সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী/ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বেস্ট হোল্ডিংসে বিনিয়োগ অনুমোদনের ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদের সভার কার্যবিরণী এবং বিনিয়োগ ধারাবাহিকতার পরিপূর্ণ চিত্রও জানতে চাওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের বিএসইসি ও বিআইসিএম শাখা থেকে সিনিয়র সহকারী সচিব সিদ্দিকুর রহমানের স্বাক্ষরে ওই চিঠি ব্যাংকগুলোতে পাঠানো হয়।
বেস্ট হোল্ডিংসে রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের ১৮০০ কোটি টাকার শেয়ার রয়েছে। প্রতিটি শেয়ার কেনা হয়েছে ৬৫ টাকা দরে। সব মিলিয়ে বেস্ট হোল্ডিংসে ওই চার ব্যাংকের শেয়ারের পরিমাণ ২৯ দশমিক ৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি কোম্পানি বা রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনো কোম্পানির এখন পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই।
সেই নিয়ম এড়িয়ে বেস্ট হোল্ডিংস সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সরাসরি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ২৮৩ কোটি টাকা তোলার আবেদন করে। এক্ষেত্রে তারা চার সরকারি ব্যাংকের শেয়ার থাকার বিষয়টি যুক্তি হিসেবে দেখায়।
সেই সঙ্গে নির্মাণ খাতের কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগ দিতে নিয়ম শিথিলের সুপারিশ করে তিন মাস আগে অর্থমন্ত্রীর স্বাক্ষরে পাঠানো একটি চিঠিকেও তারা যুক্তি হিসেবে ব্যবহার করে।
তবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পর্ষদ সভায় ওই আবেদন নিয়ে আলোচনার আগেই পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কয়েকটি আইনি প্রশ্ন তুলে বেস্ট হোল্ডিংসের তালিকাভুক্তির সকল কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়।
বিতর্কের মধ্যে অর্থমন্ত্রীর স্বাক্ষরে পাঠানো সেই চিঠির কার্যকারিতাও স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয় মন্ত্রীর দপ্তর থেকে।
বেস্ট হোল্ডিংস: বিতর্কের মুখে অর্থমন্ত্রীর সেই চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত
নিয়ম এড়িয়ে বেস্ট হোল্ডিংসের সরাসরি তালিকাভুক্তির চেষ্টা আটকে দিয়েছে বিএসইসি
পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান নাফিজ সরাফাত কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান।
বেস্ট হোল্ডিংসের প্রসপেক্টাসে ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের কোম্পানি রেইস পোর্টফোলিও অ্যান্ড ইস্যু ম্যানেজমেন্ট এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের নাম আছে। কিন্তু আইসিবি থেকে বলা হচ্ছে, তারা এ বিষয়ে ‘কিছুই জানে না’।
বাজার সংশ্লিষ্ট একটি কোম্পানির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি রেইসের অধীনে থাকা মিউচুয়াল ফান্ডগুলো থেকে বেস্ট হোল্ডিংসে বিনিয়োগ করা হয়েছে প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা।
পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান নাফিজ সরাফাত কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান। সম্প্রতি তিনি গণমাধ্যমেও বিনিয়োগ করেছেন এবং একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি হয়েছেন।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে চার ব্যাংকে পাঠানো চিঠির বিষয়বস্তু অংশে বলা হয়- “জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত (১) লা মেরিডিয়ান হোটেলকে সরকারি কোম্পানির তকমা দিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে পাশ কাটিয়ে সরাসরি তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নেওয়া এবং (২) হোটেল লা মেরিডিয়ান কাণ্ডে জালিয়াতির ঘটনার প্রতিবেদন” প্রসঙ্গে।
চিঠিতে একটি জাতীয় দৈনিকের ‘লা মেরিডিয়ান কাণ্ড’ শীর্ষক প্রতিবেদনের উল্লেখ করে বলা হয়, “সংবাদটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নজরে এসেছে। উক্ত সংবাদের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ এ বিভাগকে অবহিত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হল।”
চিঠিতে যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে-
# লো মেরিডিয়ানের স্বত্বাধিকারী বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড-এ সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংকের বিনিয়োগের ধারাবাহিকতার পরিপূর্ণ চিত্র
# ওই বিনিয়োগ অনুমোদনের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ সভার কার্যবিবরণী
# প্রতিটি শেয়ারে ৬৫ টাকা দরে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যৌক্তিকতার (Financial Appraisal) এর পরিপূর্ণ বিবরণ
# আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টকে ইস্যু ম্যানেজার নিয়োগের বিস্তারিত বিবরণ
যোগ্য নিরীক্ষকের তালিকা থেকে ৩৬ অডিট ফার্ম বাদ
বেস্ট হোল্ডিংস: ‘না জানিয়েই’ সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ইস্যু ম্যানেজার
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি কোম্পানির প্রাপ্য সুবিধায় বেসরকারি বেস্ট হোল্ডিংসকে স্টক এক্সচেঞ্জে সরাসরি তালিকাভুক্ত করে ‘প্রভাবশালী একটি মহল’ বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করছিল, যা নিয়ন্ত্রক সংস্থার দ্রুত হস্তক্ষেপে থামানো গেছে।
আর যে কৌশলে ‘একটি প্রভাবশালী মহল’ বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেডকে সরাসরি তালিকাভুক্ত করতে চেয়েছিল, তাতে ‘সীমাহীন জোচ্চুরির’ ঝুঁকি দেখতে পাওয়ার কথা বলেছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও তালিকা বহির্ভূত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষায় নিয়োজিত অডিট ফার্মের তালিকা থেকে সোমবার ৩৬টি ফার্মকে ‘অযোগ্য’ বিবেচনা করে বাদ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেডের নিরীক্ষা ও পুনর্মূল্যায়নের কাজ করে দেওয়া আর্টিজান চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ও মাহফেল হক অ্যান্ড কোং এর নামও রয়েছে বাদ পড়া ফার্মের তালিকায়।