ক্যাটাগরি

ব্যাগ ও জ্যাকেট মেরামত করতে

ব্যাগ ও জ্যাকেট ছিঁড়ে যাওয়ার আগেই তা
অব্যবহার্য হয়ে যায় মূলত চেইন নষ্ট হওয়ার কারণে। এক্ষেত্রে নতুন আরেকটি না কিনে অল্প
খরচেই পুরানো ব্যাগ ও জ্যাকেটের চেইনটি ঠিক করিয়ে নিতে পারেন।

বেড়াতে যাওয়া জন্য ভালোমানের একটি ব্যাগ
বা ট্রলি-ব্যাগের দাম নেহাত কম নয়।

ট্রলি-ব্যাগের ক্ষেত্রে চেইন নষ্ট হওয়ার
থেকেও বড় সমস্যা হল চাকা ও হাতল নষ্ট হয়ে যাওয়া। ব্যাগের এমন নানান সমস্যা আছে যা মেরামত
যোগ্য হওয়ার পরেও কোথায় করা যাবে তা জানা না থাকায় জিনিসটি ঘরে ফেলে রেখে নতুন কিনতে
হয়।

জ্যাকেটের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা প্রকট।
কয়েক হাজার টাকা দিয়ে কেনা শখের জ্যাকেটটি হয়ত শুধু চেইন নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে পরতে
পারছেন না। দামি চামড়ার জ্যাকেট যা বছরের পর বছর টিকে আছে ঠিকই কিন্তু চেইন নষ্ট হওয়ার
কারণে ব্যবহার হচ্ছে না।

এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য সোজা চলে
যেতে হবে ঢাকার নিউ মার্কেট কিংবা বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটে।

নিউ মার্কেটের তিন নম্বর গেইট দিয়ে ঢুকে
রূপালি ব্যাংকের এটিএম বুথের পাশেই দুজন মেরামতকারী বসেন। তাদের মধ্যকার একজন মোহাম্মদ
মাসুম। ৩০ বছর বয়সি মাসুম জীবনের অর্ধেকটাই কাটিয়েছেন ব্যাগ নিয়ে।

প্রথমে কাজ করতেন ব্যাগের কারখানায়, পরে
ব্যাগের দোকানের বিক্রয় প্রতিনিধির কাজ করেছেন, এখন নিজেই ব্যাগ মেরামতের দোকান খুলেছেন।
তার মুখোমুখি বসেন আরেকজন, নাম ইমরান।

মাসুমের সঙ্গে কথা বলেন জানা যায়, পুরো
নিউমার্কেট এলাকায় তার মতো আরও পাঁচজন মেরামতকারী আছেন যারা মূলত ব্যাগ মেরামতের কাজ
করেন।

নিউ মার্কেট ও আজিজ সুপার মার্কেটের সকল
ব্যাগের দোকানের টুকটাক মেরামতের কাজগুলো তারাই করেন। দেখালেন আজিজ সুপার মার্কেট থেকে
আসা বিভিন্ন মেরামতের কাজের ছবি ও অর্ডার।

কী কী কাজ করেন জানতে চাইলে বলেন, “ব্যাগের
যে কোনো কাজ করে দিতে পারবো। কাটা কিংবা ছেঁড়া ব্যাগ সেলাই, লক পরিবর্তন, চাকা পাল্টানো,
হাতলের স্প্রিং ও পুশ মেরামত, চেইন কিংবা ‘রানার’ লাগানো ইত্যাদি যে কোনো মেরামতই সম্ভব।”

“মেরামত ছাড়াও যেকোনো ব্যাগের চাকা বা
পুশ স্ট্যান্ড লাগিয়ে নিতে পারবেন। দুইটা চাকা থেকে চারটা চাকা করা, বা চারটা থেকে
দুইটা করতে চাইলে সেটাও সম্ভব। ব্যাগের নাম্বার লকের ‘কম্বিনেশন’ ভুলে গেলে তা ঠিক
করা যায়। আবার লক নেই, এমন ব্যাগেও নতুন করে লক বসাতে পারবেন।”

