ক্যাটাগরি

বঙ্গবন্ধু হত্যার দায় স্বীকার করে প্রাণভিক্ষা চেয়েছেন মাজেদ

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী আব্দুল মাজেদ। ছবি: সংগৃহীত

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার আসামি ক্যাপ্টেন (অব.) আব্দুল মাজেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। ঐ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার বিচারিক আদালত তার বিরুদ্ধে জারি করেছে মৃত্যু পরোয়ানা। জারিকৃত ঐ পরোয়ানা ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে লাল কাপড়ে মুড়িয়ে পাঠানো হয়েছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।

কারা সূত্র জানিয়েছে, পরোয়ানা হাতে পেয়ে কারা কর্তৃপক্ষ কনডেম সেলে গিয়ে ফাঁসির আসামি মাজেদকে জিজ্ঞাসা করেন, হত্যার দায় স্বীকার করে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না। জবাবে মাজেদ জানিয়েছেন, তিনি প্রাণভিক্ষা চাইবেন। পরে বিকেলেই তিনি কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন। আজ বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে সেই আবেদন পৌঁছানো হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। এদিকে ফাঁসি কার্যকর করতে ইতিমধ্যে মহড়া শুরু করেছে কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ। কারাগারের বকুল সেলে গতকাল ফাঁসির মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ডের হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ। ঐ রায়ের বিরুদ্ধে পাঁচ আসামির রিভিউ খারিজের পর ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি তাদের ফাঁসি কার্যকর করে কারা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখনো পলাতক রয়েছেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামি। এমতাবস্থায় প্রায় ২৫ বছর পলাতক থাকার পর মঙ্গলবার গভীর রাতে মিরপুরের সাড়ে ১১ নম্বর থেকে মাজেদকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপরই ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করা হলে তাকে পাঠানো হয় কারাগারে। সিএমএম আদালতে হাজিরের পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে মাজেদ জানান, তিনি দীর্ঘদিন ভারতে পালিয়ে ছিলেন। মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে তিনি দেশে ফেরেন।

গতকাল রাষ্ট্রপক্ষ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তারের জন্য জেলা দায়রা জজ আদালতে আবেদন করে। কিন্তু করোনা ভাইরাসজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের সব আদালতে ছুটি চলছে। এমন পরিস্থিতিতে আদালত বসার জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছে লিখিত অনুমতি চাওয়া হয়। এরপরই সুপ্রিম কোর্ট ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালত ও অফিসের ছুটি বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি মাজেদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়।

অনুমতি পেয়ে গতকাল দুপুরে এজলাসে বসেন ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ মো. হেলাল চৌধুরী। এর আগে আদালতে হাজির করা হয় মাজেদকে। এরপরই রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মাজেদকে গ্রেপ্তার দেখানোর পাশাপাশি পরোয়ানা জারির আবেদন জানানো হয়। এরপরই বিচারক ঐ আসামিকে গ্রেপ্তার দেখানোর পাশাপাশি সাজা ও মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন। একই সঙ্গে ফাঁসি বহালে সর্বোচ্চ আদালতের রায় মাজেদকে পড়ে শোনানো হয়। দুপুরে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় মাজেদকে। পরে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয় মৃত্যু পরোয়ানা।

ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল মান্নান বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম কৌঁসুলি আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ নিয়ম অনুযায়ী ঐ মৃত্যু পরোয়ানা আসামিকে পড়ে শোনাবে। তখন সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে আসামি বা তার পরিবারের সদস্যরা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন। কারা বিধিতে প্রাণভিক্ষার আবেদন করার জন্য ৭ থেকে ২১ দিন সময় বেঁধে দেওয়া রয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর খুনি আবদুল মাজেদ অপরাধের জন্য ক্ষমা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন না করলে বা তার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে কারা কর্তৃপক্ষের সামনে দণ্ড কার্যকরে আর কোনো বাধা থাকবে না। ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে এই আইনজীবী বলেন, ঐ সময় অনেক আগেই পার হয়ে গেছে। আপিল করতে বিলম্বের জন্য কোনো যৌক্তিক কারণ মাজেদ দেখাতে পারবেন না। সুতরাং কোনো সুযোগ তিনি পাচ্ছেন না।

ইত্তেফাক/এসআই