তিনি
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “নিজস্ব স্বার্থ উদ্ধার এবং সরকার থেকে বিভিন্ন সৃযোগ
সুবিধা নেওয়ার জন্য এ কাজ করা হয়েছে। তারা আগেও ফায়দা লোটার চেষ্টা করেছে, এখনও করছে।”
মামলাটি
অবিলম্বে প্রত্যাহার করা না হলে হেফাজত কঠোর কর্মসূচির দিকে যাবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন
তিনি।
হেফাজতের
আমির শতবর্ষী আহমদ শফী চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার কর্তৃত্ব হারানোর পরদিন গত
১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
তার
মৃত্যুর পর হেফাজতে বিরোধের মধ্যে গত ১৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের আদালতে শফীর শ্যালক মো.
মইন উদ্দিন একটি মামলা করেন: যাতে শফীকে ‘মানসিক নির্যাতন করে পরিকল্পিতভাবে’ হত্যার
অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলায়
৩৬ জনকে আসামির অধিকাংশই হেফাজতের বর্তমান আমির জুনাইদ বাবুনগরীর অনুসারী। মামলায় এক
নম্বর আসামি করা হয়েছে মাওলানা মো. নাসির মুনিরকে। আর দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে সাম্প্রতিক
সময়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতার জন্য আলোচনায় আসা হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল
হককে।
শফীর
মৃত্যুর পর হাটহাজারীর বড় মাদ্রাসায় কর্তৃত্বে আসা বাবুনগরী বুধবার সেখানেই সংবাদ সম্মেলন
করেন, যাতে এই কওমি মাদ্রাসার বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটির সদস্যরাও ছিলেন।
সংবাদ
সম্মেলনে হেফাজত আমিরের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়েন সংগঠনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক
সম্পাদক ও ওই মাদ্রাসার শিক্ষক নুরুল আবছার আযহারী।
তিনি
বলেন, “শাহ আহমদ শফীর মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল। তার স্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে একটি
কুচক্রি মহল ষড়যন্ত্রমূলকভাবে নির্জলা মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। তার মৃত্যুর তিন মাস
পর এটিকে অস্বাভাবিক আখ্যা দিয়ে একটি মিথ্যা মামলাও দায়ের করে। এটি ‘রাজনৈতিক
চক্রান্ত এবং দেশের স্থিতিশীল অবস্থা বিনষ্ট করার দুরভিসন্ধি বলে আমরা মনে করছি।”
রাজনৈতিক চক্রান্ত দাবি করলেও কারা
এতে যুক্ত, তা স্পষ্ট করা হয়নি সংবাদ সম্মেলনে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “চক্রটি আহমদ
শফীকে জিম্মি করে হাটহাজারি মাদ্রাসায় ব্যক্তিতন্ত্র কায়েম করেছিল। তারা অনিয়ম এবং
ছাত্রদের ওপর অব্যাহত হয়রানি ও নির্যাতন চালিয়ে তাদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। কিছু
স্বনামধন্য শিক্ষককে মাদ্রাসা থেকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করে বের করে দেওয়া
হয়েছিল, যা ছিল অবমাননাকর।”
আহমদ শফীর মৃত্যু ও মাদ্রাসা নিয়ে বাবুনগরীদের বিবৃতি
আহমদ শফীকে ‘হত্যার’ অভিযোগে মামুনুলসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা
শফীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মামলা প্রত্যাহারের দাবি
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে বছরের
মাঝামাঝিতে বাবুনগরীকে মাদ্রাসা থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল, যার পেছনে আহমদ শফীর
ছেলে এবং ওই মাদ্রাসার শিক্ষক আনাস মাদানির হাত ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
সেপ্টেম্বরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের
মুখে আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানিকে বরখাস্ত করা হয় মাদ্রাসা থেকে এবং শফী নিজেও মাদ্রাসার
মহাপরিচালক বা অধ্যক্ষের পদ ছাড়েন। গত ১৭ সেপ্টেম্বর যে সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়,
তার পরপরই শফীকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়।
শফীর
মৃত্যুর পর তার ছেলে আনাস মাদানি বলেছিলেন, আগের দিনের ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ ঘটনার কারণে
‘টেনশনের’ কারণে ‘হার্টফেইল’ করে তার বাবা মারা গেছেন।
এদিকে
শফীর মৃত্যুর পর বাবুনগরী মাদ্রাসার পদে আবার বহাল হন। পরে হেফাজতে ইসলামের
সম্মেলনে আমিরও করা হয় তাকে, যদিও তার বিরোধিতা করছে সংগঠনের একটি পক্ষ।
বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত
বক্তব্যে বলা হয়, “আহমদ শফীর স্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়টি তার পরিবার ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ
সুস্পষ্টভাবে দেশবাসীকে জানিয়েছিল।
“আগে থেকেই তার শারীরিক অবস্থা এতই
নাজুক ছিল যে, বেশ কয়েকবারই তার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। তাকে হত্যার অভিযোগ
তুলে যারা মামলা করেছে, তারা একটি চিহ্নিত দালালগোষ্ঠী।”
মামলায় ‘তথাকথিত হত্যার’ যেসব কারণ উল্লেখ
করা হয়েছে, সেগুলো ‘অতিরঞ্জন ও মিথ্যাচারে পরিপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেন আযহারি।
তিনি বলেন, “এর মধ্য দিয়ে মাদ্রাসার শান্তিপুর্ণ
পরিবেশ বিনষ্ট করা এবং হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দকে হয়রানির ষড়যন্ত্র।”
সংবাদ সম্মেলনে মুহিব্বুল্লাহ
বাবুনগরী, মাওলানা নোমান ফয়জী, তাজুল ইসলাম, আল্লামা মোহাম্মদ শোয়াইব, মুফতি
কেফায়েতুল্লাহ, মুফতি জসিম উদ্দীন, মাওলানা নাছির উদ্দীন মুনীর, মাওলানা আজিজুল হক
ইসলামাবাদী, দিদার কাসেমী, আশরাফ আলী নেজামপুরী উপস্থিত ছিলেন।