বাগআচড়া ইউনিয়নের ১৬৯৩ পরিবারকে খুঁজে এসব পণ্য বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন
ইউপি চেয়ারম্যান ইলিয়াছ কবির বকুল।
পরিষদের সচিব এসএম শরিফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,
বুধবার পর্যন্ত সরকারি ত্রাণের অনুদান পেয়েছেন ১৮০টি পরিবার্। মাসিক হিসাকে ৩০ কেজি
চাল পেয়েছে ৩০৮টি পরিবার। এছাড়া চেয়ারম্যানের নিজের ব্যক্তিগত অর্থ থেকে ১২০৫টি
পরিবারকে নিত্যপণ্য দিয়েছেন।
শরিফুল ইসলাম আরও বলেন,প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শার্শা
উপজেলার বাগআচড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইলিয়াছ কবির বকুল বিভিন্ন গ্রামে
ভ্যান-রিক্সাচালক ও নিম্ন আয়ের মানুষের বাড়িতে যেয়ে তাদের হাতে এ অনুদান তুলে
দিচ্ছেন।
বাগআচড়া ইউনিয়নের জামতলা বাজারের চায়ের দোকানদার আব্দুল মজিদের
ছেলে বুলবুল হোসেন (৪০) বলেন, “করোনার জন্যি চার দোকান ১০দিন ধরে বন্ধ। এর
উপর ভরসা করে সংসার চলত। আয় না থাকায় না খেয়ে মরতি হতো; কিন্তু হঠাৎ রাতে দেখি চেয়ারম্যান এসে হাজির।
তিনি খাদ্যসামগ্রীর একটা প্যাকেট দিয়ে বললেন, ‘তোমরা ঘরে থাকো, আমি তোমাদের খাদ্য
পৌঁছে দেব।’ তারপর থেকে ঘরে আছি, ভাল আছি।”
টেংরা গ্রামের মৃত আব্দুল অহেদের মেয়ে জমেলা বেওয়া (৬০) বলেন,
“পৃথিবীতে আল্লা ছাড়া আমার দেখার কেউ নেই। বাড়িতি বসা। ঘরে খাওয়ার কিছু নেই। এমন
সময় দেখি ভ্যানে করে চেয়ারম্যান এসে আমার বাড়ি চাল, ডাল, আলু, সাবান দিয়ে
গেল।”
“প্রতিটি প্যাকেটে ১০ কেজি চাল, এক কেজি ডাল, দুই কেজি আলু ও
একটা সাবান রয়েছে।”
বাগআচড়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য টেংরা গ্রামের বাসিন্দা
মোজাম গাজী বলেন, এই ওয়ার্ডে মোট পরিবার ১৪৬৬টি। এর মধ্যে অতি দরিদ্র পরিবার
৩৫০টি, নিম্নবিত্ত ২৫০টি, মধ্যবিত্ত ২৬৬টি এবং বিত্তশালী পরিবার ৬০০টি।
অতিদরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পরিবারের লোকজন বিনামূল্যের এবং ১০ টাকা
কেজি দরের (কার্ডের) চাল পেয়ে থাকে বলে মোজাম জানান।
বিনামূল্যে সরকারিভাবে মাসে ৩০ কেজি চাল পান এমন পরিবারের সংখ্যা
৩৪ এবং মাসে ১০ টাকা কেজি দরের ৩০ কেজি চাল পায় এমন পরিবারের সংখ্যা ২০০ বলে মোজান
জানিয়েছেন।
মোজাম বলেন, “চেয়ারম্যান এ পর্যন্ত ১০৯টি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা
দিয়েছেন। সর্বমোট ৩৪৩টি পরিবার সরকারি ও বেসরকারি খাদ্য সহায়তা পেয়েছে।”
বাগআচড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম খায়রুল বাসার বলেন, ইউনিয়নের
প্রতিটি মসজিদ ও ওজুখানা করোনাভাইরাস জীবণুমুক্ত রাখতে চেয়ারম্যান স্প্রে মেশিন,
ব্লিচিং পাউডার ও সাবান পৌঁছে দিয়েছেন।
শার্শা উপজেলা ক্যামিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সাধারণ সম্পাদক
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বাগআচড়া বাজারকে করোনাভাইরাস মুক্ত রাখতে জীবাণুনাশক স্প্রে
এবং তাৎক্ষণিক কোনো
সিদ্ধান্ত জানাতে স্থানীয় চেয়ারম্যান সমগ্র বাজারটি মাইকের আওতায় এনেছেন। সবসময়
এখান থেকে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে।
চেয়ারম্যান ইলিয়াছ কবির বকুল বলেন, “করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে
ইউনিয়নবাসীকে বাড়িতে থাকার জন্য অনুরোধ করেছি। কর্মহীন ও দুঃস্থ মানুষের তালিকা
তৈরি করে তাদের বাড়ি বাড়ি খাদ্য পৌঁছে দিচ্ছি। সরকারি সহযোগিতা আসতে একটু দেরি হয়
তাই আমি নিজে থেকেই তাদের খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি।”
তিনি আরও বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বাররা এলাকার কর্মহীন, দুঃস্থ, অতিদরিদ্র
এবং অনুদান চাইতে পারে না এমন মানুষের একটি তালিকা তৈরি করেছেন। সেখানে সাড়ে তিন
হাজার মানুষের নাম পাওয়া গেছে, যাদের প্রত্যেকের খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন ৫৫০ জনের একটি তালিকা চেয়েছেন। তাদের খাদ্যও
দুয়েকদিনের মধ্যে পৌঁছে যাবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মন্ডল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর
ত্রাণ তহবিল থেকে প্রথম ধাপে উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ১০০০টি দুস্থ
পরিবারের মাঝে এবং দ্বিতীয় ধাপে প্রতিটি ইউনিয়নে ১০০ জনকে দেওয়ার জন্য এক মেট্রিক টন
ও পৌরসভায় দুই মেট্রিক টন করে চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। এসব খাদ্য সামগ্রী বাড়ি বাড়ি
পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তাকে প্রতিটি ইউনিয়নে এটি তদারকি
করা হচ্ছে।
“আমি নিজে সরকারি ত্রাণের খাদ্য বিতরণ কাজ মনিটরিং করছি।
আমাদের খাদ্যদ্রব্যের কোনো সংকট নেই। কর্মহীন হয়ে পড়া সবার মাঝে খাদ্য পৌঁছে দেওয়া
হবে।”