ক্যাটাগরি

রাসেলের সঙ্গে ‘যুদ্ধে’ জড়াবে না উইন্ডিজ বোর্ড

গত মাসের শেষ দিকে নিউ জিল্যান্ডে টি-টোয়েন্টি সিরিজের ওয়েস্ট
ইন্ডিজ দলে ছিলেন না রাসেল। ওই সময় তাকে দেখা যায় এলপিএলে কলম্বো কিংসের হয়ে খেলতে।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে জাতীয় দলের প্রতি তার নিবেদন নিয়ে। কোচ ফিল সিমন্স পর্যন্ত
অবাক হয়ে জানান, রাসেলের এলপিএলে খেলার কথা তিনি জানতেন না।

এর আগেও রাসেলকে নিয়ে এরকম বিতর্ক হয়েছে। ২০১৯ সালের অগাস্টে
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল যখন ভারতে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলছে, এই অলরাউন্ডার তখন গ্লোবাল টি-টোয়েন্টিতে
খেলছিলেন কানাডায়। বোর্ডের সঙ্গে দ্বন্দ্বে আগেও লম্বা সময় ছিলেন জাতীয় দলের বাইরে।

তবে এবার কোনো ধরণের দ্বন্দ্বে জড়াবে না দুই পক্ষ, ত্রিনিদাদে
একটি রেডিওকে জানান বোর্ড প্রেসিডেন্ট স্কেরিট।

“ আমি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছি, আন্দ্রে রাসেলের সঙ্গে যুদ্ধে
নেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট। একটি পরিবারের ভরণ-পোষণ করতে হয় রাসেলকে। তার নিজের চাহিদা
আছে। তা যেটাই হোক, সেই চাহিদা নিয়ে আমি প্রশ্ন তুলতে চাই না।”

“ রাসেলকে দুই বছর মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছিল (চোটের কারণে)
এবং তার এই বয়সে, নিজে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে এবং অসাধারণ একজন অ্যাথলেট হিসেবে, আর্থিক
অর্জনের দিকটা যতটা সম্ভব গুছিয়ে নেওয়ার সবটুকু অধিকার তার আছে।”  

সামনে রাসেলকে জাতীয় দলে নেওয়া হবে কিনা, সেটি নির্বাচকদের
ওপরই ছেড়ে দিচ্ছেন স্কেরিট। তবে এবারের ঘটনার কোনো প্রভাব তিনি পড়তে দেবেন না বলে জানালেন।

“রাসেল কি দল নির্বাচনের মানদণ্ড পূরণ করতে পারবে? সেটা নির্ধারণ
করবেন নির্বাচকরা। তবে তারা তাকে দল থেকে বাদ দেওয়ার মতো কোনো শাস্তি দেবেন না। যদি
তাকে দলে নেওয়া না হয়, সেটি হবে ক্রিকেটীয় কারণেই, দলের প্রয়োজনীয়তার দিক থেকে। কিন্তু
এবার নিউ জিল্যান্ডে খেলেনি বলে তাকে আর নেওয়া হবে না, এমনটি নয়। অন্তত আমি যতদিন প্রেসিডেন্ট
আছি, সাধ্যমতো এটি নিয়ে লড়াই করব।”

“ দল নির্বাচনের নীতি লিপিবদ্ধ আছে। সবার কাছেই তা পরিষ্কার।
পাশাপাশি এটিও নিশ্চিত যে, যে নীতি ও মানদণ্ড আমাদের আছে, ক্রিকেটারদের শাস্তির উপকরণ
হিসেবে বা তাদের প্রতি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে আমরা তা ব্যবহার করব না। আগে যেরকম করা
হতো, বলার অপেক্ষা রাখে না, তা ছিল খুব ভীতিকর।”

স্কেরিটের মন্তব্যের আগেই অবশ্য জ্যামাইকার এক টিভি চ্যানেলে
সাক্ষাৎকারে রাসেল দাবি করেছেন, জাতীয় দলের প্রতিই তার নিবেদন সর্বোচ্চ।

“ ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলাই আমার কাছে সবার ওপরে। ওয়েস্ট
ইন্ডিজের হয়ে যতটা নিবেদন ও প্রচেষ্টা দয়ে খেলি, তার ধারেকাছে খেলি না অন্য কোথাও।
অনেক সময় লোকে বুঝতে পারে না, আমার মতো ক্রিকেটারদের ছোটখাটো চোট ও এসবের ভেতর দিয়ে
কতটা যেতে হয়। তারা স্রেফ বাইরে থেকে বিচার করে, তাদের জন্য এটাই খুব সহজ।”

নিউ জিল্যান্ড সিরিজের দল নির্বাচন যখন হয়, রাসেল তখন ব্যস্ত
আইপিএলে। সেখানেও চোটের কারণে কিছু ম্যাচ বাইরে ছিলেন। তার সেরাটা এবার দেখা যায়নি
ভারতীয় এই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে। ওই সময়টায় খুব ভালো মানসিক অবস্থায় ছিলেন না বলেন জানান
রাসেল।

“ চেয়ারম্যান (নির্বাচক কমিটির) যখন আমার সঙ্গে কথা বলেন,
আমি তাকে বলেছিলাম, খুব অগোছালো অবস্থায় আছি। ব্যাটিংয়ের স্টান্স বদলেছি, টেকনিক বদলেছি,
ট্রিগার মুভমেন্ট বদলেছি। আইপিএলে রান করার জন্যই এতকিছু করেছি, কিন্তু কিছুতেই কাজ
হচ্ছিল না। ভয়ঙ্কর চাপে ছিলাম।”

“ তখন ওইরকম মানসিক অবস্থায় নিউ জিল্যান্ড সফরে যেতে চাইনি।
মনে হচ্ছিল, ক্রিকেট থেকে একটু বিরতি দরকার। সিপিএলের পর আইপিএল, জৈব-সুরক্ষা বলয়ে
থেকে থেকে মনে হয়েছিল, এর বাইরে থাকা জরুরি। মাথাটা পরিষ্কার করা প্রয়োজন।”

রাসেল ‘না’ বলার পর তাকে স্কোয়াডে রাখা হয়নি। তবে যখন তিনি
জানতে পারেন, নিউ জিল্যান্ডে কোয়ারেন্টিন শেষে আর সুরক্ষা বলয়ে থাকতে হয় না, তখন তিনি
সিদ্ধান্ত বদলে ফিরতে চেয়েছিলেন দলে। কিন্তু নির্বাচকরা তখন আর আগ্রহী ছিলেন না।

“ নিউ জিল্যান্ডের কথা জানতে পেরে আমি তার সঙ্গে (নির্বাচক
কমিটির প্রধান) যোগাযোগ করে জানাই যে, এখন ফিরতে চাই। কিন্তু তিনি বলেন, ‘দুঃখিত আন্দ্রে,
আমরা তো দল নির্বাচন করে ফেলেছি, সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে।’ তিনি আমাকে আইপিএলের জন্য শুভ
কামনা জানান, আমি তাদের অবস্থান বুঝতে পারি।”