বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশের এই দূত বলেন, “আমাদের আগামী বছর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সূচনা দেখা উচিত। রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘ মেয়াদি সমাধানের পথে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া।”
২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।
আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি।
গত বছর দুই দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ধরে ফিরতে রাজি হননি রোহিঙ্গারা।
প্রত্যাবাসনের পক্ষে সব দেশ নিজেদের অবস্থান জানান দিলেও এক্ষেত্রে কার্যকর কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এমন অবস্থানের সমালোচনা করে আসছে বাংলাদেশের সরকার ও অধিকারকর্মীরা।
বিনিয়োগ-বাণিজ্য ইস্যুতে মিয়ানমারের পাশে থাকার ঘোষণা দিলেও ২০১৯ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশ সফরে এসে প্রত্যাবাসন নিয়ে দেশটির সঙ্গে মধ্যস্ততার কথা বলেছিলেন জাপানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো।
এরপর চোখে পড়ার মতো কোনো উদ্যোগ না দেখার মধ্যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বন্ধু দেশগুলোর অবস্থান নিয়ে সম্প্রতি হতাশা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
জাপানের নাম করেই তিনি বলেছিলেন, “অনেকের ক্ষেত্রে শুধু বক্তব্য শুনি, কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে উল্টো কাজ হয়। যেমন জাপানের রাষ্ট্রদূত আমার সঙ্গে ওই দিন দেখা করে বললেন যে, তারা এক পায়ে দাঁড়িয়ে আমাদের সাহায্য করবেন তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য। এ নিয়ে আমাদের বলেন, কিন্তু…
“তারা কিন্তু ইন আ ভেরি গুড পজিশন। কারণ তাদের সাথে মিয়ানমার সরকারের ভালো সম্পর্ক। মিয়ানমারে তাদের বিনিয়োগ প্রচুর। গত কয়েক বছরে অনেক গুণ বেড়েছে। সুতরাং তাদের কথা মিয়ানমার শুনবে।”
এমন প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিক্যাবের আয়োজনে ‘ডিক্যাব টকে’ রোহিঙ্গা ইস্যুতে জোরালো ভূমিকা না থাকা প্রসঙ্গে জাপানি রাষ্ট্রদূতের কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা।
আন্তর্জাতিক ফোরামে জোরাল অবস্থান না নিলেও মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার সরকার কাজ করছে বলে দাবি করেন রাষ্ট্রদূত নাওকি।
রোহিঙ্গা প্রশ্নে ‘বন্ধু দেশগুলোর’ ভূমিকায় হতাশা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
তিনি বলেন, “সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি মিয়ানমারের বেসামরিক সরকারের সঙ্গে জাপানের খুব ভালো যোগাযোগ রয়েছে। জবাবদিহির বিষয়টি তুলে ধরা এবং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করার জন্য মিয়ানমার কী করতে পারে এবং মিয়ানমারের কী করা উচিত- সেটা নিয়ে জাপান সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা করছে।
“আমি মনে করি, জাপান এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে।”
জাপানি রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, “জাতিসংঘ রেজুলেশনের মত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জাপানের অবস্থান নিয়ে সম্ভবত কিছু সমালোচনা আছে। তবে দয়া করে লক্ষ করুন, সরকার ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে জাপান কী করতে পারে। আমি মনে করি, জাপান তার ভূমিকা অব্যাহত রাখবে।”
রোহিঙ্গাদের বাসভূমি রাখাইনসহ মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে জাপানের। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের জোরাল অবস্থান না নেওয়ার পেছনে এটাকেও কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও কূটনীতিকরা।
রোহিঙ্গা সঙ্কট অবসানে মধ্যস্থতা করতে চায় জাপান
চীন, ভারত, জাপান মিয়ানমারের পকেটে: অধ্যাপক ইমতিয়াজ
এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত নাওকি বলেন, “জাপান এশিয়ার অংশ, মিয়ানমারও। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দেশটির গণতন্ত্রায়নের ধারায় মিয়ানমার সরকার আমাদের দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা।
“আমি মনে করি, জাপান এটাকে খুব গুরুত্ব সহকারেই নিচ্ছে। বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মিয়ানমারে জাপানি কোম্পানিগুলোর জোরাল স্বার্থ জড়িত। বাংলাদেশের মতো মিয়ানমারও ঐতিহ্যগতভাবে জাপানের বন্ধু রাষ্ট্র। এ কারণে মিয়ানমারে বিনিয়োগ-বাণিজ্য চালু রাখার ভালো যুক্তি রয়েছে।”
বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ সম্পর্কে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে জাপানের ৩১৫টি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ব্যবসা করছে। আবার বাংলাদেশের জন্য এশিয়ার মধ্যে বড় রপ্তানি বাণিজ্যের দেশ জাপান।
“করোনাভাইরাসের মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালো করছে বলে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায় জাপান। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এশিয়াতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই জাপানি বিনিয়োগকারীরা এখানে বিনিয়োগে বেশি আগ্রহী।”
ডিক্যাব সভাপতি আঙ্গুর নাহার মন্টির পরিচালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান।