সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদে
বিএনপির ঘোষিত কালো পতাকা কর্মসূচি চলাকালে গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক
সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই দাবি জানান।
তিনি বলেন, “সীমান্তে
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে বাংলাদেশের নাগরিকদের যে নির্বিচারে হত্যা হতে হচ্ছে,
নিহত হতে হচ্ছে তার প্রতিবাদে আজকে আমরা কালো ব্যাজ ধারণ করেছি। এটা আমাদের একটা প্রতিবাদ।
সেই অনুযায়ী আমিও আজকে এই সংবাদ সম্মেলনে আপনাদের সামনে কালো পোশাক পরিধান ও কালো ব্যাজ
ধারণ করেছি।”
“আমরা এটার (সীমান্ত
হত্যাকাণ্ড) অবসান চাই। অবিলম্বে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করার জন্য সরকার কার্য্কর ব্যবস্থা
গ্রহণ করবেন এটাই আমাদের দাবি।”
বাংলাদেশের সীমান্তে
১৯৭২ সাল থেকে এই পর্যন্ত নাগরিক নিহত হওয়ার পরিসংখ্যান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন,
“বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই সীমান্তে ভারতীয় রক্ষী বাহিনীর হাতে বাংলাদেশের নাগরিকরা
বিনা বিচারে নিহত হচ্ছেন গুলির মাধ্যমে। আমরা যে সংখ্যা পেয়েছি- ১৯৭২ সাল থেকে এখন
পর্যন্ত ১৫১০ জন নাগরিককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তার মধ্যে ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত
৪৩৯ জন রয়েছে।
“জনসংখ্যার অনুপাতে
এই ধরনের লোক নিহত হওয়া বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে খুব একটা অস্বাভাবিক কিছু না। কিন্তু
প্রশ্নটা হচ্ছে যে, সীমান্তে প্রতিবেশী দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর হাতে যখন বাংলাদেশের
নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়-এটা অবশ্যই জাতিসংঘের যে সনদ রয়েছে মানবাধিকারের
তার চরম লংঘন এবং মানুষের যে ন্যূনতম অধিকার রয়েছে বিচার পাওয়ার সেটারও লংঘন।”
মির্জা ফখরুল ইসলাম
আলমগীর বলেন, ভারতের সরকার বা ভারতের জনগণের বিরুদ্ধে তাদের ‘বক্তব্য নয়’।
“আমার দেশের নাগরিকদের
সুরক্ষার বিষয়ে বক্তব্য, তাদের জীবনের প্রশ্নে আমাদের বক্তব্য। এটা সবাই করছেন, দীর্ঘকাল
ধরে করছেন। বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সময় সেগুলো তুলেছে।”
কেউ অপরাধ করে থাকলে
প্রচলিত আইনের মাধ্যমে বিচার করার দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “যদি কেউ অবৈধভাবে
যায় তাহলে তার বিচার হবে, যে আইনের মাধ্যমে এখনও তারা আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন
আহমেদ সাহেবকে ওইভাবে আটকিয়ে রেখেছে। এখন উনি মুক্ত নন কারণ পুরোপুরি আটকানো আছেন।
এখন পর্যন্ত তারা ওই মামলারও নিষ্পত্তি করেননি।
“সেই আইনে তো সীমান্তে
যে বেআইনিভাবে প্রবেশ করছে তাদের বিরুদ্ধে আপনারা ব্যবস্থা নিতে পারেন, আমাদের সরকার
তাদের বিচার করতে পারেন। এই বিষয়গুলো সমাধান হওয়া দরকার। একটা পারস্পরিক মর্যাদার ভিত্তিতে
একটা মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠা খুব জরুরি। কারণ আমরা স্বাধীন সার্বভৌম জাতি। দুঃখজনক
ব্যাপার হচ্ছে যে, এই ধরনের মানসিকতা থেকে আমরা যেটা আশঙ্কা করছি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা
সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।”
সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদে
সোমবার বিএনপি সারা দেশে মহানগর ও জেলা কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন, নেতা-কর্মীরা
কালো ব্যাজ ধারণ ও কালো পোশাক পরেন। নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও গুলশানে
চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।
রোহিঙ্গা সংকট
সরকার রোহিঙ্গা সংকটের
কোনো সমাধান করতে পারেনি মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সেখানে বলা হচ্ছে যে,
এই সমস্যার ব্যাপারে আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলো তারা আমাদেরকেই সমর্থন করছে। ভারতের
