“মশা মশায় গেলেন কোথায়?
উড়ছিলে তো এতক্ষণ
ভীষণ দাপট, কানের কাছে
প্লেনের কী গর্জন।
ভয়টি ছিলো, নাকের মধ্যে
যেতেন যদি সেধিয়ে
বর পালাতো ভুলে গিয়ে
একটু পরে তার বিয়ে।”
কবি ও প্রাবন্ধিক মনজুরে মওলা ১৯৪০ সালের পহেলা অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। পেশাগত জীবনে তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে সব ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছিল আশির দশকে প্রায় ৩ বছর বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে তার পরিচয়।
তার কর্মকালেই ‘একুশ আমাদের পরিচয়’ প্রত্যয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলা যা আজ বিশ্বের দীর্ঘ সময়ব্যাপী চলা বই উৎসব। ‘সুচিত্রা সেনের জন্য’, ‘অল্প একটু রবীন্দ্রনাথ’, ‘বাংলাদেশের কবিতা’, ‘তুমি’, ‘আমি নই’, ‘কবি ও খুনি’ ইত্যাদি তার জনপ্রিয় কিছু বই।
তিনি ছোটদের জন্য দুটি বই লিখেছেন। একটি হল ‘পড়তে চাই গোয়েন্দা গল্প’ (১৯৯৩), আরেকটি ‘বাঘ ভূত বেড়াল ও মশা’। যারা শিশু কিংবা শিশুদের মতো শিশুদের বই পড়তে ভালোবাসে তাদের জন্য এ বই। বইটি ২০০৭ সালে আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়। প্রচ্ছদ করেছেন চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী। ৪৮ পৃষ্ঠার এ বইটিতে মোট ১০টি মজার গল্প রয়েছে। তার মধ্য একটি মজার গল্প ‘সোঁদর বনের বাঘ’।
‘সোঁদর বনের মস্তো বড়ো বাঘ
এমনিতে বেশ ভালো মানুষ,
দিনের বেলায় ঘুমে বেহুশ,
রাতের বেলা ওঠে ভীষণ রাগ।
বাঘ মশাকে মানুষ বলা
কাজটা কি ঠিক হলো?
বলো, তুমি বলো।
শুনলে বাঘের দুঃখ হবে,
খাবার-দাবার পরে রবে;
এ জীবনে মানের চেয়ে
আছে কি তার বড়ো?
বাঘের কথা শুনলে মানুষ
ভয়েই জোড়োসড়ো
মানুষ যারা, আছে তাদের
এমন কালো দাগ?
হতে পারবে কখনও কি বাঘ?
বাঘের বাসা ঝড়-বাদলে
হয় কি টলোমলো?
বলো, তুমি বলো?
করতে পারবে বাঘের মতো
অমন জোরে হালুম?
বাঘের গায়ে শক্তি কত,
হয় কখনও মালুম?
মাঝে মধ্যে শিকার করতে
বেরুতে হয় বাঘকে –
সামলে নিজের রাগকে।
আওয়াজ যেন একটু না হয়,
হরিণ যেন পায় না কো ভয়
মোটে-
হঠাৎ করে এদিক -ওদিক
সে যেন না ছোটে
বাঘ কখনও খায় না তো বাঘ,
যতোই উঠুক না তার রাগ।
মানুষ? সে তো মানুষও খায়-
পথে ঘাটে, ভিড়ে, সভায়,
কিংবা, যখন একা থাকে
সন্ধে বেলা নদীর বাঁকে,
যখন যাকে হাতের কাছে
পায়।
অন্য লোকের প্রাণটি গেলে তার কী এসে যায়?
গোরু ও মোষ, হরিণই যার
দিনে-রাতে মজার খাবার,
বাঘ তো তারই নাম –
শুনলে ছোটে ঘাম।’
এখানে কবি মজার ছলে ছড়ায় ছড়ায় মানুষের বর্বরতা, কঠোরতার গল্প বলেছেন। তিনি বলেছেন মানুষ কখনো বাঘ হতে পারবে না। বাঘ অনেক রাগী হলেও বাঘকে কখনো অন্য বাঘে খায় না, কিন্তু মানুষ মানুষকে খায় বা হত্যা করে।
ছড়া বলার ছলে তার গল্প বলার ভাষা বেশ গাম্ভীর্যপূর্ণ। মজায় মজায় বাস্তবতা পাঠক তার লেখনিতে খুঁজে পায়। ‘বাঘ ভূত বেড়াল ও মশা’ বইটির প্রথম ফ্ল্যাপে লেখা রয়েছে, ‘মশা বিয়ে-বাড়িতে কনেকে কামড়ে দেয়। মন্ত্রী ছুটে আসে, ফায়ার ব্রিগেড ছুটে আসে -এ বিয়ে মশার জন্য ভেস্তে দেয়া যায় না। সোঁদর বনের বাঘ কিন্তু বাঘ খায় না। তাকে মানুষ বললে কি তার মান বাড়ে? ঘোড়ার পিঠে চলতে –চলতে হঠাৎ গাছে উঠে পড়ে। গাছ থেকে পড়ে গিয়ে দেখে, সে টাগের পিঠে। কুকুর যেমন হাম্বা করে, বাঘ করে না। কেন? সবচেয়ে ভালো বই কোনটি? এক বাঘ সব বই –টই ছিঁড়ে ফেলে। যে- সব বইয়ের মুখভার, সেগুলোর কী দরকার?
‘বেড়ালি বেড়াতে এসে দেখে, এ দেশে গাছগুলো ভূতে ভরা। তাদের দেশে, তো ভূত নেই –বরফে সব চাপা পড়ে গেছে। বাঘে আর ভূতে যুদ্ধ লেগে যায়। কাকে দেখে মানুষ বেশি ভয় পায়, এই নিয়ে তর্ক। মশারা ঠিক করে, তারা নাটক করবে। কিন্তু, মেয়ে –মশাদের তো মাথায় চুল নেই – তারা নায়িকা হবে কি করে? বেড়ালরা প্রতিবাদ করে – ভূতদের নিয়ে এতো বই কেন লেখা হবে? লেখকের ঘাড়ে কটা মাথা/ বেড়ালের নামে লেখে/ যা তা!’
লেখক পরিচিতি: শিশু সাংবাদিক, হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |