গত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকাশিত অডিট আপত্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিধি বহির্ভূতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম কেনার জন্য খুলনা শিপইয়ার্ডকে কার্যাদেশ এবং ২৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা অগ্রীম প্রদান করা হয়। মৌখিক নির্দেশে এটি করা হয়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আশিকুজ্জামান ভূইয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের নামে অগ্রণী বাংক বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় এক কোটি ৪৪ লাখ ১৯ হাজার ৪৬ টাকা মূল হিসাব থেকে সরিয়ে নেন। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে তিনি ওই টাকা ১৪ নভেম্বর আবার আগের অ্যাকাউন্টে ফেরত দেন।
গত ১৪ ডিসেম্বর অধিদপ্তর আগামী ৩০ দিনের মধ্যে এ আপত্তির উপযুক্ত জবাব দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আশিকুজ্জামান ভূইয়াকে চিঠি দিয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুব বলেন, “বিষয়টি সরকার, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও ইউজিসি অবগত আছে। তাই ঊর্ধ্বতন মহলকে এটি আমার আবগত করার প্রয়োজনীতা নেই।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আশিকুজ্জামান ভূইয়া জানান, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আটজন প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তিত হয়েছে। আমি নবম প্রকল্প পরিচালক হিসেবে গত ১৭ জুলাই প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করি।
“অডিট অধিদপ্তর আমার দায়িত্ব গ্রহণের আগের বিষয়ে আপত্তি দিয়ে জাবাব চেয়েছে। তাই এ বিষয়ে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। প্রকল্প পরিচালক হিসেবে আমি জবাব প্রস্তুত করছি।”
গত ২০১৯ সালের ৩০ জুন অফিস নোটের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র, অন্যান্য সরঞ্জাম কেনার জন্য খুলনা শিপইয়ার্ডকে কার্যাদেশ এবং অগ্রিম চেক প্রদানের সিদ্ধান্ত নেন তৎকালিন ভিসি অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন ও প্রকল্প পরিচালক এমএ সাত্তার। এটি কোনোভাবেই মৌখিকভাবে করা হয়নি।
“এরপর প্রকল্প পরিচালকের পদ থেকে এমএ সাত্তার পদত্যাগ করেন। উপাচার্য জোর করে আমাকে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব দেন। ভিসির চাপে বাধ্য হয়েই ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই শিপইয়ার্ডকে অগ্রিম প্রদানের ২৬ কোটি ২৫ লাখ টাকার চেকে পিডি হিসেবে আমি স্বাক্ষর করেছি।”
এরপর ভিসি বিরোধী আন্দোলন শুরু হলে ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন পদত্যাগ করেন।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয় প্রকল্পের নামে নতুন অ্যাকাউন্ট করে এক কোটি ৪৪ লাখ ১৯ হাজার ৪৬ টাকা স্থানান্তরের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, মূল অ্যাকাউন্ট থেকে সুদের টাকা আলাদা করে সরকারি কোষাগারে সরাসরি জমা দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানাস্তর করা হয়। এ অ্যাকাউন্টটি আমার ও ডিডি প্লানিং-এর যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত হত। আমি আমার নামে অ্যাকাউন্ট খুলে কোনো টাকা স্থানাস্তর করিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক প্ল্যানিং তুহিন মাহমুদ বলেছেন, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানকে অগ্রিম দেওয়ার বিধান রয়েছে। সে কারণে খুলনা শিপইয়ার্ডকে অগ্রিম চেক দেওয়া হয়েছে। এখানে প্রকল্প পরিচালক অশিকুজ্জামন ভূইয়া শুধু চেকে স্বাক্ষর করেছেন মাত্র।
নতুন অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানাস্তরের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারি কোষাগারে সরাসরি মূল অ্যাকাউন্টের সুদের টাকা জমা দিতে এটি করা হয়েছিল। এর আগেও প্রকল্প পরিচালকরা এ ধরণের অ্যাকাউন্ট খুলেছেন।