তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল কাশেম এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্র্যাব) মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিয়ে কয়েকজন একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে জমি উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ১৯৭৯, ১৯৯০ ও ১৯৯৫ সালে আদাবর থানার শেখেরটেক এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া, মুক্তিযোদ্ধা (নৌ-বাহিনীর সহকারী সেক্টর কমান্ডার) মো. বদিউল আলম, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ ও তাদের পরিবারের তিনজন সদস্যসহ ছয়জনে মিলে আব্দুল করিম নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৫ কাঠা হারে ৩০ কাঠা নিচু জমি কেনেন।
এরপর জমিতে মাটি ভরাট করে বাড়ি করার উপযোগী করা হয়। সিটি জরিপে তাদের প্রত্যেকের নামে জমির পর্চা এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) ধানমন্ডি সার্কেল ও ভূমি সহকারী কর্মকর্তা রামচন্দ্রপুর ভূমি অফিসে নামজারি রয়েছে। প্রত্যেকের চলতি বছর ২০২০ সাল পর্যন্ত খাজনা পরিশোধ রয়েছে।
দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া বলেন, “সম্প্রতি আমাদের জমিতে বাড়ি করার জন্য ডেভেলপার কোম্পানির লোকজনকে জমি দেখাতে নিয়ে গেলে ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা ওই কোম্পানির লোকজনদের তাড়াইয়া দেয় এবং বলা হয় ওই জায়গা তাদের দখলে আছে। কেউ ওই জায়গার মালিকানা দাবি করলে তার জানকবচ করা হবে।”
এরপর বিষয়টি কাউন্সিলরকে জানানোর জন্য তার অফিসে গেলে তিনি তাদের কাগজপত্র নিয়ে যেতে বলেন বলে জানান দেলোয়ার হোসেন।
“তিনি আমাদের জমির কাছে যেতে নিষেধ করেন। জবাবে আমরা বলি, আমাদের জমিতে আমরা কেন যাব না? আমরা মুক্তিযোদ্ধা এবং বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করেছেন। স্বাধীন এই দেশে আমরা কেন নিজের বাড়িতে যেতে পারব না?”
এরপর কাউন্সিলর উত্তেজিত তাদের ‘গালি দেন’ বলে অভিযোগ করেন তিনি।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, এরপর তারা গত ৪ সেপ্টেম্বর ওই ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং তার লোকজনের বিরুদ্ধে আদাবর থানায় জিডি করতে গেলে প্রথমে ‘জিডি নিতে রাজি হয়নি’ পুলিশ। পরে কাউন্সিলরের নাম বাদ দিয়ে অন্যদের নামে জিডি নথিভুক্ত করা হয়।
এরপরেও আদাবর থানা পুলিশ ‘কোনো প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ না করায়’ পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার ডিসি, ডিএমপি হেডকোয়ার্টার ও র্যাব-২ এর সিও, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
“কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনোরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় আমরা হতাশ হয়ে পড়েছি।”
এ ঘটনার বিচার ও জমি উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি বলেন, “আমরা মুক্তিযোদ্ধারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে যুদ্ধ করে এই দেশ স্বাধীন করেছি। কিন্তু ঢাকাতে আমাদের থাকার মতো কোনো বাড়ি-ঘর নাই, সকলেই ভাড়া বাড়িতে বসবাস করি।
“এমতাবস্থায় আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের অভিভাবক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে উক্ত ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন জানাচ্ছি।”
সাত দিনের মধ্যে জমি উদ্ধারে প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে ‘প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সনদ পুড়িয়ে আত্মাহুতির’ হুমকি দেন তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলের কাউন্সিলর আবুল কাশেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এর সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমি এ বিষয়ে কিছু জানিও না।”
কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও জিডি তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে আদাবর থানার ওসিকে ফোন করা হলে তিনি ‘মিটিংয়ে ব্যস্ত থাকায়’ পরিদর্শক (তদন্ত) সেলিম হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
পরিদর্শক সেলিম হোসেন জিডির নম্বর নিয়ে বলেন, “এই জিডির বিষয়টা এসআই আনোয়ার হোসেন তদন্ত করছেন। উনি ছুটিতে আছেন। এটা সম্পর্কে তিনিই বলতে পারবেন।”
পরে এসআই আনোয়ার হোসেনকে ফোন করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি ছুটিতে বাড়িতে আসছি। বিষয়টা না দেখে বিস্তারিত বলতে পারছি না। তবে ওটার তদন্তের কাজ চলছে।”