ক্যাটাগরি

পুলিশে শুদ্ধি অভিযান

অভ্যন্তরীণ নজরদারি জোরদার পোশাক খুলে দেখেন জীবন কত কঠিন :ওসিদের উদ্দেশে কমিশনার মাদক সম্পৃক্ততায় চাকরি যাচ্ছে ৬৮ জনের কনস্টেবল নয়, অফিসারদেরও ডোপ টেস্ট করতে হবে :নূর মোহাম্মদ

পুলিশে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। চাঁদাবাজি, মাদকসহ নানা ধরনের অভিযোগের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন শীর্ষ কর্মকর্তারা। এমনকি সাধারণ মানুষকে সর্বোচ্চ সেবা দিতেও নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্র থেকে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের ওপর। নানা কারণে পুলিশের ভাবমূর্তি সংকটের মুখে পড়েছিল। সেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বর্তমান আইজিপিসহ শীর্ষ কর্তাকর্তারা কাজ করছেন। অনেক পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য নিজেদের প্রভাবশালী মনে করে কাউকেই তোয়াক্কা করতেন না। এখন সেই কর্মকর্তাদেরও নজরদারিতে এনে কঠোরভাবে সতর্ক করা হচ্ছে। শুদ্ধি অভিযান শুরুর অংশ হিসেবে প্রাথমিক ডোপ টেস্টে ৬৮ জনের সম্পৃক্ততা মিলেছে। এর মধ্যে কয়েক জনের চাকরি গেছে। অন্যদেরও চাকরিচ্যুতি করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক ও সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ ইত্তেফাককে বলেন, ‘আগে থেকে পুলিশে অভ্যন্তরীণ মনিটরিং ব্যবস্থা ছিল। মধ্যে হয়তো কিছুটা শিথিল হয়েছিল। এখন যে নতুন করে মনিটরিং ব্যবস্থা শক্তভাবে করা হচ্ছে সেটা খুবই ভালো উদ্যোগ। একটি শৃঙ্খলা বাহিনীতে এই ধরনের মনিটরিং থাকা খুবই জরুরি। বিশেষ করে পুলিশ সদস্যদের নিয়ে ঊর্ধ্বতনরা যে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন সেটা আগেই শুরু করা দরকার ছিল। তার পরও এখন যে বাহিনী থেকে মাদকাসক্তদের বের করে দেওয়ার কাজটা শুরু হয়েছে এটা দারুণ একটা কাজ। এই কাজ সঠিকভাবে করতে পারলে মানুষের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি একেবারে পালটে যাবে। আমি মনে করি, শুধু সদস্যদের নয়, অফিসারদেরও ডোপ টেস্টের মধ্যে আনতে হবে। শুধু কনস্টেবলদের টেস্ট করা হলে যে উদ্দেশ্যে এগুলো করা হচ্ছে তার সুফল পাওয়া যাবে না।’

পুলিশের এই শুদ্ধি অভিযানের মধ্যেই ঢাকার কোতোয়ালি থানার ওসি মিজানুর রহমানসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে এক ব্যবসায়ী চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম আবু সুফিয়ান মো. নোমান তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ওসির সঙ্গে কোতোয়ালি থানার এসআই আনিসুল ইসলাম, এএসআই খায়রুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম ও সোর্স দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে গত ১৭ নভেম্বরে আদালতে আবেদন করেছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. রহিম। তার অভিযোগে বলা হয়, গত ১২ অক্টোবর সন্ধ্যায় কাজ শেষে চরকালীগঞ্জ জেলা পরিষদ মার্কেট থেকে বাসায় ফিরছিলেন। রাত ৮টার দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার চুনকুটিয়া ব্রিজের ওপর পৌঁছালে অজ্ঞাতনামা তিন জন তার গতিরোধ করেন। তারা নিজেদের ঢাকা জেলার ডিবি পুলিশ পরিচয় দেন। তারা রহিমকে একটি দোকানে নিয়ে তল্লাশি করেন। তবে তার কাছ থেকে কিছু উদ্ধার করতে পারেননি। এরপর এসআই আনিসুল ইসলাম, এএসআই খায়রুল ইসলাম ও সোর্স দেলোয়ার নিজেদের কাছ থেকে ৬৫০ পিস ইয়াবা বের করে বলেন, এগুলো রহিমের কাছ থেকে পাওয়া গেছে। এই সময় রহিমকে আনিসুল ইসলাম বলেন, যদি ফাঁসতে না চাস তাহলে ২ লাখ টাকা জোগাড় কর। না হলে মাদক ব্যবসায়ী সাজিয়ে মামলায় ফাঁসিয়ে দেব। তখন মামলা থেকে বাঁচার জন?্য রহিম নিজের কাছে থাকা এক ভরি স্বর্ণের চেইন, নগদ ১৩ হাজার টাকা আনিসুল ইসলামের হাতে তুলে দেন। পরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে রহিম আরো ৫০ হাজার টাকা দেন। তার পরও ওসি তাকে ডেকে ১০ পিস ইয়াবার মামলায় গ্রেফতার দেখানোর কথা বলে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।

সম্প্র্রতি মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের শক্ত অবস্থানের কথা তুলে ধরেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। পুলিশের এক অনুষ্ঠানে থানার ওসিদের উদ্দেশে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়ায় ইতিমধ্যে অনেকের চাকরি চলে গেছে। জীবন কতটা কঠিন শরীর থেকে ইউনিফর্ম নেমে গেলে বোঝা যাবে। মাদককে না বলুন, এর থেকে সবসময় দূরে থাকুন।’

ডোপ টেস্ট প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কর্মরত ৬৮ জন সদস্য ডোপ টেস্টে পজিটিভ হয়েছেন। মাদকাসক্ত এই ৬৮ পুলিশ সদস্যের মধ্যে ইতিমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন ১৮ জন, বরখাস্তের চূড়ান্ত আদেশ জারি হয়েছে ১০ জনের বিরুদ্ধে। অন্যদেরও চাকরিচ্যুত করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ডোপ টেস্টে পজিটিভের ঘটনায় ৪৩ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আরো ২৫ জনের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ৬৮ জন পুলিশ সদস্যের মধ্যে এসআই সাত জন, সার্জেন্ট এক জন, এএসআই পাঁচ জন, নায়েক পাঁচ জন ও কনস্টেবল ৫০ জন।

আরো পড়ুন: ভাসানচরে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবায় সন্তুষ্ট রোহিঙ্গারা

এসব বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, পুলিশ সুপারদের (এসপি) অনুকরণীয় ‘রোল মডেল’ হতে হবে। বাংলাদেশ পুলিশের মর্যাদা ও সম্মান বাড়াতে হবে। ‘চেঞ্জ মেকার’ হিসেবে দেশের জন্য, জনগণের জন্য কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, ফোর্সের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি ডিসিপ্লিনের ওপর নজর রাখতে হবে। ওয়েলফেয়ার এবং ডিসিপ্লিনকে মেলানো যাবে না।

ইত্তেফাক/এসি