ক্যাটাগরি

এমপি পাপুল ও পরিবারের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা সিআইডির

সিআইডির
অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের সহকারী পুলিশ সুপার আল আমিন হোসেন
মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টন থানায় ‘মানিলন্ডারিং’ প্রতিরোধ আইনে এ মামলা করেন।

পাপুল ছাড়াও
তার শ্যালিকা জেসমিন
প্রধান, মেয়ে ওয়াফা ইসলাম, ভাই কাজী বদরুল আলম লিটন, ব্যক্তিগত কর্মচারী মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান মনির, জেসমিন প্রধানের কোম্পানি জে ডব্লিউ লীলাবালী, কাজী বদরুল আল লিটনের মালিনাধীন কোম্পানি জব ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল এবং এই কোম্পানির ম্যানেজার
গোলাম মোস্তফা এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৫-৬জনকে
আসামি করা হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর) আসনের
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে গত ৬ জুন
কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে সে দেশের পুলিশ।

মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের
কর্মীদের শোষণের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে সেখানে যে
মামলা হয়েছে, আগামী ২৮ জানুয়ারি তার রায় হওয়ার কথা রয়েছে।

পাপুল কুয়েতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর গত ১১
নভেম্বর তার এবং তার স্ত্রী সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম,
শ্যালিকা ও মেয়ের বিরুদ্ধে
অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা করে দুদক।

সেই মামলায় আগামী ২৮ ডিসেম্বরের
মধ্যে তাদের বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

সিআইডির করা মামলার এজাহারে
বলা হয়, পাপুল এবং তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে
‘মানবপাচার ও মানি লন্ডারিংয়ের’
অভিযোগ পাওয়ার পর অনুসন্ধান শুরু হয়।

“অনুসন্ধানকালে
জানা যায়, কাজী শহিদুল ইসলাম পাপুল সংঘবদ্ধভাবে তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তি ও সত্তার সহযোগিতায়
মানব পাচারের মাধ্যমে প্রচুর অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।”

‘প্রকৃত
উৎস গোপনের’ জন্য সেই অর্থ বিভিন্ন ব্যাংক
অ্যাকাউন্টে জমা ও
স্থানান্তর করে ‘নামে-বেনামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদে
রূপান্তর’ করার অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়।

এজাহারে বলা
হয়, পাপুলের প্রতিষ্ঠান
‘মারাফিয়া কুয়েতিয়া’ কে অবৈধ ঘোষণা
করে কুয়েত সরকার পাচারের শিকার
১১ জন ভিকটিমকে এ বছরের জুনে
বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়। তারা জানান, কুয়েতে যাওয়ার জন্য
পাপুলের কর্মচারী সাদিকুর রহমান
মনির এবং মগবাজারের জনশক্তি রপ্তানিকারক
এজেন্সি জব ব্যাংক
ইন্টারন্যাশনালের ব্যাংক
হিসাবে তারা প্রত্যেকে ৫ থেকে ৭
লাখ টাকা দিয়েছিলেন।

এরপর আব্দুল
আলীম নামের একজন ভিকটিম গত ৭
জুলাই মতিঝিল থানায় পাপুল ও মনিরসহ অন্য
আসামিদের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা করেন।

অনুসন্ধানে
নেমে সিআইডি জানতে পারে, পাপুলের
ব্যক্তিগত কর্মচারী মনির দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কুয়েতে পাঠানোর জন্য লোক
সংগ্রহ করতেন এবং জনপ্রতি ৫ থেকে
৭ লাখ টাকা করে নিতেন।

এজাহারে
বলা হয়, রূপালী ব্যাংকের রাজারবাগ শাখায় মনিরের একটি হিসাবে ২০১৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত সময়ে কুয়েত যেতে আগ্রহী ব্যক্তিদের দেওয়া
৩৮ কোটি ২২ লাখ টাকা জমা করা হয়েছে, যা পরে পাপুল, জেসমিন এবং ওয়াফার নামে পরিচালিত ব্যক্তিগত ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক
হিসাবে স্থানান্তর ও তোলা হয়েছে।

এর মধ্যে
এনআরবি কমার্শিয়াল
ব্যাংকের হাতিরপুল শাখায় জেসমিন প্রধানের অ্যাকাউন্টে ১১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা স্থানান্তর করা
হয়েছে।

একই
শাখার জেসমিনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান জেডাব্লিউ লীলাবালীর অ্যাকাউন্টে আরও ৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা
স্থানান্তর করা হয়েছে। অথচ জেসমিন প্রধানের সঙ্গে সাদিকুর রহমান মনিরের কোনো ব্যবসায়িক সম্পর্কের তথ্য পাওয়া যায়নি।

মামলায়
বলা হয়, “জেসমিন প্রধানের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে
পরিচালিত ব্যাংক হিসাবসমূহে জমা ও উত্তোলনকৃত সম্পূর্ণ
অর্থ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজী
শহিদুল ইসলাম পাপুল নিয়ন্ত্রণ, ভোগ ও অন্যান্য অজ্ঞাত
স্থানে স্থানান্তর করেছেন মর্মে অনুসন্ধানকালে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়।”

মনিরের
হিসাব থেকে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের গুলশান শাখায় পাপুল এবং তার ব্যবসায়িক
প্রতিষ্ঠান ‘ফোর পয়েন্ট হাউজিং’ এর হিসাবে মোট ১
কোটি ১৮ লাখ টাকা
স্থানান্তরের কথাও মামলায় বলা
হয়েছে।

আর মনিরের
অ্যাকাউন্ট থেকে এনআরবি কমার্শিয়াল
ব্যাংকের হাতিরপুল, শাখায় পাপুলের মেয়ে ওয়াফা ইসলাম এবং গুলশান শাখায় তার মালিকানাধীন কোম্পানি সাফা জেনারেলের হিসাবে মোট ১৫ লাখ টাকা স্থানান্তর করার তথ্য পেয়েছে সিআইডি।

এজাহারে বলা
হয়, মতিঝিল থানার মানব
পাচার মামলায় পাপুলের
ভাই লিটনের কোম্পানি জব
ব্যাংক ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজার গোলাম মোস্তফাকে গ্রেপ্তারের পর তিনি আদালতে
১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
সেখানে জব ব্যাংক
ইন্টারন্যাশনালের মালিক কাজী বদরুল আলম লিটনের ‘নির্দেশে’ মানব পাচারের বিভিন্ন ভিকটিমের কাছ থেকে ৫ থেকে ৭
লাখ টাকা নেওয়ার কথা ‘স্বীকার করেন’।

“এই
টাকা জব ব্যাংক ইন্টারন্যাশনালের
মালিক কাজী বদরুল আলম লিটন ও কাজী শহিদুল
ইসলাম পাপুলকে প্রদানের কথাও তিনি জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন।”

তবে সিআইডির
অনুসন্ধানে ‘মানব পাচারের
আয়’ সরাসরি পাপুলের স্ত্রী সাংসদ
সেলিনা ইসলামের হিসাবে স্থানান্তরিত হওয়ার কোনো তথ্য মেলেনি বলে এজাহারে উল্লেখ করা
হয়েছে।

সিআইডি বলছে,
এ মামলার আসামিরা “সংঘবদ্ধভাবে মানব পাচারের মাধ্যমে অন্যূন ৩৮ কোটি ২২ লাখ ৪০ হাজার ৫৬৭ টাকা অবৈধ আয় করেন। এই আয়ের প্রকৃত উৎস গোপনের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর,
স্থাবর বা অস্থাবর সম্পদে রূপান্তর, ভোগবিলাসে ব্যয় এবং অন্যান্য ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন মর্মে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়।”