কথা বলা হয়েছে। গতকাল দেখলাম তাদের (ভারত) হাই কমিশনার তিনি বলছেন যে, এটা (রোহিঙ্গা
প্রশ্নে) আমরা বাংলাদেশকে সমর্থন করছি, নীরবে থেকে করছি এজন্য যে, তাতে আমাদের বিভিন্ন
রকম ম্যানিপুলেশন করতে সুবিধা হয় বাংলাদেশের স্বার্থেই।
“জানি না আমরা। আজকে
বাংলাদেশ তার সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে কোনো কথা বলবে না। ভারত নীরব থাকবে, চীন উল্টো
ভিটো দেবে। আর বলা হবে যে, আমরা চমৎকার পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করছি, অত্যন্ত সুন্দর পররাষ্ট্রনীতি। সব কিছুর
মূল্যে একটাই, সেটা হচ্ছে- তাদের ক্ষমতা টিকে থাকার জন্য রাষ্ট্রের সমস্ত স্বার্থগুলোকে
জলাঞ্জলি দিয়ে আজকে এই ধরনের নতজানু পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করেছে।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে মির্জা
ফখরুল বলেন, “আজকে ডেইলি স্টারে তার একটা বড় সাক্ষাৎকার প্রকাশ হয়েছে। এটা পড়ে আমার
সন্দেহ লেগেছে- তিনি আসলে কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি কি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
নাকি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী? পুরো সাক্ষাৎকারের মধ্যে তিনি ভারতকে ডিফেন্ড করার চেষ্টা
করেছেন।
“এবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বলছেন তাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, এবার কি সম্মেলনে এটা উত্থাপন করা হয়েছিল?
তিনি উত্তর দিয়ে বলছেন যে, আমরা ভারত সরকারকে এই কথা বার বার বলে বিব্রত করতে চাই না।
আমাদের মধ্যে এত চমৎকার সম্পর্ক, এত ভালো সম্পর্ক সেই সম্পর্ক আমরা নষ্ট করতে চাই না।
এই বিষয়টা (সীমান্ত হত্যাকাণ্ড) নিয়ে তারা কথা বলারও এখন আর প্রয়োজন বোধ করছেন না সেটা
তিনি (পররাষ্ট্র) বোঝাতে চেয়েছেন।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন,
“ভারতের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব এখন সর্বোচ্চ পর্যায় এতে আশ্বস্ত হই। এটা ভালো কথা। এটা
আমাদের জনগণকে একটা নিরাপদ বোধ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। কিন্তু ভারতের সাথে বন্ধুত্ব
প্রমাণ করব কী করে? প্রমাণ কি ভারতের সমস্ত চাহিদা সেগুলো মেটাব আর আমার যে সমস্যাগুলো
সেই সমস্যার একটাও মিটবে না?
“পানির সমস্যা আমাদের
জীবন মরণের, জীবন-জীবিকার সমস্যা। বার বার শুনছি যে, এই সমস্যার সমাধান হবে কিন্তু
হচ্ছে না। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার যে, তাদের তিস্তা নদীর পানির হিস্যা না পেয়েও আমরা
কিন্তু ফেনী নদীর পানি দিয়ে দিয়েছি। আপনারা জানেন যে, ১৫৪টা অভিন্ন নদী রয়েছে। ভারত
প্রত্যেকটা নদীর উজানে বাঁধ দিয়ে দিয়েছে এবং আমাদের সাথে কোনো আলোচনা না করেই।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ
ছোট দেশ হতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। এদেশের মানুষ একটা যুদ্ধের
মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। আমরা উন্নয়নের জন্য গলা ফাটিয়ে কথা বলছি। আমার ন্যূনতম
যে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, আমার জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা রক্ষা করার যে দায়িত্ব
সেই সম্পর্কে উদাসীন থাকছি। অথবা সেই জায়গায় প্রতিবেশীর কাছে মাথা নুয়াচ্ছি। আমাদের
প্রশ্নটা ওই জায়গায়।
“আমরা ভারতকে দোষ দিতে
চাই না, ভারতকে ব্লেইম করতে চাই না বা ভারত সরকারকেও ব্লেইম করতে চাই না। আমাদের সরকার
বলে যারা দাবি করেন যে, সব সময় তারা বলে যে তারা কোনোমতেই কখনোই বাংলাদেশের স্বার্থকে
জলাঞ্জলি দেন না, বাংলাদেশের স্বার্থের মধ্যে তারা কাজ করেন তাদের কাছে আমাদের প্রশ্ন।
“আজকে কোন বাংলাদেশের
স্বার্থে আপনারা সীমান্ত হত্যা সম্পর্কে কোনো রকম কার্য্কর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছেন
না, কোন বাংলাদেশের স্বার্থে আপনারা এখন পর্যন্ত অভিন্ন নদীগুলোর হিস্যার ব্যাপারে
কোনো চুক্তি করতে পারছেন না?”