সদর উপজেলার পুরানাপৈল রেল গেইটে গত শনিবারের এ দুর্ঘটনায় অন্তত ১২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আরও তিনজন বাসযাত্রী চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানিয়েছেন জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ড. রাশেদ মোবারক।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার আটুল গ্রামের পল্লী চিকিৎসক আলতাফ হোসেন ও আম্বিয়া খাতুন দম্পতির দুই ছেলে।
বড় ছেলে গ্রামীণ পশু চিকিৎসক সরোয়ার হোসেন (৪০) এবং ছোট ছেলে আরিফুর রহমান রাব্বি (২০) এইচএসসি পাশ করে ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা কোর্সে সদ্য ভর্তি হয়েছিলেন।
আরিফুরকে ভর্তি করিয়ে দুই ভাই বাড়ি ফেরার পথে এই দুর্ঘটনা ঘটে। বাড়িতে বাবা-মা ছাড়াও সরোয়ারের সন্তানসম্ভাবা স্ত্রী ছিলেন তাদের ফেরার অপেক্ষায়।
সারোয়ারের স্ত্রী ইয়াসমিন কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, “পেটের বাচ্চাটা তো বাবার মুখ দেখে যেতে পারল না।
“আমার চার বছরের মেয়ে বাবলী যখন তার বাবার কাছে যাবে বলে বায়না ধরবে তখন ওকে কে বোঝাবে।”
ওই গ্রামের আনোয়ার হোসেন মাস্টার, আব্দুর রহামান, মামুনুর রশিদ বলেন, দুই সন্তান নিয়ে আলতাফ- আম্বিয়ার সুখের সংসার ছিল। এক দুর্ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেল।
আনোয়ার হোসেন মাস্টর বলেন, “আলতাফ ছেলে দুটিকে নিয়ে নানা স্বপ্ন দেখতেন। ছেলে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হলে তার একটি বড় স্বপ্ন পূরণ হবে।”
দুই ছেলেকে হারিয়ে বাবা ও মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন।
আহাজারি করতে করতে আলতাফ হোসেন বলেন, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উপর ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তির জন্য ছোটো ভাই রাব্বীকে নিয়ে সরোয়ার গত বুধবার ঢাকা যান। ভর্তি শেষে দুই ভাই রাতে ঢাকা থেকে বাসে জয়পুরহাট জেলা শহরে ফেরেন। সেখান থেকে হিলিগামী বাঁধন নামের বাসে পাঁচবিবি আসার পথে এ দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তার সন্তানরা।
ছোটো ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হবে; ২৬ ডিসেম্বর তাদের বড় ছেলের স্ত্রীর সন্তান হবে; তারা আবার দাদা-দাদি হবেন; খুব মজা হবে। এমন সব কথা বিড়বিড় করছিলেন আর ডুকরে কেঁদে উঠছিলেন মা আম্বিয়া খাতুন।
এমন শোকে তাদের পাশে সান্ত্বনা দিতে আসা গ্রামবাসীরাও স্তব্ধ প্রায়।