চাইলে নতুন ব্যাগও বানিয়ে নিতে পারবেন।
দোকানে অসংখ্য ডিজাইনের ব্যাগ পাওয়া যায় ঠিক। তবে আপনার পছন্দের কোনো ব্যাগ যদি ছোট
কিংবা বড় আকারের বানিয়ে নিতে চান তবে সেটাও আমরা করে দিতে পারেন তারা।

কেমন কাজ আসে সেটা জানতে চাইলে মাসুম
জানান, “চেইন, চাকা এবং পুশ হাতল মেরামতের কাজই বেশি আসে। চেইন নষ্ট হয় মূলত ব্যবহার
করতে করতে ‘রানার’ ক্ষয়ে যায়, ফলে তা চেইনকে খাঁজে বসাতে পারেনা। এক্ষেত্রে রানার পাল্টে
নিলেই ঠিক হয়ে যায়। শুধু ব্যাগ নয়, যেকোনো চেইন মেরামত করে দেই আমরা। আবার চামড়ার ব্যাগ
রং করিয়েও নিতে পারবেন।”

“চাকার সমস্যাগুলোর মধ্যে বেশি দেখা যায়
বাইরের রাবার নষ্ট হয়ে যাওয়া, যা সহজেই মেরামত করে দেওয়া যায়। আর চাকা ভেঙে গেলে নতুন
চাকা লাগিয়ে নিতে হবে। ট্রলি-ব্যাগের পুশ হাতলের কাজও আসে প্রচুর।”

খরচের ব্যাপারটা নির্ভর করবে আপনার দামাদামি
করার দক্ষতার ওপর।

চেইন ঠিক করার ক্ষেত্রে দাম নির্ভর করে
কেমন ‘রানার’ নিতে চান তার ওপর। ২০ টাকা প্রতি ‘রানার’ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০০
টাকা পর্যন্ত এই দাম গড়াতে পারে বলে জানান মাসুম।

নতুন পুরানো সব ধরনের ‘রানার’ই ব্যবহার
হয় ব্যাগ ঠিক করতে। পাশাপাশি ‘চেইন অয়েল’ দিয়ে চেইনের দাঁতগুলো এবং পুরো ব্যাগটিকে
পরিষ্কার করে দেওয়া হবে।

ট্রলি-ব্যাগের চাকার দাম শুরু হবে প্রতিটি
৫০ টাকা থেকে, যা ৩০০ টাকা পর্যন্ত গড়াতে পারে। নতুন চাকার দাম বেশি এবং পুরানোগুলো
স্বভাবতই কম।

ট্রলি’র হাতল মেরামতে ব্যাগপ্রতি প্রায়
২শ’ টাকা খরচ হতে পারে।

ব্যাগ সেলাইয়ের মজুরি নির্ভর করবে কতটুকু
ছিঁড়েছে, ব্যাগের কাপড় কী ধরনের, কেমন সুতার সেলাই দিতে হবে ইত্যাদি বিষয়ের ওপর।

লক মেরামতের মজুরিও কাজের জটিলতার উপর
নির্ভরশীল। নতুন বা পুরাতন লক পাওয়া যায় এদের কাছে। তবে পুরো ব্যগ বয়ে বেড়াতে ঝামেলা
মনে হলে শুধু লকটির ছবি তুলে এনে দেখালেও দামের ধারণা নিতে পারবেন।

২শ’ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা দামের লক
দেখা যায় মাসুমের সংগ্রহে, যার বেশিরভাগই পুরানো ব্যাগ থেকে খুলে নেওয়া।

দিন শেষে দামাদামি আপনাকে পটু হতে হবে।
কয়েকটি মেরামতকারীর সঙ্গে কথা বলে, দামাদামি করে তবেই কাজ দিন। নতুন যন্ত্রাংশ কেনার
ক্ষেত্রে ব্যাগ বিক্রির দোকানগুলোতেও চাকা, স্ট্যান্ড, লক ইত্যাদি কিনতে পারবেন।

চেইন নষ্টের ক্ষেত্রে শুধু নষ্টগুলো না
বদলে একেবারে সবগুলো বদলে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। চাকা, হাতল মেরামত করার ক্ষেত্রে
ভালো যন্ত্রাংশগুলো পরিষ্কার করে তেল দিয়ে নিলে সেগুলো স্থায়িত্ব বাড়বে।