ক্যাটাগরি

দুর্যোগ মোকাবেলায় আইন ও নীতি বাস্তবায়নে ‘ঘাটতি’ দেখছে টিআইবি

২০২০
সালে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারেরর গৃহীত কার্যক্রমে ‘সুশাসনের অগ্রগতি ও ঘাটতি’ বিশ্লেষণ
করে টিআইবি বৃহস্পতিবার একটি
গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানেই এসেছে তাদের এ পর্যবেক্ষণ। 

এই প্রতিবেদন
প্রকাশ উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “চারটি প্রকল্পের ক্ষেত্রে একটা হিসাব করতে পেরেছি, টাকার হিসাব।… মোট টাকার অংক ছিল ১১০২ কোটি টাকা, আমরা অনিয়ম ও দুর্নীতি দেখতে
পেয়েছি ২০০ কোটি টাকার মত। দুর্নীতির কারণে চারটি প্রকল্পে ক্ষতির পরিমাণ ১৯১ কোটি টাকা।”

এই
চারটি প্রকল্প হল পানি ব্যবস্থাপনা
প্রকল্প,   বরগুনা
ও পটুয়াখালীতে পোল্ডার নির্মাণ প্রকল্প, মনু নদী সেচ ও পাম্পহাউজ পুনর্বাসন,
খুলনার কয়রায় বাঁধ সংস্কার প্রকল্প।

নির্বাহী
পরিচালক বলেন, “আমাদের জাতীয় আয়ের ২ দশমিক ২
শতাংশের মত ক্ষতি হয়
প্রাকৃতিক দুরে্যাগের কারণে। আমারা যদি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আরেকটু উৎকর্ষ অর্জন করতে পারি, তাহলে জাতীয় আয়ের বিশাল যে ক্ষতি, এটা
কমিয়ে আনা সম্ভব বলে আমরা মনে করছি।”

ভার্চুয়াল
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার- নেওয়াজুল মওলা ‘দুর্যোগ মোকাবেলায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়:
ঘূর্ণিঝড় আম্পানসহ সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে
ধরেন।

তিনি
বলেন, বিভিন্ন সময়ে দুর্যোগ সাড়াদান কার্যক্রমে ‘সুশাসনের চ্যালেঞ্জগুলো’ চিহ্নিত করার চেষ্টা হয়েছে এ গবেষণায়।

এর মধ্যে
উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জগুলো
হল- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার, জাতীয় আইন, নীতি এবং আদেশের প্রতিপালনে কার্যকর উদ্যোগের ‘ঘাটতি’; সতর্কবার্তা প্রচারে আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক ‘সমন্বয়হীনতা’, প্রচার পদ্ধতির আধুনিকায়ন না করার পাশাপাশি
কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে স্থানীয় পর্যায়ে ‘বিভ্রান্তিকর’ জরুরি সতর্কবার্তা প্রচারের ফলে ক্ষয়-ক্ষতির ‘ঝুঁকি’ বৃদ্ধি ইত্যাদি।

এছাড়া
দুর্যোগে ক্ষয়-ক্ষতি, ত্রাণ বিতরণ ও তদারকি সংক্রান্ত
তথ্যের প্রতিবেদন
প্রকাশ না করা; ত্রাণ
সংক্রান্ত তথ্য ও সুবিধাভোগীর তালিকা
স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছে প্রকাশ না করা; এবং
ত্রাণ বরাদ্দ, বিতরণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে ‘অনিয়ম’ এবং কার্যকর তদারকি ও অভিযোগ নিরসন
ব্যবস্থার ‘ঘাটতি’ বিদ্যমান বলে টিআইবি মনে করছে।

দুর্যোগ
নিয়ে নিয়মিত সচেতনতামূলক মহড়ার
আয়োজন না করা, ঝুঁকিপূর্ণ
অবকাঠামো (বাঁধ, আশ্রয়কেন্দ্র, রাস্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) চিহ্নিত করা ও মেরামত করা
এবং ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে
দুর্যোগ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির কার্যকরিতায় ‘ঘাটতি’ দেখতে পেয়েছেন টিআইবির গবেষকরা। 

