ক্যাটাগরি

নিজের মামলায় জামাতার ‘অব্যাহতি চেয়ে’ ফাঁসলেন শ্বশুর

তার জামাতা কাওছার গাজী জামিন চেয়ে হাই কোর্টে একটি আবেদন করেছিলেন, সেখানেই হলফনামা আকারে জলিল দুয়ারীর ওই সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার এ বিষয়ে শুনানির পর বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ জলিল দুয়ারীর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা তথ্য দেওয়ার’ অভিযোগে মামলা করতে নির্দেশ দিয়েছে পটুয়াখালী থানার ওসিকে।

আসামি কাওছার গাজীর পক্ষে এদিন জামিন শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আসাদ মিয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. বশির উল্লাহ।

পরে বশির উল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুই বছর আগে মেয়ে সাথী আক্তারকে হত্যার অভিযোগ এনে পটুয়াখালী সদর থানায় ওই মামলা করেন জলিল দুয়ারী। কাওছারসহ চারজনকে সেখানে আসামি করা হয়।

“অভিযোগ গঠন শেষে মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। এখন ওই মামলা প্রত্যাহার চেয়ে ‘মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন’ উল্লেখ করে জামাতার অব্যাহতি চাইছেন তিনি।”

এই ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “কাওছার গাজীর জামিন আবেদনে জলিল দুয়ারীর হলফনামা দেখে উষ্মা প্রকাশ করেছেন বিচারক। শুনানি শেষে কাওছার গাজীকে অন্তবর্তীকালীন জামিন দিয়ে জলিল দুয়ারীর বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য সরবরাহের অভিযোগে মামলা করতে পটুয়াখালী থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।”

মামলার বিবরণে বলা হয়, ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পটুয়াখালীর পৌরসভার বহালগাছিয়া এলাকায় স্বামীর বাড়িতে মারা যান সাথী আক্তার। এর দুই মাস পর গত বছরের ১২ মার্চ পটুয়াখালী সদর থানায় সাথীর স্বামী কাওছার গাজী, তার বাবা, মা ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেন জলিল।

অভিযোগে বলা হয়, “আসামিরা বসত ঘরের ভিতর সাথী আক্তারকে পিটাইয়া হত্যা করে নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ের মধ্যে গলায় ফাঁস লাগাইয়া ঝুলাইয়া রাখে।”

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির উল্লাহ জানান, মামলা হওয়ার পর পুলিশ কাওছার গাজীকে গ্রেপ্তার করে। তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। তাতে কেবল কাওছার গাজীকে আসামি হিসেবে রেখে বাকিদের অব্যাহতি দিতে বলা হয়। মামলায় সাক্ষী করা হয় ১৯ জনকে।

“নিহতের পাঁচ বছরের মেয়ে আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছে, তাতে তার মাকে নির্মমভাবে হত্যা করার বিবরণ এসেছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টেও এটি ‘হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।”

কিন্তু এখন কাওছার গাজীর ‘অব্যাহতিতে কোনো আপত্তি নেই’ জানিয়ে আদালতে জলিল দুয়ারী যে হলফনামা দিয়েছেন, তাতে বলা হয়, “আমার মেয়ে সাথী আক্তার ও মেয়ে জামাই কাওছার গাজীর দুটি সন্তান রয়েছে। আমার মেয়ে সাথী আক্তার জামাইকে ভুল বুঝিয়া তাহার সাথে রাগান্বিত হইয়া স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে অন্যের দ্বারা প্ররোচিত না হয়ে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে। উক্ত আত্মহত্যায় আমার মেয়ের জামাই ও তার বাবা, মা জড়িত নয়।

“কিন্তু পরবর্তীতে কিছু কুচক্রী লোকের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মামলা দায়ের করি। যাহা সত্য নয়। আমার মেয়ের জামাই দুটি নাবালক সন্তানের পিতা। ওদের ভবিষৎ দেখাশুনার জন্য মামলাটি পরিচালনা করার আবশ্যকতা নাই। এবং মামলা থেকে আসামিকে অব্যাহতি দিলে আমার আপত্তি নাই।”

কাওছার গাজীর আইনজীবী আসাদ মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জলিল দুয়ারী গ্রামের কিছু লোকের প্ররোচনায় জামাতার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছিলেন। বিষয়টি এখন হলফনামা দিয়ে আদালতে স্বীকারও করেছেন। মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলা করার কারণে আদালত কাওছার গাজীর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২১১ ধারায় ব্যবস্থা নিতে পটুয়াখালী থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।”

কাওছার গাজী ও সাথী আক্তারের পাঁচ বছরের মেয়ে হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দিয়ে আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছে, সে বিষয়ে প্রশ্ন করলে আইনজীবী আসাদ বলেন, “সাথী আক্তারের মৃত্যুর পর দুই মাস মেয়েটি তার নানার বাড়িতে ছিল। তাদের শেখানো কথা সে জবানবন্দিতে বলেছিল।”

মামলাটি এখন সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে থাকলেও বাদিপক্ষ সাক্ষ্য দিচ্ছে না বলে জানান আসামিপক্ষের এই আইনজীবী।

এ বিষয়ে আব্দুল জলিল দুয়ারীর বক্তব্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পারেনি।