মঙ্গলবার বেলা পৌনে ২টার দিকে জেলা শহরের শিশু বাগান এলাকায় সরকারি শিশু পরিবারে এই ঘটনা ঘটেছে।
মৃত জোবায়ের খান (১২) নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার পরগাতি গ্রামের ইঞ্জিন খানের ছেলে। সে গোপালগঞ্জ শিশু কল্যাণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র।
গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানাসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
জোবায়েরের সহপাঠী সাজেদুল শেখ বলেছে, মঙ্গলবার বেলা পৌনে ২টার দিকে জোবায়ের গোসল করার জন্য গামছা নিয়ে ২য় তলার গোসলখানার দিকে যায়। ওই সময় সে তার সঙ্গে ছিল। জোবায়ের গোসলখানার পাশের বারান্দায় গ্রিলে বাঁশ ঢুকিয়ে গামছা বাঁধে। এ দিয়ে সে ব্যায়াম করবে বলে জানায়।
“আমার একটা শীতের পোশাক ধূতে হবে বলে আমি আগে গোসলখানায় যাই। তখন জোবায়ের বলে আমার জ্যাকেট ধোয়া হযে গেলে যেন তাকে ডাক দেই। আমি জ্যাকেটের পানি নিঙড়ানোর জন্য জোবায়েরকে ডেকেছিলাম, কিন্তু সে সাড়া দেয়নি। পরে আমি জ্যাকেট নিচ তলায় রোদে শুকাতে দিয়ে এসে দেখি জোবায়ের গলায় গামছা বাঁধা অবস্থায় ঝুলে আছে এবং পা ভাঁজ করা; হাঁটু ফ্লোরের কাছাকাছি।”
সাজেদুল বলে, তখন সে সাগর ও রমজানকে ডাকে। জোবায়েরকে উঁচু করে ধরে রমজান এবং সাজেদুল গামছা কেটে দিয়ে তাকে ফ্লোরে শুইয়ে দিয়ে শিক্ষকদের ডেকে আনে।
জোবায়েরের খালা নাসরিন আক্তার (২০) বলেন, “আমাদের ধারণা এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আমার ভাগ্নেকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তার শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।”
তিনি এই ‘হত্যাকাণ্ডে’ জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
তিনি আরও জানান, জোবায়ের যখন ছোট তখন ওর বাবা তার মাকে ছেড়ে চলে যায়। ওর মা ছেলেমেয়ে নিয়ে অনেক কষ্টে দিনযাপন করেন। সংসার চালাতে না পেরে ছেলেকে ২০১৭ সালে সরকারি শিশু পরিবারে দেন।
সরকারি শিশু পরিবারে উপ-তত্ত্ববধায়ক মোশররফ হোসেন বলেন, “আমি নামাজ পড়ে এসে জানতে পারি আমাদের এখানে একটি ছেলের কোনো একটা সমস্যা হয়েছে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্ ঘোষণা করেন। আমি জানি না এটা কীভাবে ঘটল। তদন্তে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।”
গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, সরকারি শিশু পরিবারে জোবায়ের নামের একটি ছেলে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরিবারের দাবি এটি হত্যা। তবে আপাতত মনে হচ্ছে এটি আত্মহত্যা হতে পারে।
তিনি জানান, ময়নাতদন্তের জন্য গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, শিশু পরিবারের এ ঘটনার কিছু ভিডিও ফুটেজ আছে। পুলিশ ও জেলা প্রশাসন বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। লাশের ময়নাতদন্তের পর ঘটনার মূল কারণ জানা যাবে।
শিশুটির লাশ দাফনের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার পরিবারকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।