন সাহায্যটা পৌঁছায়।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকে হাত পাততে আসবে না, অনেকে চাইতে পারবে না। তাকে মুখ বুজে কষ্ট সহ্য করতে হবে।
“তারা যেন কষ্টে না থাকে তাদের বাড়িতে বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সেই ক্ষেত্রে আপনারা প্রশাসন থেকে উদ্যোগ নেবেন। আমাদের জনপ্রতিনিধিরাও সেখানে থাকবেন প্রত্যেকটা এলাকার। পাশাপাশি আমাদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা থাকবেন।”
তিনি বলেন, “বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ মুক্তিযোদ্ধা ভাতা সেগুলো অব্যাহত থাকবে। কিন্তু এর বাইরে যারা হয়ত ভাতাপ্রাপ্ত না অথবা আমরা যে চাল দেই, ৫০ লক্ষ মানুষের রেশন কার্ড আছে তাদেরকে তো আমরা চাল দেবই, কিন্তু তার বাইরেও যারা অন্তত অনুদান নেবে না, কিন্তু এরা কিনে খেতে চায় তাদের জন্য চালের ব্যবস্থা করতে হবে।
“একেবারে নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্তের মধ্যে পড়ে কিন্তু উপার্জন তো করতে পারছে না। তাদেরকেও ১০ টাকা কেজি যে চাল এই রেশন কার্ডটা তাদের জন্যও করে দিতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “আমাদের কিছু কিছু মানুষের অভ্যাস এত খারাপ আছে দেখা গেল ওগুলো কিনে নিয়ে নয় ছয় করে ফেলছে। ঠিক সুনির্দিষ্ট লোকটার কাছে পৌঁছাচ্ছে না। কাজেই আমরা যদি এখনই তাদের জন্য কার্ড তৈরি করে দেই, এখন সবারই আইডি কার্ড আছে। কাজেই আমরা যদি কার্ড করে দেই কার্ডের মাধ্যমে সকলের কাছে আমরা স্বল্পমূল্যে খাদ্য সামগ্রীটা পৌঁছে দিতে পারব।
“এই তালিকাটা থাকলে সুবিধা হবে সঙ্গে সঙ্গে আমরা তাদেরকে জানতে পারব এবং তাদের হাতে পৌঁছে দিতে পারব।”
নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে চলমান লকডাউনে নিম্নবিত্ত মানুষের কষ্টের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছে না, মানুষ যে কাজ করে খেত সেই কাজ করে খেতে পারছে না। তাদের জীবন জীবিকার পথ অনেকেরই বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।
“যারা দিন আনি দিন খাই সেই ধরনের যারা, ছোটখাটো ব্যবসা-বাণিজ্য করে যারা খেত, অল্প পুঁজির সামান্য কিছু টাকা কামাই করত তাদের কাজগুলো বন্ধ হয়ে আছে। এই ধরনের বহু লোক কিন্তু এখন নানা ধরনের কষ্ট সহ্য করছে।
“আমাদের সাধ্যমতো আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা ১০ টাকায় চাল বিতরণের ব্যবস্থা করেছি। আমরা বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।”