এছাড়া জনসংখ্যা
অনুপাতে ‘পর্যাপ্ত’ আশ্রয়কেন্দ্র না থাকা, যথাযথভাবে ত্রাণের চাহিদা নিরুপণ ও স্থানীয়ভাবে ত্রাণ
মজুদসহ জরুরি উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনায় ‘ঘাটতি’, জরুরি চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা এবং
স্যানিটেশনসহ দুর্গত জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতে
‘ঘাটতি’, প্রকৃত ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো মেরামতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ ‘না করার’ কথাও প্রতিবেদনে
বলা হয়েছে।

দুর্যোগ
মোকাবেলায় সুশাসনের যে ‘ঘাটতিগুলো’ দেখা গেছে, তা মোকাবেলায় কয়েকটি
সুপারিশও করেছে টিআইবি।

# বিদ্যমান
সতর্কবার্তা দেওয়ার পদ্ধতি হালনাগাদ করে সাধারণ জনগণের বোধগম্য ভাষায় প্রচার করতে হবে এবং এক্ষেত্রে বিভ্রান্তি এড়াতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্তৃপক্ষকে সতর্কতার
সাথে বার্তা প্রচার করতে হবে।

# ঝুঁকিপূর্ণ
অঞ্চলগুলোকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে যথাসময়ে পূর্বাভাস ও সতর্কবার্তা দিতে
হবে।

# অধিকতর
বিপদাপন্ন পরিবার ও এলাকাকে প্রাধান্য
দিয়ে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম
স্বচ্ছতার সাথে পরিচালনা করতে হবে।

# ত্রাণ
ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত তথ্য জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে
তথ্য বাতায়নের মাধ্যেমে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।

# আপৎকালীন
পরিস্থিতি ও দুর্যোগের সম্ভাব্য
ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ের কমিটি, স্বেচ্ছাসেবক দল ও সংশ্লিষ্ট
অংশীজনের কার্যকর অংশগ্রহণে দুর্যোগ প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।

# নারী,
শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য
বিশেষ সুবিধা সম্বলিত এবং এলাকা ভিত্তিক পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র নিশ্চিত করতে হবে।

# আশ্রয়প্রার্থীদের
সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত খাদ্য, পানি, পয়ঃনিস্কাশন ও জরুরি চিকিৎসা
সেবার প্রস্তুতি গ্রহণ এবং তা সরবরাহ নিশ্চিত
করতে হবে।

# স্থানীয়
সরকার প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করে ‘অংশগ্রহণমূলক’ পদ্ধতিতে কম্যুনিটির নেতৃত্বে দুর্যোগ সহনশীল এবং টেকসই অবকাঠামো, যেমন আশ্রয়কেন্দ্র, বাঁধ ও পোল্ডার নির্মাণ,
সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ করতে
হবে।

# প্রকল্প
বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতাসহ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কার্যক্রমে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং অপচয় বন্ধে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

# প্রকাশিত
অনিয়ম-দুর্নীতির স্বচ্ছ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও ফৌজদারি ব্যবস্থা
গ্রহণের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

# দুর্যোগের
ফলে বাস্তুচ্যূত পরিবারগুলোর জীবিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, নতুন জীবিকার সুযোগ সৃষ্টি এবং দুর্যোগ মোকাবেলায় তাদের সক্ষমতা তৈরিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে
হবে।

# দুর্যোগ
মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে নেদারল্যান্ডসের মত দেশের পানি
সম্পদ ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে উপকূলীয় অঞ্চলকে সুরক্ষার জন্য একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

টিআইবির
নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “বর্তমান গবেষণাটি দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকার গৃহীত কার্যক্রমে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণে সহায়ক হবে; এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট নীতি-নির্ধারকগণ এই গবেষণার সুপারিশের
আলোকে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে টিআইবি আশা করছে।”